প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:৫৩ পিএম আপডেট: ৩১.১২.২০২০ ১:৫৯ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
সারা দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত একদিনে আরও ২২ জন মারা গেছেন। এই রোগে নতুন করে শনাক্ত হয়েছে আরও ১ হাজার ২৩৫ রোগী। গতকাল বুধবার বিকেলে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সারা দেশে করোনা পরিস্থিতির সর্বশেষ এই তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত শনাক্ত ১ হাজার ২৩৫ জনকে নিয়ে দেশে সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৮ হাজার ৫০০ জন রোগী। এদিকে, গত একদিনে মারা যাওয়া ২০ জনসহ দেশে করোনায় সর্বমোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৪২০ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাসা এবং হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে আরও ১ হাজার ৫০৭ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন গত একদিনে। তাতে এ পর্যন্ত সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৭০ জন হয়েছে।
বাংলাদেশে করোনায় প্রথম সংক্রমিত রোগী ধরা পড়ে গত ৮ মার্চ, এই সংখ্যা ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত সাড়ে ৪ লাখ অতিক্রম করে যায়। যার মধ্যে গত ২ জুলাই সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়। সেই দিন ৪ হাজার ১৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। আর প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর অর্থাৎ গত ১৮ মার্চ দেশে করোনায় প্রথম মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করা হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে। এরপর ১২ ডিসেম্বর এই মারা যাওয়া রোগীর সংখ্যা সাড়ে সাত হাজার ছাড়িয়ে গেল। এই হিসেবের মধ্যে ৩০ জুন এক দিনেই সর্বোচ্চ মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়। সেই দিন ৬৪ জন মারা যান। শুরুর দিকে রোগী শনাক্তের হার কম ছিল। গত মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। ওই মাসের শেষের দিক থেকে রোগী শনাক্তের হার ২০ শতাংশের ওপরে চলে যায়। আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত সেটি ২০ শতাংশের ওপরে ছিল। এদিকে, বিশ^ করোনা রিপোর্ট প্রকাশকারী প্রতিষ্ঠান জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য মতে, সারাবিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে ২৭তম স্থান দখল এবং মৃতের সংখ্যার দিক থেকে ৩৩তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে ৮ কোটি ২০ লাখ পেরিয়েছে; মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ১৭ লাখ ৯১ হাজারের ঘরে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত একদিনে দেশে ১১৪টি আরটি-পিসিআর ল্যাব, ২৬টি জিন-এক্সপার্ট ল্যাব ও ৪০টি র্যাপিড অ্যান্টিজেন ল্যাবে, অর্থাৎ মোট ১৮০টি ল্যাবে ১৫ হাজার ২২৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৩২ লাখ ১৪ হাজার ৩৪৪টি নমুনার এসব পরীক্ষা করা হয়। শতকরা হিসেবে গত একদিনে নমুনা পরীক্ষার তথ্য মতে শনাক্তের হার ৮ দশমিক ১১ শতাংশ। মোট শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৯৪। সেই হিসেবে শনাক্ত রেটে সুস্থতার হার ৮৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ। সব মিলিয়ে সুস্থতার হার ভাল দাবি করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। যেখানে সরকারি ব্যবস্থাপনায় এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২৫ লাখ ৪৮ হাজার ৮২টি। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হয়েছে ৬ লাখ ৬৬ হাজার ২৬২টি।
গত একদিনে যারা মারা গেছেন, পুরুষের চেয়ে নারীর মৃত্যু কম হয়েছে। যেখানে ১৬ জন পুরুষ আর নারী ৬ জন। এদের ১৯ জন হাসপাতালে এবং একজন বাড়িতে মারা যান বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। আর বয়েসের হিসেবে ষাটোর্ধ্ব লোকের সংখ্যা বেশি। যেখানে ১১ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ৬ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৪ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে এবং ১ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে জানা গেছে। আর বিভাগের হিসেবে ঢাকা বিভাগে সব চেয়ে বেশি। যেখানে মৃতদের মধ্যে ১১ জন ঢাকা বিভাগের, ৫ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ১ জন করে মোট ৪ জন রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের এবং ২ জন ময়মনসিংহ বিভাগের রোগী ছিলেন বলে জানা গেছে। দেশে এ পর্যন্ত মারা যাওয়া সংখ্যায় সব চেয়ে বেশি পুরুষ মারা গেছে। যেখানে ৭ হাজার ৫৩১ জনের মধ্যে ৫ হাজার ৭৩৩ জনই পুরুষ এবং ১ হাজার ৭৯৮ জন নারী। আর বিভাগীয় মৃত্যুর পরিসংখানেও ষাটোর্ধ্ব বয়স্কদের মারা যাওয়া সংখ্যা পাওয়া যায় এসব তথ্যে। যেখানে ৪ হাজার ১০৮ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। এছাড়াও ১ হাজার ৯১১ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৮৮৫ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ৩৭৬ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ১৫৯ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে, ৫৭ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে এবং ৩৫ জনের বয়স ছিল ১০। এছাড়া বিভাগীয় তথ্য মতে, ৪ হাজার ১২৯ জন ঢাকা বিভাগের, ১ হাজার ৪০৭ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ৪৩৩ জন রাজশাহী বিভাগের, ৫৩০ জন খুলনা বিভাগের, ২৩৭ জন বরিশাল বিভাগের, ২৯১ জন সিলেট বিভাগের, ৩৩৮ জন রংপুর বিভাগের এবং ১৬৬ জন ময়মনসিংহ বিভাগের রোগী পাওয়া গেছে।