প্রকাশ: বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:২২ পিএম আপডেট: ৩০.১২.২০২০ ২:৩০ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
সারা দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত একদিনে আরও ৩০ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে মহামারিতে দেশে এই মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৭ হাজার ৫০৯ জনে। এই রোগে নতুন করে শনাক্ত হয়েছে আরও এক হাজার ১৮১ জন। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সারা দেশে করোনা পরিস্থিতির সর্বশেষ এই তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত শনাক্ত রোগী এক হাজার ১৮১ জনকে নিয়ে দেশে সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ১১ হাজার ২৬৫। এ নিয়ে মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়াল ৩১ লাখ ৯৯ হাজার ১১৫টি। এই সময়ের মধ্যে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন আরও এক হাজার ১৮১ জন। দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫ লাখ ১১ হাজার ২৬৫ জনে দাঁড়িয়েছে। এদিকে, গত একদিনে মারা যাওয়া ২০ জনসহ দেশে করোনায় সর্বমোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৫০৯ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাসা এবং হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে আরও এক হাজার ২৪৫ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন গত একদিনে। তাতে এ পর্যন্ত সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে ৪ লাখ ৪৮ হাজার ৮০৩ জন হয়েছে।
বাংলাদেশে করোনায় প্রথম সংক্রমিত রোগী ধরা পড়ে গত ৮ মার্চ, এই সংখ্যা ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত সাড়ে ৪ লাখ অতিক্রম করে। যার মধ্যে গত ২ জুলাই সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়। সেই দিন ৪ হাজার ১৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। আর প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর অর্থাৎ গত ১৮ মার্চ দেশে করোনায় প্রথম মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করা হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে। এরপর ১২ ডিসেম্বর এই মারা যাওয়া রোগীর সংখ্যা সাড়ে সাত হাজার ছাড়িয়ে গেল। এই হিসাবের মধ্যে ৩০ জুন এক দিনেই সর্বোচ্চ মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়। সেই দিন ৬৪ জন মারা যান। শুরুর দিকে রোগী শনাক্তের হার কম ছিল। গত মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। ওই মাসের শেষের দিক থেকে রোগী শনাক্তের হার ২০ শতাংশের ওপরে চলে যায়। আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত সেটি ২০ শতাংশের ওপরে ছিল। এদিকে, বিশ^ করোনা রিপোর্ট প্রকাশকারী প্রতিষ্ঠান জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য মতে, সারাবিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে ২৭তম স্থান দখল এবং মৃতের সংখ্যার দিক থেকে ৩৩তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত একদিনে দেশে বিভিন্ন দেশের ১৬৭টি ল্যাবরেটরিতে ১৪ হাজার ৮২০টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এ পর্যন্ত সারা দেশে ওই পরীক্ষাগারে ১৪ হাজার ৫৮৮টি নমুনা পলীক্ষা করা হয়। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ। শতকরা হিসেবে গত একদিনে নমুনা পরীক্ষার তথ্য মতে শনাক্তের হার ৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৩১ লাখ ৯৯ হাজার ১১৫টি নমুনা। সেই হিসেবে শনাক্ত রেটে সুস্থতার হার ৮৮ দশমিক শূন্য ৯১ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ। সব মিলিয়ে সুস্থতার হার ভাল দাবি করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। যেখানে সরকারি ব্যবস্থাপনায় এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২৫ লাখ ২ হাজার ৩৬৬টি। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হয়েছে ৬ লাখ ৪৬ হাজার ৯৮২টি। গত একদিনে যারা মারা গেছেন, পুরুষের চেয়ে নারীর মৃত্যু কম হয়েছে। যেখানে ১৯ জন পুরুষ আর নারী ১১ জন। এদের সবাই হাসপাতালে মারা যান বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। মার্চে শুরু হওয়ার পর করোনার প্রভাব যে হারে বেড়েছিল তা সেপ্টম্বর অক্টোবরে কিছুটা কমেছিল। এরপর মাস দুয়েক সংক্রমণ নি¤œমুখী থাকার পর গত নভেম্বরের শুরুর দিক থেকে নতুন রোগী ও শনাক্তের হারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু হয়। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে দৈনিক নতুন রোগী শনাক্তের গড় দুই হাজার ছাড়ায়।
অবশ্য কিছুদিন ধরে নতুন রোগী শনাক্ত কমেছে। শনাক্তের হারও ১০ শতাংশের নিচে। জনস্বাস্থ্যবিদেরা জানিয়েছে, টিকা না আসা পর্যন্ত সংক্রমণ প্রতিরোধের মূল উপায় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, বাইরে বের হলে মুখে মাস্ক পরা শতভাগ নিশ্চিত করা। সাথে সাথে কিছু সময় পরপর সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়ার বিধি মেনে চলতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি না মার প্রবনতা যেভাবে চলছে তা খুবই চিন্তার বিষয়। এতে সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।