ড. কাজী এরতেজা হাসান
প্রকাশ: রোববার, ৩ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম আপডেট: ০৩.০১.২০২১ ১:২১ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
চলছে শীতকাল। শুষ্ক রাজধানীর সড়ক মহাসড়কগুলো। গ্রীষ্ম এলেই উড়তে শুরু করবে ধূলি। আর গ্রীষ্মের পরে বর্ষা এলে অবিরাম বৃষ্টি শুরু হলে রাজধানীর সড়কগুলোর কোথাও কোথাও কোমর পর্যন্ত জমে যাবে পানি। বিগত দিনগুলোতেও তাই হয়েছে বর্ষার বৃষ্টিতে এবং অন্য সময়ের অকালবৃষ্টিতেও কোমর পানি জমে যাওয়ার ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে নগরবাসী। কিন্তু এবার আশাবাদ জাগিয়েছেন, ঢাকার দুই সিটির মেয়র তাপস ও আতিক। দুই মেয়রের ওপর আনুষ্ঠানিকভাবে অর্পিত হয়েছে রাজধানীর খাল রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব। গত বৃহস্পতিবার এই দায়িত্ব দেওয়া হয়। গতকাল শনিবার থেকে খাল পরিষ্কারে মাঠে নেমে পড়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। রাজধানীতে মোট ২৬টি খাল বিদ্যমান। এই খালগুলোর মধ্যে ১১টি পড়ে দক্ষিণ সিটির মধ্যে। বাকিগুলো উত্তর সিটিতে। সব খালগুলো বর্জে ভরে যাওয়ায় অচল হয়ে পড়েছে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। ফলে রাজধানীতে সামান্য বৃষ্টি হলেই হাঁটু পানি, কোথাও কোমর পানি জমে যায়। ১৯৮৮ সালের আগে ঢাকার খালগুলো তদারকি করতো তৎকালীন ঢাকা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন। কিন্তু এই সময়ের পরে ঢাকা ওয়াসার হাতে আসে খাল রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব। তবে ঢাকার নালাগুলোর দায়িত্ব রয়ে যায় অবিভক্ত সিটি করপোরেশনের কাছে।
রাজধানীতে ২৬টি খাল বিদ্যমান থাকলেও অনেক খাল অবৈধ দখলে চলে গেছে এবং সেসব খাল ভরাট করে বিশাল বিশাল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। বেদখল খালগুলো উদ্ধারের ব্যাপারে কয়েক বছর আগেই সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কিন্তু খুব একটা আগায়নি এ কাজ। আগানোর কোনো দৃশ্য চোখে পড়েনি কারোর। কেন রাজধানীর বেদখল খাল উদ্ধার কার্যক্রম স্তমিত হয়ে আছে তা বোধকরি এক রহস্য। কোনো প্রভাবশালী মহলের চাপে এ কার্যক্রম চাপা পড়ে গেছে কি না বলা মুশকিল। তবে অস্বাভাবিকও নয় বলে ধরে নেওয়া যায়। দেশের সরকারি সম্পত্তির অবৈধ দখলকারীরা এতটাই প্রভাবশালী যে তাদের হটানো অনেকটা দুঃসাধ্য বলে মনে করেন অনেকে। তবে সরকার যদি এ ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়, তাহলে কঠিন নয় বলে মনে করি। আশা করা যায় ঢাকার দুই সাহসী সিটি মেয়র বিদ্যমান ২৬ খালের বর্জ্য অপসারণের পাশাপাশি বেদখল হয়ে যাওয়া খালগুলোও উদ্ধারে কার্যক্রম চালাবেন। বেদখল হয়ে যাওয়া এসব খাল উদ্ধার করা গেলে স্থাপিত হবে এক অনন্য নজির। ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস এবং আতিকুর রহমানের মতো সাহসী ও বিচক্ষণ মেয়রদ্বয় এ কাজের পারদর্শিতা দেখাতে পারবেন বলে গভীরভাবে আস্থাশীল আমি।
রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে বড় অভিশাপ হলো এর জলাবদ্ধতা এবং সেই সঙ্গে যানজটও। জলাবদ্ধতা নিরসনে কত প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে তা প্রত্যক্ষ করেছি আমরা। তবে এসব প্রচেষ্টার মধ্যে যে ফাঁক ছিল তা স্বীকার করতে হবে। আসলে লোক দেখনো প্রচেষ্টা ছিল কি না তা ভালো বলতে পারবেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু এবার রাজধানীর যানজটে প্রকৃত উদ্যোগটি নিয়েছেন তাপস ও আতিক। এর সঙ্গে যিনি সহযোগীর উদারহস্ত বাড়িয়ে দিয়েছেন তিনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। মেয়র তাপস ও আতিক এবং স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, এই তিনজনকে ত্রিরতœ বললেও কম বলা হবে। তাদের সম্মিলিত মেধায় ও চেষ্টায় রাজধানী সত্যিকার অর্থে জলাবদ্ধতামুক্ত এবং যানজটমুক্ত হবে, তাতে কোনোভাবেই সন্দিগ্ধ হবার সুযোগ নেই বলে আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি।
পরিশেষে বলা দরকার, এ পর্যন্ত মেয়র তাপস ও আতিকের কাজে কর্মে কোনো ফাঁক নেই। তারা যেটি পারবেন, সেটির ব্যাপারেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হচ্ছেন এবং বাস্তবায়নও করে দেখাচ্ছেন। আসল কথা হলো তারা বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহচর ও সৈনিক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা আর কাজের মধ্যে কোনো ফাঁক থাকে না। গণতন্ত্রের মানসকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা করবেন বলেন, সেটি তিনি করেই দেখান। তার মধ্যে এক নম্বর উদাহরণ স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এমন বহু নজির তুলে ধরা যায়। ফলে এ কথা জোর দিয়ে বলা যায় ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটির মেয়রদ্বয় রাজধানীবাসীর নয়নের মণিতে পরিণত হতে চলছেন। নগরবাসীর সেবায় একের এর এক কার্যক্রম তারা যেভাবে হাতে নিয়েছেন এবং তা বাস্তবায়নে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছেন, তাতে দীর্ঘদিন ধরে নগরবাসী যেসব কারণে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হয়ে আছেন; সত্যি এবার এই দুর্ভোগ থেকে তাদের মুক্তি ঘটবে।