নতুন বছরে নতুন করে বাড়ছে মশার উপদ্রব। বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। চলতি মৌসুম শীতেই ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। পুরো ঢাকায় দ্রুত সঠিকভাবে কীটনাশক ছিটানো না গেলে কিউলেক্স মশা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। মশা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে পারে ডেঙ্গু। গত দুই বছর বাংলাশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। এবার যুক্ত হয়েছে করোনা। করোনার এই মহামারিতে আবার যদি ডেঙ্গু হানা দেয়, তাতে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবেÑতা নিয়ে চিন্তিত বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে মশা গবেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, এখন কিউলেক্স মশার সিজন। এখন যা অবস্থা আছে, যদি পুরো ঢাকায় সঠিকভাবে কীটনাশক ছিটিয়ে র্যাপিড অ্যাকশন না নেওয়া হয়, তাহলে আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত এটা বাড়তেই থাকবে। ভয়াবহ রূপ নেবে। র্যাপিড অ্যাকশন বলতে আমরা যেটা বুঝি, সেটা হলো পরিবেশগত ব্যবস্থাপনায় নজর দিতে হবে। যেমন- ড্রেন, ডোবা, নর্দমা, খাল, বিল এগুলোতে যে কচুরিপানা বা ময়লা আছে, সেগুলো পরিষ্কার করে মশার লার্ভিসাইড প্রতি সাতদিন পর পর দিতে হবে।
এদিকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলছেন, রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। গত শনিবার রাজধানীর ঢাকা ওয়াসা ভবনে আয়োজিত সরকারি-বেসরকারি ব্যাংককে ঢাকা ওয়াসা কর্তৃক ‘বিল কালেকশন অ্যাওয়ার্ড’ বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, সবার অংশগ্রহণ থাকলে যেকোনো সমস্যা সমাধান করা সহজ, যার বড় উদাহরণ রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ। নগরবাসীর অংশগ্রহণ ও সচেতনতা এবং সবার সমন্বিত উদ্যোগে এখন পর্যন্ত মশা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা। এ বিষয়ে ভোরের পাতা কথা বলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরীর সঙ্গে।
তিনি বলেন, আমি অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ঢাকার মশা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেই। মন্ত্রী বললেই মানুষ সেটা মেনে নেবে না। এদিকে রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছে দুই সিটি করপোরেশন। কিছুদিন আগেই ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে এই দায়িত্ব স্থানান্তরিত হয়েছে সিটির কাছে।
তাজুল ইসলাম বলেন, নগরীর পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ঢাকা ওয়াসা থেকে দুই সিটি করপোরেশনকে দেওয়ার পর থেকেই মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় ইতোমধ্যে কাজ শুরু করলেও আগামী সপ্তাহে দুই সিটি করপোরেশনকে নিয়ে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা হবে। দুই মেয়রের পরিকল্পনা জেনে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও কর্মপরিকল্পনা ঠিক করে দেওয়া হবে। ঢাকা শহরের নাগরিক সমস্যা সমাধান করে একটি আধুনিক বাসযোগ্য দৃষ্টিনন্দন শহর করতে যা যা করার দরকার তা করা হবে।
দ্রুত ঢাকার জলাবদ্ধতা দূর করে মশা নিয়ন্ত্রণে আনার এবং ডেঙ্গুর প্রদুর্ভাব কমাতে তাগিদ দেন লেলিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ডেঙ্গু বাড়ছে। অনেক দিন যাবত বাড়ছে। বর্ষায় আরো বাড়বে। মশা নিয়ন্ত্রণে নেই। মশা নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে এবং করোনার মহামারিতে ডেঙ্গু হানা দিলে তা হবে মরার উপর খাড়ার ঘা। দ্রুত মশা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন র্যাপিড অ্যাকশনে গিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণ করতে। নাহলে পরিস্থিতি হবে খুবই ভয়াবহ। গত দুই বছর আগে রাজধানীর ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া পরিস্থিতি চরমে পৌঁছালে নড়ে চড়ে বসছে দুই সিটি করপোরেশন। তখন সিটি করপোরেশনের গাফলতি, মশার ওষুধের কার্যকারিতা নিয়েও অভিযোগ উঠেছিল।
র্যাপিড অ্যাকশন বুঝাতে কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, সঠিকভাবে পুরো ঢাকায় কীটনাশক ছিটিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। প্রতিটা ওয়ার্ড বা এলাকা ধরে ব্লাঙ্কেট অ্যাপ্রোচে এগোতে হবে। মানে, একটা এলাকা যখন শুরু করবো, সেটা পুরাটা কাভার করবো। তা না হলে কোনো লাভ হবে না। যেমন- একটা এলাকার একটা ড্রেনে দিলাম কিন্তু অন্য ড্রেনে দিলাম না, তো সেই ড্রেন থেকে আবার মশা জন্ম নেবে। অর্থাৎ একটা এলাকা ধরে সেখানে পূর্ণাঙ্গভাবে কাজ করতে হবে। এলাকার মশা জন্মানোর স্থানে লার্ভিসাইড, পরিষ্কার করা ও অ্যাডাল্টি সাইড বা ফগ ইন একসঙ্গে দিতে হবে। এটাকে বলে ব্লাঙ্কেট অ্যাপ্রোচ। অন্যথায় মার্চে মশার উপদ্রব বাড়তে বাড়তে চরমে পৌঁছাবে। করোনায় মশার প্রাদুর্ভাব বেড়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতি যদি গত দুই বছরের মতো হয়, তাহলে জন জীবন অচল হয়ে পড়তে পারে। এমন আশঙ্কা করছেন অনেকে। সিটি করপোরেশনের কাজ নিয়েও অভিযোগ তুলছেন অনেকে।
কবিরুল বাশার বলেন, সিটি করপোরেশন কেমন কাজ করছে সেটা মূল্যায়ন করবে জনগণ। মশার কীটনাশকে কাজ হচ্ছে কিন্তু সেগুলো নিয়মমত বা টাইমলি দেওয়া হচ্ছে না। মশার জীনগত পরিবর্তন হিসাব করেই নতুন ইনসেক্টিসাইড সিলেকশন করা হয়েছে। সেগুলো টেস্ট করেই প্রয়োগ করা হচ্ছে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে, বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে, সঠিক ডোজ, সঠিক মাত্রায়, সঠিক সময়ে কীটনাশক প্রয়োগ করা প্রয়োজন।