#জন্ম থেকেই সংকট মোকাবেলা করে আসছেন শেখ হাসিনা: ড. শ্রী বীরেন শিকদার।
#শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বিশ্ব সভা আলোকিত হয়: ড. শাহীনূর রহমান।
#শেখ হাসিনার কারণেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল: ইঞ্জিনিয়ার হাসনাত মিয়া।
২০২০ সাল জুড়েই সারা পৃথিবীতে মহামারি করোনাভাইরাস তাণ্ডব চালিয়েছে। এর ছোবল থেকে বাদ যায়নি আমাদের বাংলাদেশও। তবে চীনে করোনাভাইরাস আবির্ভাবের পর থেকেই প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা করোনা মোকাবিলায় কাজ শুরু করেন। আমাদের সফল প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাসকে মোকাবিলায় ভয় পেয়ে বসে থাকেন নি। বরং এটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে প্রত্যেক ক্ষেত্রে সফলতা, সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছেন। সরকারের গৃহীত প্রতিটা পদক্ষেপ জনকল্যাণমুখী। ইতোমধ্যেই শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন। পৃথিবীর মানচিত্রে তাই আজ দূর থেকে একটা উজ্জ্বল নক্ষত্র দেখা যায়, যার নাম ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। তাই বলা চলে, একজন অনন্য অসাধারণ শেখ হাসিনা আমাদের গর্ব হয়ে দাড়িয়ে আছে।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ২০৫তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ড. শ্রী বীরেন শিকদার, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া এর উপ-উপাচার্য ড. শাহীনূর রহমান, জার্মান দূতাবাসে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনারারি কনস্যুলেট, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন জার্মানির প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার হাসনাত মিয়া। দৈনিক ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
ড. শ্রী বীরেন শিকদার বলেন, আজকে বিজয়ের এই দিনে আমি আমার বক্তব্যের শুরুতে গভীর শ্রদ্ধা জানাই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যে মহামানবের অবদানে আজ আমারা লাল সবুজের পতাকা নিয়ে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করা দাড়িয়ে আছি, গভীর শ্রদ্ধা সাথে স্মরণ করছি ১৫ই আগস্টের সেই কালো রাতে তার পরিবারের যেসব সদস্যরা শাহাদাৎ বরণ করেছিলেন। গভীর শ্রদ্ধা সাথে স্মরণ করছি ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ ইজ্জত হারা মা বোনদের। গভীরভাবে স্মরণ করি জাতীয় ৪ নেতাকে। আজকে আমরা বিজয় মাসে শেষ দিনটি কাঁটাতে যাচ্ছি। আমাদের প্রিয় নেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা আজকে শুধু বাংলাদেশের নেত্রী নয়, তিনি এখন বিশ্ব বিশ্বনেত্রীতে রুপান্তর হয়েছেন। আপনারা খেয়াল করলে দেখতে পারবেন যে, এইযে জি-৮ এর যে সম্মেলন হয়েছিল সেখানে আমাদের দেশ বাংলাদেশ কিন্তু জি-৮ এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না। কিন্তু তার পরেও জি-৮ এর সম্মেলনে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। সেখানে আমার মনে হয়, আমাদের নেত্রীর কাছ থেকে শেখার আছে সেজন্যই হয়তো তাকে সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আরেকটি বিষয় হলো সংকট মোকাবেলা, আমাদের নেত্রীর যাত্রা শুরু হয়েছিল সংকট নিয়ে। তিনি জন্মাবধি সংকট নিয়ে দৃঢ় মোকাবেলায় এগিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ছোটবেলা থেকেই পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত ছিলেন। তিনি ছোটবেলা থেকেই দেখেছেন তার পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জেলখানায় আছেন কিংবা বাইরে আছেন দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি সব সময় সংকট মোকাবেলা করে জীবন যাপন করে আসছেন। আর ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট তার পরিবারের সবাইকে যেভাবে হত্যা করা হলো, শুধু তারা দুই বোন বেচে ছিলেন। তারা বাইরে থাকলেও তাদের জীবন ছিল অনেক দুর্বিষহ। তারপরে ১৯৮১ সালে যখন দেশে ফিরে আসলেন তারপর থেকেই আরও বড় সংকট মোকাবেলা করে আসছেন তিনি। তাকে ২০ বারের বেশি হত্যা করার জন্য চেষ্টা চালানো হয়েছে। তিনি সব কিছুই মোকাবেলা করে, ভয়কে জয় করে তিনি নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন আজ অব্দি। