#দেশের উন্নয়নে সকল পরিকল্পনা শেখ হাসিনা করে যাচ্ছেন: ডা এনামুর রহমান।
#শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশ আজ এই অবস্থানে এসেছে: ড. নূর রহমান।
#অনেক সুকৌশলী নেতৃত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা করোনা মোকাবেলা করে যাচ্ছেন: ডা. মোহাম্মদ আবদুল আজিজ।
#বাংলাদেশের উন্নতির প্রশংসা ইতিমধ্যে সারা বিশ্বে পৌঁছে গিয়েছে: চৌধুরী হাফিজুর রহমান।
মহামারী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্ব অর্থনীতি যেখানে মুখ থুবড়ে পড়েছে, সেখানে শেখ হাসিনার সাহসী আর বিচক্ষণ পদক্ষেপ বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত। এক সময় দারিদ্র্য-দুর্ভিক্ষে জর্জরিত যে বাংলাদেশ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম করত, সেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বজয়ের নবতর অভিযাত্রায় এগিয়ে চলছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্ব, যোগ্যতা, নিষ্ঠা, মেধা-মনন, দক্ষতা, সৃজনশীলতা, উদার গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ও দূরদর্শী নেতৃত্বে। বিশ্বসভায় আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ, গৌরবময় হয়েছে বাঙালি যা অর্জনে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার কারণেই বাংলাদেশ আদর্শ রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ২০৩তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, ঘানিম ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন (ব্রুনায় হালাল ফুডস), ব্রুনায় এর সিইও, ব্রুনাই বঙ্গবন্ধু পরিষদের উপদেষ্টা, অস্ট্রেলিয়া বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাবেক সভাপতি এবং সাবেক ছাত্রনেতা ড. নূর রহমান, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) এর মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবদুল আজিজ, পাবলিক একসেস ব্যারিস্টার এবং যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য চৌধুরী হাফিজুর রহমান। দৈনিক ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
ডা এনামুর রহমান বলেন, আজকে একটি শুভদিন। আজ সকালে আমাদের ইকোনমিক কাউন্সিলেরে বৈঠকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অষ্টম পঞ্চবার্ষিকীর যে পরিকল্পনার খসড়া অনুমোদন দিয়েছেন, সেখানে আমারা দেখেছি ৫৮টি মন্ত্রণালয় আগামী ৫ বছর কিভাবে কাজ করবে, এবং এই কাজের ফলে আমদের প্রবৃদ্ধি কতো হবে, আমাদের মাথা পিছু আয় কত হবে, আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কতো দাঁড়াবে, দেশে কর্মসংস্থান কতো হবে, বিদেশে কতো হবে, আমাদের গড় আয়ু কত হবে, আমাদের শিক্ষা খাতে ছাত্র ছাত্রীদের এনরোলমেন্ট কতো হবে, আমাদের কৃষি খাতকে কিভাবে আরও সমৃদ্ধি করা যায়, আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলে দুর্যোগ মোকাবেলা হবে, হাওরাঞ্চলে কিভাবে বন্যা মোকাবেলা করা হবে, খরা মোকাবেলা কিভাবে করা হবে, পাহাড়িদের উন্নয়ন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, এইরকম সব বিষয় নিয়ে আজকে পরিকল্পনা হয়েছে। গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি সভায় যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এনইসি সভায় এ অনুমোদন দেন। এইসময় শেখ হাসিনা বলেন, আমি বিশ্বাস করি অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা দেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন অর্জনে খুব কার্যকর হবে। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা জানান, সরকার জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়ন করছে যা বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য। ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ ছাড়াও সরকার পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, ভিশন ২০২১ এবং ভিশন ২০৪১ গ্রহণ করেছে। এসব লক্ষ্য এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে আমাদের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার দরকার ছিল। ষষ্ঠ এবং সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা আমরা বাস্তবায়ন করেছি এবং আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নের জন্য এই সকল পরিকল্পনা পর্যায়ক্রমে উন্নয়ন পর্ব এগিয়ে নিয়ে যাবে। এই করোনা মহামারীতে যেসব দেশ উন্নয়নের সারিতে রয়েছে তাদের মধ্যেও আমরাও আছি। আমাদের দেশে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার সবচে কম। সাউথ এশিয়ার মধ্যে আমরা করোনা মোকাবেলায় এক নম্বর অবস্থান দখল করে আছি এবং এর জন্য সারা বিশ্ব থেকে তাকে নানানভাবে ভূষিত করা হয়েছে। আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার যে যথেষ্ট সামর্থ্য সেটাও কিন্তু আমরা ইতিমধ্যে প্রমাণ করেছি। আজকে ইউরোপ আমেরিকার মতো দেশ যেখানে তাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা কিরকম শক্ত ছিল সেখানে আজকে তাদের অবস্থা কি রকম হয়ে গিয়েছে, সেখান থেকে আজকে আমাদের অবস্থা অনেক ভালো আছে বলে আমি মনে করি।
ড. নূর রহমান বলেন, বিজয়ের এই মাসে আমি প্রথমেই স্মরণ করতে চাচ্ছি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের প্রতি এবং আমাদের এই বিজয় ছিনিয়ে আনতে সেসব বীর মুক্তিযোদ্ধা যারা জীবন দিয়েছিলেন তাদের স্মরণ করে আমার বক্তব্য শুরু করতে চাচ্ছি। আজ বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে, ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশেও। বাংলাদেশের এই ঘুরে দাঁড়ানোর পিছনে অন্যতম কারিগর হচ্ছে আমাদের জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা বলতে গেলে যেমন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা স্মরণ করতে হবে ঠিক একইভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য যে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তার জন্য শ্রদ্ধাভরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্মরণ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, নিরলস পরিশ্রম এবং তার নেতৃত্বের দক্ষতা দিয়ে আজকে বাংলাদেশকে এখানে নিয়ে এসেছেন। আমরা যদি খেয়াল করে দেখি বাংলাদেশের প্রত্যেকটা গ্রাম-শহরে উনার অর্থনৈতিক মডেল বাস্তবায়ন করার জন্য উনি যে দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং তার সহযোগী যোদ্ধাদের নিয়ে যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন। আমরা দেখেছি উনি কিভাবে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত্র মোকাবেলা করেছেন সাহসিকতার সাথে, এটা যদি তিনি না করতে পারতেন তাহলে বাংলাদেশ আজকে অন্য পর্যায়ে থাকতে পারতো। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে অন্তর থেকে ভালোবাসেন বাংলাদেশের মানুষদেরকে অন্তর থেকে ভালোবাসেন বলেই তিনি এই সাহসিকতা দেখিয়ে যাচ্ছেন দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য। উনার এই সাহসিকতার কারণে, বাংলাদেশের মতো একটি ছোট দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেও তিনি আমেরিকাকে বৃদ্ধা আঙ্গুলি দেখিয়ে বিশ্ব ব্যাংকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো একটি বড় প্রকল্প দেশে বাস্তবায়নের দিকে সমাপ্তি করে যাচ্ছেন।
ডা. মোহাম্মদ আবদুল আজিজ বলেন, যেকোনো মহামারিতে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়ায় অর্থনীতি। হুমকির মুখে পড়ে দারিদ্রতা ও সম্পদের বণ্টনের একটি সমন্বয়। সারা বিশ্ব যেখানে করোনা মহামারী মধ্যে অনেক দেশেই অর্থনীতি থমকে গিয়েছে সেখানে বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কিভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। এর রহস্য কোথায়? আম্ফান, বন্যা, কোভিড-১৯ এর মধ্যেও আমাদের অর্থনীতি এখনো সচল আছে। আমরা যদি দেখি এই কোভিড-১৯ চলাকালীন সময়ে আমাদের বেকারত্ব সমস্যা, স্বাভাবিক জীবন-যাপন, লকডাউনের মধ্যেও আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি সুকৌশলী ভূমিকা রেখেছেন। করোনায় আমাদের চিকিৎসা সরঞ্জাম, চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আমরা শুরুতে অনেক সমস্যায় ছিলাম। তখন বিশ্বের উন্নত দেশ থেকে আমাদেরকে এই চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ ও আমাদেরকে করোনার উন্নত চিকিৎসা জ্ঞান দেওয়ার জন্য স্কোপ তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল। নতুন চিকিৎসা কর্মী নিয়োগ এবং বাজেটে একটা বড় অংশ আমাদের চিকিৎসা খাতে রাখা হয়েছিল। এসব গুলোর পর আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৮৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছিলেন এই চিকিৎসা খাতে। এই প্রণোদনার কথা বলতে গেলেই বলা চলে, শেখ হাসিনা আমাদের দেশের জন্য যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন, তিনি এই পদক্ষেপ নেওয়ার পর কিন্তু বিশ্বের অনেক দেশ তার এই মডেলকে ফলো করে যার যার নিজের দেশে তা বাস্তবায়ন করেছেন অনেকেই। আমরা যদি কৃষি খাদ্যে যদি দেখি তাহলে এই করোনার সময়ে কোন সমস্যা হয়নি খাদ্য দ্রব্যের মূল্য নিয়ে। আমাদের কৃষকের ধান কাটা নিয়ে যে সমস্যা হয়েছিল তা সমাধানে শেখ হাসিনা তার সুকৌশলী দিক-নির্দেশনা দিয়ে তার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীদের দ্রুত মাঠে নামিয়ে এই ফসল কৃষকের ঘরে তোলার ব্যবস্থা করেছিলেন। এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা যে, একজন রাজনৈতিক দল, একটি রাজনৈতিক দলের প্রধানের নেতৃত্বে এইরকম একটি অতি মহামারীতে জনগণের পাশে থেকে রাজনৈতিক যে সেবা বা রাজনীতিবিদ হয়ে যে সেবাটা দিয়েছে তা আমার কাছে মনে হয় বাংলাদেশ তো বটেই পৃথিবীর ইতিহাসে কোথাও হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।
চৌধুরী হাফিজুর রহমান বলেন, বিশ্ব ব্যাংক যখন এই পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির কালিমা এঁটে দিল তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাংকের কার্যকলাপে অসন্তুষ্ট হয়ে দৃঢ়কণ্ঠে ঘোষণা দিলেন, ‘আমরা নিজেরাই বানাবো পদ্মা ব্রিজ’, তখন অনেকেই বিশ্বাস করতে পারেননি এটা সত্যিকার অর্থেই সম্ভব। সেই অসম্ভবকে সম্ভব করার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছি আমরা। হয়তো আর বছরখানেকের মধ্যে আমরা ব্যবহার করতে পারবো ৬.১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতু, যেখানে সড়ক ও রেল উভয় মাধ্যমে সংযোগের সুযোগ থাকছে। বিশ্ব সম্প্রদায় দেখছে বাংলাদেশ জাতি রাষ্ট্র হিসেবে কি মর্যাদার রাষ্ট্র। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে অনেক ঝড়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। ১৯৭৫ সালে সেই কালো আইন ছিল বাংলাদেশকে হত্যা করার প্রচেষ্টা, ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে হত্যা করার যে ষড়যন্ত্র চালানো হয়েছিল যেখানে আমরা ২৪ জন নেতা কর্মীকে হারিয়েছি এবং সাম্প্রতিক সময়ে বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্যতে যে অপশক্তিদের আঘাত হয়েছিল, এই তিনটি আঘাত একই সূত্রে গাথা। সত্তরের দশকের শুরুতে এদেশে শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ ছিল দরিদ্র, বৈদেশিক সাহায্য নির্ভরশীল যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের পরিচিতি হয়েছিল তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে। সেই বাংলাদেশ দারিদ্র্যের হার নামিয়ে এনেছে শতকরা ২০ ভাগে। ১৯৯২ সালেও যেখানে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ২২০ মার্কিন ডলার আজ তা উন্নীত হয়েছে ২০৬৪ ডলারে। সত্তরের দশকের গড়ে তিনভাগ জিডিপির প্রবৃদ্ধি বর্তমান দশকে প্রায় সাত শতাংশ করা হয়েছে।