প্রকাশ: বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:৩৮ পিএম আপডেট: ৩০.১২.২০২০ ১:০৫ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
কক্সবাজার থেকে রওনা দেওয়া ১৮০৪ রোহিঙ্গা গতকাল মঙ্গলবার ভাসানচরে পৌঁছেছে। বেলা ১২টার দিকে রোহিঙ্গাদের বহনকারী নৌবাহিনীর সাতটি জাহাজ ভাসানচরে পৌঁছায়। এর আগে প্রথম দফায় সফলভাবে এক হাজার ৬৪২ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়। এ নিয়ে ৩৪৪৬ রোহিঙ্গা স্থানান্তরিত হলো ভাসানচরে। গত সোমবার দ্বিতীয় দফায় কক্সবাজারের উখিয়া থেকে চট্টগ্রাম হয়ে মঙ্গলবার সকালে ভাসানচরের উদ্দেশে যাত্রা করে ১৮০৪ জন মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিক। এদের মধ্যে ৮৪৮ জন শিশু ও ৫২৩ জন নারী রয়েছেন। সোমবার দুপুরে প্রথম দফায় ১৩টি যাত্রীবাহী বাসে ওঠে ৫৯৫ রোহিঙ্গা। এর প্রায় তিন ঘণ্টা পর আরো ১১টি বাসে ওঠে ৫৩৯ জন। পর্যায়ক্রমে ৩৩টি বাসযোগে ৪২৭টি পরিবারের নারী-পুরুষ ও শিশুরা কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়।
গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় নৌবাহিনীর জেটি থেকে প্রথম জাহাজটি রওনা হয়। এরপর ভাসানচরের উদ্দেশে ছেড়ে যায় রোহিঙ্গাবাহী নৌবাহিনীর বাকি জাহাজগুলো। তল্পিতল্পা নিয়ে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে নতুন গন্তব্য নোয়াখালীর ভাসানচরে পৌঁছার জন্য এসব রোহিঙ্গা আগে থেকেই নিবন্ধনপ্রক্রিয়া শেষ করেছিল। গতকাল দুপুরে ভাসানচরে পৌঁছার মধ্য দিয়ে তাদের প্রায় ২৪ ঘণ্টার কক্সবাজার-নোয়াখালী সফর শেষ হয়। নতুন বসতিস্থল ভাসানচরে আগে থেকেই সরকার আধুনিকভাবে রোহিঙ্গাদের জন্য ঘর নির্মাণ করে রেখেছে। রোহিঙ্গা স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় এর আগে ৪ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো ভাসানচরে নেওয়া হয় এক হাজার ৬৪২ রোহিঙ্গাকে। তারা সেখানে পৌঁছার পর স্বজনদের কাছে বার্তা পাঠায় যে ভাসানচরের পরিবেশ ভালো ও নিরাপদ। তাদের সেই বার্তায় আশ্বস্ত ও উদ্বুদ্ধ হয়ে আরো প্রায় সাত হাজার রোহিঙ্গা ভাসানচরে যাওয়ার জন্য নিবন্ধনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চলের কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের বলেন, তাদের ‘ধারণার চেয়ে বেশি’ লোক দ্বিতীয় দফায় ভাসানচরে গেছে। তিনি জানান দ্বিতীয় দফায় ১২শ’র মত লোক যাবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সে সংখ্যা এক হাজার ৮০৪ জনে দাঁড়িয়েছে। স্বেচ্ছায় ও স্বপ্রণোদিত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিকরা প্রত্যাবাসনের আগে অন্তর্বর্তীকালীন আশ্রয়ের জন্য ভাসানচরে যাচ্ছে। কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির ও তার বাইরে অবস্থান নিয়ে থাকা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে নানা সামাজিক সমস্যা সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে দুই বছর আগে তাদের একটি অংশকে হাতিয়ার কাছে মেঘনা মোহনার দ্বীপ ভাসান চরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার।
সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে মোটামুটি ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করে এক লাখের বেশি মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। টেকনাফ ও উখিয়ায় থাকা রোহিঙ্গার মধ্যে গত ৪ ডিসেম্বর ১ হাজার ৬৪২ রোহিঙ্গাকে প্রথম দফায় ভাসানচরে নেওয়া হয়। দ্বিতীয় দফার স্থানান্তরের জন্য গত রোববার রাতেই রোহিঙ্গাদের উখিয়ার কুতুপালং সংলগ্ন ট্রানজিট ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। সোমবার সকালেও অনেকে আসেন।