বিনাদোষে ৪ বছর কারাগারে থাকা আরমানকে মুক্তিসহ ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০, ৫:০৭ পিএম আপডেট: ৩১.১২.২০২০ ৫:৩০ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
বিনাদোষে প্রায় ৪ বছর ধরে কারাগারে থাকা রাজধানীর পল্লবীর বেনারসি কারিগর মো. আরমানকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এবং ডিএমপি কমিশনারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
পাশাপাশি মো. আরমানকে আসামি করার ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ১৪ ফেব্রয়ারির মাঝে অগ্রগতি প্রতিবেদন জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
রায়ের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন রিটকারী ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব।
বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে হাইকোর্টের বিচারপতি মো: মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার নওরোজ মো: রাসেল চৌধুরী।
এর আগে গত বছরের ২৩ এপ্রিল ভুল আসামি হয়ে প্রায় ৪ বছর ধরে কারাগারে থাকা পল্লবীর বেনারসি পল্লীর কারিগর মো. আরমানকে কেন মুক্তির নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। রুলে মো. আরমানকে কারাগারে রাখায় কেন পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়।
২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল ভুল আসামি হয়ে প্রায় ৪ বছর ধরে কারাগারে থাকা মো. আরমানকে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা ও মুক্তি চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। ল এন্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব রিট আবেদনটি দায়ের করেন। রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজিপি, ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও পল্লবীর ওসিসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।
আরমানকে কারাগারে বন্দি রাখা নিয়ে ‘কারাগারে আরেক জাহালম’ শিরোনামে ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন সংযুক্ত করে ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন রিট আবেদনটি করেছিল।
সেসময় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০০৫ সালের ৩০ আগস্ট রাতে পল্লবীর ৬ নম্বর সেকশনের সি ব্লকের ৮ নম্বর লেনের ৭ নম্বর ভবনের নিচতলার একটি ফ্ল্যাট থেকে ৪০ বোতল ফেনসিডিলসহ শাহাবুদ্দিন এবং তার দুই সহযোগী সোহেল মোল্লা ও মামুন ওরফে সাগরকে গ্রেফতার করে ডিবি। এরপর তাদের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়। ওই মামলায় ওই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। দুই বছর কারাগারে থাকার পর জামিনে মুক্তি পান শাহাবুদ্দিন। কিন্তু তিনি আর আদালতে হাজির হননি। এ অবস্থায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
এরপর তিনি ২০১১ সালের ১৭ জানুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন। এই মামলায় বিচার শেষে ২০১২ সালের ১ অক্টোবর রায় দেন ঢাকার জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল। রায়ে শাহাবুদ্দিনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। কিন্তু রায়ের দিন শাহাবুদ্দিন পলাতক থাকায় আদালত তার বিরুদ্ধে আবারও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। ওই মামলায় ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি পুলিশ মো. আরমানকে গ্রেফতার করে। মূল আসামি শাহাবুদ্দিনের পিতার নাম ইয়াসিন ওরফে মহিউদ্দিন। আরমানের পিতার নামও ইয়াসিন। উভয় ইয়াসিনই মৃত। সেই থেকে কারাগারে আরমান।