প্রকাশ: বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:২২ পিএম আপডেট: ৩০.১২.২০২০ ২:৩০ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
গণমাধ্যমকে বলা হয় রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। গণতন্ত্রকে গণমুখী করতে রাষ্ট্রের সঙ্গে জনগণের মেলবন্ধন ঘটান সাংবাদিকরা। আর এই মেলবন্ধন ঘটাতে সেই সাংবাদিকদের জীবন হয় সংকটাপন্ন। প্রতিবছর বিশ্বের নানা প্রান্তে ঘটছে সাংবাদিক নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা। এ বছর ২০২০ সালে হত্যা করা হয়েছে ৫০ জন সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীকে। যেসব দেশে এসব হত্যাকা- হয়েছে এর বেশির ভাগ দেে ছিল না কোনো যুদ্ধ। গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইথ আউট বর্ডারস (আরএসএফ) গতকাল মঙ্গলবার তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
এএফপির খবরে জানা যায়, রিপোর্টার্স উইথআউট বর্ডারস বলছে, অনুসন্ধানী সাংবাদিক, দুর্নীতি ও পরিবেশ ক্ষেত্রে কাজ করা সাংবাদিকদেরই বেশি হত্যা করা হয়েছে। আরএসএফ বার্ষিক প্রতিবেদনে বলছে, এ বছর ৮৪ শতাংশ সাংবাদিককে সরাসরি তাদের কাজের জন্য লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে ও হত্যা করা হয়েছে। আর ২০১৯ সালে ৬৩ শতাংশকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। মেক্সিকোতে ৮ জন, ভারতে ৪ জন, ফিলিপাইনে ৩ জন ও হন্ডুরাসে ৩ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। মেক্সিকোর পূর্বাঞ্চলের এলাকা ভেরাক্রুজে এল মান্ডো পত্রিকার প্রতিবেদক জুলিও ভালদিভিয় রদর গুয়েজের মস্তকবিহীন লাশ পাওয়া গেছে। পশ্চিমের এলাকা আকাপুলকোতে স্থানীয় সংবাদ ওয়েবসাইটের সম্পাদক পুনতো এক্স পুনতো নোতিসিয়াসের মরদেহের টুকরা টুকরা অংশ পাওয়া গেছে। দেশটিতে মাদক পাচারকারী ও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে যোগসূত্র রয়ে গেছে। যেসব সংবাদকর্মী এসব কাজের সঙ্গে জড়িত, তাদের বর্বর হত্যাকা-ের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। মেক্সিকোতে সাংবাদিক হত্যায় জড়িত কাউকে শাস্তি দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে আরএসএফ। প্রতিবেদনের আরও বলা হয়েছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে পাঁচজন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। আফগানিস্তানের সরকার ও তালেবান জঙ্গিদের মধ্যে আলোচনা চললেও গত কয়েক মাসে গণমাধ্যমকর্মীদের হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। ভারতে রাষ্ট্রীয় স্বরূপ পত্রিকার প্রতিবেদক রাকেশ নির্ভীক সিংকে ডিসেম্বর মাসে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। স্থানীয় কর্মকর্তাদের দুর্নীতির খবর প্রকাশের জেরে তাকে হত্যা করা হয়। দক্ষিণ-পূর্বের তামিলনাড়ু রাজ্যে টিভি সাংবাদিক ইসরাভেল মোজেসকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ইরানের ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিক রুহুল্লাহ জামের মৃত্যুদ- কার্যকরের ঘটনাও উল্লেখ করা হয়েছে আরএসএফের প্রতিবেদনে। তিনি আমাদনিউজ ওয়েবসাইট ও টেলিগ্রাম নিউজ চ্যানেলের সম্পাদক। তাদের সঙ্গে বিরোধীদের কর্মকা-ের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। গত ডিসেম্বর মাসে রুহুল্লাহ জামেকে মৃত্যুদ- দেওয়া হয়। ১৯৯৫ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের সহিংসতার বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে আরএসএফ। আরএসএফের এডিটর ইন চিফ অ্যাডেস মেভেল বলেন, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের ঘটনা কাভার করেন এমন গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি সহিংসতা বেশি ঘটেছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে জর্জ ফ্লয়েড হত্যা ও ফ্রান্সে বিতর্কিত নতুন নিরাপত্তা আইনের কথা উল্লেখ করেছেন। আরএসএফ বলছে, ২০১৯ সালের তুলনায় এ বছর কিছু কম সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এ বছর কমসংখ্যক সাংবাদিক মাঠে কাজ করেছেন। এ মাসে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রথম অংশে আরএসএফ বলছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে সরকারি বিধিনিষেধের কারণে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিঘিœত হয়েছে। এ বছর ৩৮৭ জন সাংবাদিককে কারাদ- দেওয়া হয়েছে। এই হার অনেক বেশি। করোনাভাইরাসের সংকটময় পরিস্থিতির খবর সংগ্রহ করায় তাদের মধ্যে ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে চীনের কথা উল্লেখ করেছে আরএসএফ। চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর এ নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করা সাংবাদিক ঝ্যাং ঝানকে (৩৭) গত সোমবার চার বছরের কারাদ- দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের জের ধরে গত মে মাসে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। তখন থেকে কারাগারে আছেন তিনি। ঝ্যাং গত ফেব্রুয়ারিতে উহানে যান। সেখান থেকে করোনার সংক্রমণ নিয়ে বেশ কতগুলো প্রতিবেদন করেন। এসব প্রতিবেদন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। এরপরই সরকারের রোষানলে পড়েন তিনি। মহামারি নিয়ন্ত্রণে সরকারের সমালোচনা করে তথ্য প্রকাশ করায় সেখানে ৮ জনকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।