প্রকাশ: রোববার, ৩ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:৪৭ পিএম আপডেট: ০৩.০১.২০২১ ১:১৮ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
রাজধানী ঢাকার ৪৭টি খালের মধ্যে অবশিষ্ট রয়েছে ২৬টি খাল। বাকি সব খালই দখল ও ভরাটে বিলীন হয়ে গেছে গত ৩০ থেকে ৩৫ বছরে। ৭৪ কিলোমিটার দৈর্ঘের ২৬টি খালও মূলত রয়েছে কাগজে-কলমে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ঢাকায় মাত্র ১৩টি খালের অস্তিত্ব রয়েছে। এতদিন ধরে খালগুলোর ব্যবস্থাপনায় থাকা খোদ ঢাকা ওয়াসাও মাঠ জরিপে ১৩টির বেশি খালের অস্তিত্ব দেখাতে পারেনি। যে খালগুলো আছে সেগুলো হলো- আবদুল্লাহপুর খাল, বাইশটেকী খালে, বাউনিয়া খালের, বেগুনবাড়ি খাল, দেবধোলাই খাল, গোড়ান এলাকায় অবস্থিত দিগুন খাল, ইব্রাহিমপুর খাল, মুগদার জিরানী খাল, কল্যাণপুর প্রধান খালসমূহ-কল্যাণপুর-খাল-১ থেকে-কল্যাণপুর-খাল-৫, কাঁটাসুর-খাল, রাজচন্দ্রপুর-খাল, মিরপুরের রূপনগর খাল, সাংবাদিক কলোনি-খাল, সেগুনবাগিচা-খাল, শাহজাদপুর-খাল, সুভিভোলা -খাল ও কাসাইবাড়ী-খাল। গত বৃহস্পতিবার থেকে এসব খালের রক্ষণাবেক্ষণে দায়িত্ব পেয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব খালের বেশির জায়গা সিটি করপোরেশন, হাসপাতাল, হাউজিং কোম্পানিসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বেদখল করে রেখেছে। এদের মধ্যে রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত আবদুল্লাহপুর খালে তেমন দখলদার নেই। তবে খালের উত্তরা অংশে প্রচুর ময়লা ফেলা হয়েছে। মিরপুরে অবস্থিত বাইশটেকী খালের প্রবাহ সচল রয়েছে। বাসাবাড়ি থেকে ময়লা ফেলে দূষণ করা হচ্ছে। মিরপুরে অবস্থিত বাউনিয়া খালের উপরের অংশে অবৈধভাবে দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এ খালের স্বাভাবিক প্রবাহ নেই। হাতিরঝিল-গুলশান এলাকায় অবস্থিত বেগুনবাড়ি খালের বেশকিছু জায়গা দখল করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ফুটপাত ও ড্রেন তৈরি করেছে। খালের জায়গায় ময়লার স্টেশন ও রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। তবে খালটি সচল রয়েছে। ডেমরা এলাকায় অবস্থিত দেবধোলাই খালটি সানারপাড় থেকে মান্ডা পর্যন্ত বিস্তৃত। খালের পাড় দখল করে রাস্তা বানিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। খালের পাশের অস্থায়ী বাজার ও দোকানপাট আছে। এসব বাজার থেকে ময়লা ফেলে দূষণ করা হচ্ছে। গোড়ান এলাকায় অবস্থিত দিগুন খাল দখল করে ইস্টার্ন হাউজিং ও রামকৃষ্ণ মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে। হাজারীবাগ খালের বেড়িবাঁধের ভেতরের অংশ দখল করা হয়েছে। ময়লা ফেলে এটিকে ভাগাড়ে পরিণত করা হয়েছে। ইব্রাহিমপুর খালে কিছু অবৈধ দখল থাকলেও এটি সচল রয়েছে। মুগদার জিরানী খালের একপাশ দখল করে রাস্তা নির্মাণ করেছে সিটি করপোরেশন। রয়েছে কাঁচা বাড়িঘর ও অস্থায়ী বাজার। কল্যাণপুর প্রধান খালের অংশ দখল করে এসটিএস তৈরি করা হয়েছে। ভাঙা ব্রিজের কাছে অবৈধ দখল রয়েছে। কল্যাণপুর খাল-১ এর বেশির ভাগ এলাকা দখল করে বিশাল অট্টালিকা নির্মাণ করা হয়েছে। এ খালটি অচল হয়ে আছে। কল্যাণপুর-২ খালের অংশ দখল করে রাস্তা নির্মাণ করেছে সিটি করপোরেশন। কল্যাণপুর-৩, কল্যাণপুর-৪, কল্যাণপুর-৫ ও কাঁটাসুর খালের বিভিন্ন অংশ দখল করে হাউজিং, জিটিসিএল’র রাস্তা, ট্রাক স্টেশন ও অস্থায়ী বাজার বসানো হয়েছে। মান্ডা খালে সিটি করপোরেশন সরাসরি ময়লা ফেলছে। কিছু কিছু জায়গা বিভিন্ন হাউজিং কোম্পানি দখল করে রেখেছে।
রাজচন্দ্রপুর খালের মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ সমিতির বস্তি ও সিটি করপোরেশনের রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। মোহাম্মদপুর হাউজিং ও মোহম্মদিয়া হাউজিংয়ের কারণে রামচন্দ্রপুর এলাকায় পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হচ্ছে। রামচন্দ্রপুর ও কাঁটাসুর খালের সংযোগ-মুখে জায়গা দখল করে আছে জাকের ডেইরি ফার্ম ও ইউল্যাব ইউনিভার্সিটি। মিরপুরের রূপনগর খালের অর্ধেক দখল করে সিটি করপোরেশন রাস্তা নির্মাণ করেছে। ইস্টার্ন হাউজিংয়ের ভেতরের অংশে খাল দখল করা হয়েছে। সাংবাদিক কলোনি খাল, সেগুনবাগিচা খাল, শাহজাদপুর খাল, সুভিভোলা খাল ও কাসাইবাড়ী খালের জায়গা দখল করে অস্থায়ী বাজার বসানো হয়। এসব বাজার থেকে ময়লা খালে ফেলানো হয়। তবে ব্যতিক্রম মহাখালী খাল। এ খালটিতে কোনো অবৈধ দখলদার নেই।