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের পরে দেশটাকে যে অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় চালানো হয়েছিল এবং স্বাধীনতার চেতনাকে যেভাবে ভূলুণ্ঠিত করে আবার সেই পাকিস্তানের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো সেখান থেকে আবার বাংলাদেশকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ একটি জাতি হিসেবে এই বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করার যে সংগ্রাম তিনি করে গিয়েছেন তার তুলনা কারো সাথেই করা যায়না। যে সংকট তিনি মোকাবেলা করে গিয়েছেন সেটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। তিনি ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে থেকে অপেক্ষা করেছিলেন। ২১ বছর পর তিনি দেশকে পুনরায় গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে এনেছিলেন। করোনা মোকাবিলা নিয়ে বাংলাদেশকে নিয়ে বহির্বিশ্বের অনেক দেশ নানা মন্তব্য করেছিল। এমনকি বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ছড়ালে দেশে দুর্ভিক্ষ তৈরি হবে। এ দেশ আর মাথা উঁচু করে দাড়াতে পারবে না। কিন্তু বাস্তবে ঠিক উল্টো ঘটনা ঘটছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যখন করোনাভাইরাস মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছিল। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায়। এইসব সকল সংকট মোকাবেলায় তিনি বার বার বিজয়ী হয়ে আসছেন এবং সামনেও দেশের যেকোনো সংকট মোকাবেলায় তিনি দৃঢ় চিত্রে নেতৃত্ব দিয়ে যাবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।
ড. শাহীনূর রহমান বলেন, ভোরের পাতা বরাবরের মত আজকেও একটি সুন্দর বিষয় নিয়ে সংলাপের আয়োজন করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমন সারা বিশ্বে তার বিশ্ব মানবতার জন্য খ্যাতি ছিল ঠিক তেমনি তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে আজ সারা বিশ্বে অনন্য একজন নেত্রী হয়ে দাঁড়িয়েছেন। আমাদের এমন একজন পুরুষ ছিল যিনি পুরো বাংলাকে এক করেছিলেন। যার তর্জনীতে পুরো বাংলার আকাশ গর্জে উঠেছিল। যিনি শোষিত মানুষের নেতা ছিলেন। যিনি চেয়েছিলেন আমলাতান্ত্রিক জটিলতার অবসান ঘটিয়ে বাংলার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে সোনার বাংলা গড়তে। তিনি আমাদের মহাননেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার জীবনের সবচাইতে বড় একটা সম্পদ তিনি আমাদের জন্য রেখে গেছেন। জননেত্রী, দেশরত্ন, ভাষাকন্যা ইত্যাদি নামে ভূষিত করা হয় সেই সম্পদকে। বঙ্গবন্ধু শোষণহীন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেছিলেন। তখনই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার মূল উদ্দেশ্যই ছিল গণতন্ত্রকে হত্যা করা, বাঙালি জাতীয়তাবাদকে হত্যা করা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হত্যা করা। ষড়যন্ত্রকারী এবং প্রতিক্রিয়াশীলরা চেয়েছিল বঙ্গবন্ধু পরিবারের সবাইকে হত্যা করে তারা চেয়েছিল আবারো পাকিস্তানি ভাবধারায় এদেশ পরিচালনা করার। তবে তাদের ভাগ্য পুরোপুরি সপ্রসন্ন ছিল না। আমাদের সৌভাগ্য যে সেদিন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা আপা দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান। পুরো পরিবারকে হারিয়ে শোঁকাতর হয়ে গিয়েছিলেন তারা। তারপরেও দেশে ফিরে আবারো দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যায় যার ফল আজ বাঙলার মানুষ ভোগ করছেন। এই করোনাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সকল সেক্টরের কাজের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগকেও সমানতালে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। যখন দেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় তখন