সৌদির আলোচিত নারী অধিকার কর্মী লুজাইন আল-হাথলুলের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিলের আবেদন করতে যাচ্ছে তার পরিবার। সৌদির সন্ত্রাসবাদ আদালত তাকে পাঁচ বছর আট মাসের সাজা দেয়ার প্রেক্ষিতেই এ পদক্ষেপ নেয়ার হচ্ছে। এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা থেকে শুরু করে বৈশ্বিক নেতারাও লুজাইন আল-হাথলুলকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
বৈশ্বিক চাপ উপেক্ষা করে সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) সৌদির আদালত হাথলুলকে কারাদণ্ডাদেশ দেন।
মানবাধিকারকর্মী লুজাইন আল-হাথলুলের সাজা স্থগিত চেয়ে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার পরিবার। তবে সৌদি বিচার ব্যবস্থাকে ‘লজ্জাজনক’ এবং ‘রাজনৈতিকভাবে অনুপ্রাণিত’ বলে অভিহিত করেছেন তারা।
ওই নারী অধিকার কর্মীর ভাই ওয়ালিদ আল-হাথলুল মার্কিন সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘এই রায় জানা মাত্রই কেঁদে দেন আমার বোন, কারণ তাকে সন্ত্রাসবাদী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু আমরা এতো সহজেই হাল ছেড়ে দিচ্ছি না, আপিলে যাচ্ছি। যদিও সৌদির বিচার ব্যবস্থার প্রতি আমাদের কোন আস্থা নেই।’
জেনেভাভিত্তিক জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার কার্যালয় থেকে এই রায়কে পক্ষপাতমলূক উল্লেখ করা হয়েছে। তাকে অন্যায়ভাবে আটকে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে সংস্থাটি। এক টুইটবার্তায় জানানো হয়, ‘হাথলুলকে মুক্ত করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাব।’
নারী অধিকার কর্মী লুজাইন আল-হাথলুলের কারাদণ্ডের রায়ে নিন্দা জানিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ পুনর্ব্যক্ত করেছে ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একইভাবে উদ্বেগ জানিয়েছে জার্মানির মানবাধিকার সংস্থার কমিশনার বার্বেল কফলের।
এদিকে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিবানকে টুইট করে বলেন, ‘সৌদি আরবের লুজাইন আল-হাথলুল-কে তার অধিকার যথাযথভাবে প্রয়োগ করার জন্য সাজা দেওয়া অন্যায় ও বিরক্তিকর।’
হাথলুলকে আগামী বছরের গোড়ার দিকেই মুক্তি দেয়া হবে বলে আশাবাদী যুক্তরাষ্ট্র, জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের এক মুখপাত্র কেলি ব্রাউন।
৩১ বছর বয়সী হাথলুল-কে ২০১৮ সাল থেকে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে। দীর্ঘদিন কারাবাসে থাকা হাথলুলকে মুক্তি দিতে নানা সময় আহ্বান জানিয়ে আসছে মার্কিন কংগ্রেস এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইনপ্রণেতারা। বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন অভিযোগ তুলেছে যে, হাতলুলকে কারাগারে নানাভাবে যৌন হয়রানি করা হচ্ছে। একই অভিযোগ তুলে তাকে মুক্তি দিতে সৌদি সরকারের কাছে বার বার অনুরোধ জানিয়েও কোনো প্রতিকার পায়নি তার পরিবার।
মূলত সৌদির রাজপরিবারের শাসন ব্যবস্থা এবং প্রভাবশালী যুবরাজ সালমানের বিরুদ্ধে কথা বলায় তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ তুলে কারাগারে পাঠানো হয়।