প্রকাশ: রোববার, ৩ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:৪৭ পিএম আপডেট: ০৩.০১.২০২১ ১:১৮ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
সারা দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে বছরের দ্বিতীয় দিনে আরও ২৩ জন প্রাণ হারিয়েছে। এই রোগে নতুন করে শনাক্ত হয়েছে আরও ৬৮৪ রোগী। গতকাল শনিবার বিকেলে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সারা দেশে করোনা পরিস্থিতির সর্বশেষ এই তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত শনাক্ত ৬৮৪ জনকে নিয়ে দেশে সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ১৫ হাজার ১৮৪ জন রোগী। এদিকে, গত একদিনে মারা যাওয়া ২৩ জনসহ দেশে করোনায় সর্বমোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৫৯৯ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাসা এবং হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে আরও ৯৬৪ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন গত একদিনে। তাতে এ পর্যন্ত সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে ৪ লাখ ৫৯ হাজার ৬২০ জন হয়েছে।
বাংলাদেশে করোনায় প্রথম সংক্রমিত রোগী ধরা পড়ে গত ৮ মার্চ, এই সংখ্যা ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত সাড়ে ৪ লাখ অতিক্রম করে যায়। যার মধ্যে গত ২ জুলাই সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়। সেই দিন ৪ হাজার ১৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। আর প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর অর্থাৎ গত ১৮ মার্চ দেশে করোনায় প্রথম মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করা হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে। এরপর ১২ ডিসেম্বর এই মারা যাওয়া রোগীর সংখ্যা সাড়ে সাত হাজার ছাড়িয়ে গেল। এই হিসেবের মধ্যে ৩০ জুন এক দিনেই সর্বোচ্চ মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়। সেই দিন ৬৪ জন মারা যান। শুরুর দিকে রোগী শনাক্তের হার কম ছিল। গত মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। ওই মাসের শেষের দিক থেকে রোগী শনাক্তের হার ২০ শতাংশের ওপরে চলে যায়। আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত সেটি ২০ শতাংশের ওপরে ছিল। এদিকে, বিশ^ করোনা রিপোর্ট প্রকাশকারী প্রতিষ্ঠান জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য মতে, সারাবিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে ২৭তম স্থান দখল এবং মৃতের সংখ্যার দিক থেকে ৩৩তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত একদিনে দেশে বিভিন্ন ১১৪টি আরটি-পিসিআর ল্যাব, ২০টি জিন-এক্সপার্ট ল্যাব ও ২৯টি র্যাপিড অ্যান্টিজেন ল্যাবে, ল্যাবে সর্বমোট ১৬৩টি ল্যাবে ১৬ হাজার ৮২৮টি নমুনার এসব পরীক্ষা করা হয়। শতকরা হিসেবে গত একদিনে নমুনা পরীক্ষার তথ্য মতে শনাক্তের হার ৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৩১ লাখ ৪৯ হাজার ৩৪৮টি নমুনা। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৯ দশমিক শূন্য ২১ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। আর বয়সের হিসেবে ষাটোর্ধ্ব লোকের সংখ্যা বেশি। যেখানে ১১ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, বিশোর্ধ্ব একজন, ত্রিশোর্ধ্ব দু’জন, চল্লিশোর্ধ্ব দু’জন, পঞ্চাশোর্ধ্ব সাতজন বলে জানা গেছে। আর বিভাগী হিসেবে ঢাকা বিভাগে সব চেয়ে বেশি। যেখানে ঢাকায় ১৪ জন, চট্টগ্রামে দু’জন, রাজশাহীতে একজন, খুলনায় একজন, রংপুরে তিনজন এবং ময়মনসিংহ বিভাগের দু’জন রোগী মারা যান।
মার্চে শুরু হওয়ার পর করোনার প্রভাব যে হারে বেড়েছিল তা সেপ্টেম্বর অক্টোবরে কিছুটা কমেছিল। এরপর মাস দুয়েক সংক্রমণ নি¤œমুখী থাকার পর গত নভেম্বরের শুরুর দিক থেকে নতুন রোগী ও শনাক্তের হারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু হয়। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে দৈনিক নতুন রোগী শনাক্তের গড় দুই হাজার ছাড়ায়। অবশ্য কিছুদিন ধরে নতুন রোগী শনাক্ত কমেছে। শনাক্তের হারও ১০ শতাংশের নিচে। জনস্বাস্থ্যবিদরা জানিয়েছে, টিকা না আসা পর্যন্ত সংক্রমণ প্রতিরোধের মূল উপায় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, বাইরে বের হলে মুখে মাস্ক পরা শতভাগ নিশ্চিত করা। সাথে সাথে কিছু সময় পরপর সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়ার বিধি মেনে চলতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা যেভাবে চলছে তা খুবই চিন্তার বিষয়। এতে সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।