থেকেই দলের নেতাকর্মীকে সর্বস্তরের মানুষের পাশে দাঁড়াতে বলেন। তারপর থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ মানবতার সেবায় নেমে পড়েন। মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়া, মাস্ক, স্যানিটাইজার বিতরণসহ নানা কর্মসূচি পালন করে। যখন মৃত মানুষের সৎকারে কেউ এগিয়ে না এসে অবহেলা করে। তখন যুবলীগ, ছাত্রলীগ সৎকারের ব্যবস্থা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সার্বিক নির্দেশনা নিয়ে সকল নেতাকর্মী এখন পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছেন। এই করোনার মধ্যে জিডিপির হিসাবে বাংলাদেশ পিছনে ফেলেছে ভারতের মত একটি পরাক্রমশালী দক্ষিণ এশিয়ার দেশকে। মানবউন্নয়ন সূচকে এগিয়েছি আমরা। জীবন ও জীবিকার অনেক সূচকে এখন বাংলাদেশ সারা বিশ্বের কাছে রোল মডেল। করোনায় না খেয়ে মরেনি একজন ব্যক্তিও। এর কৃতিত্ব অবশ্যই আমাদের বর্তমান সরকারকে দিতেই হবে। করোনাকে মোকাবিলায় আমাদের নীতি একদিন বিশ্বের কাছে দুর্যোগ মোকাবিলার অনুকরণীয় কৌশল হবে।
ইঞ্জিনিয়ার হাসনাত মিয়া বলেন, আজকে ভোরের পাতার যে বিষয় নিয়ে সংলাপ করছে তার জন্য তারা সব সময়ের মত এবার প্রশংসার দাবি রাখে। আজকের বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে 'সংকট মোকাবিলায় বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনা' এটা সারা বিশ্বের সর্বোচ্চ নেতারা স্বীকার করে আসছে। এই করোনা কালীন সময়ে যেকোনো দেশের সর্বোচ্চ ঝুকির জায়গাটা হচ্ছে খাদ্য ব্যবস্থাপনা। খাদ্য যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকে তাহলে অন্য কোন ব্যবস্থাপনার দিকে তেমন নজর দেওয়া যায়না। উনি এই জায়গাটাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখেছেন। তারপর তিনি দেখেছেন বাসস্থান ব্যবস্থা নিয়ে, চিকিৎসার ক্ষেত্রেও আজকের সরকার রোল মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে সারা বিশ্বে। শুধু কোভিড-১৯ মোকাবেলা নয়, এইযে সারা দেশে কমিউনিটি ক্লিনিক হয়েছে এটার প্রসেস টাও তিনি শুরু করেছিলেন। আজকে আমাদের মাথা পিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২০৪০ ডলার। তার মানে বুঝা যাচ্ছে আমাদের অর্থনীতির যে গতি ধারার যে প্রসেস চলছে তাতে আমরা অনেক দেশকে হার মানিয়েছি। আমাদের জিডিপি গ্রোথ ৫.৩%। অর্থাৎ যেকোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় তিনি সব সময় দেশের হাল শক্ত করে ধরেছেন বলেই আজকে আমাদের জিডিপি এতো ভালো অবস্থানে আছে। আজকে জননেত্রী শেখ হাসিনা এমন একটি মার্শাল অর্থনীতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন যেটা জার্মানি করেছিল বলেই তারা আজ বিশ্বে চতুর্থ শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হয়ে আছে। আজ থেকে ১২-১৩ বছর আগে যখন বাজেট পাস করা হতো তার পূর্ব মুহূর্তে বিদেশের সাহায্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে হতো। কিন্তু আজ, বাংলাদেশের ৯৭-৯৮% নিজস্ব অর্থায়নের উপর ভিত্তি করে বাজেট পাস করছে। এইযে সম্ভাবনার একটি দাড় উন্মোচন হয়েছে এটা কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি হয়নি। এর পিছনে নানা ত্যাগ, পরিশ্রম, ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেই তিনি আজ দেশের এই অবস্থান দাড় করিয়েছেন। নবম সংসদ নির্বাচনের আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি ছিল। ক্ষমতায় আসার পর সে অনুযায়ী কাজও শুরু করে আওয়ামী লীগ সরকার। তবে কাজ শুরুর আগেই বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। ঋণচুক্তির পাঁচ মাসের মাথায় ষড়যন্ত্র করে দুর্নীতির অভিযোগ এনে ২০১১ সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন স্থগিত করে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখানেও থেকে থাকেননি। বরং নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার ঘোষণা দেন। যার ফলে গত ১০ ডিসেম্বর অবশেষে দৃশ্যমান হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু।