#শেখ হাসিনার একক নেতৃত্বেই আমরা করোনাকে সফলভাবে মোকাবেলা করতে পেরেছি: অধ্যাপক ড. সরিফা সালোয়া ডিনা।
#গত একযুগে বাংলাদেশের উত্থান আমরা ভালোভাবেই দেখতে পেরেছি: অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন।
#করোনাকালে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে প্রবাসীরা: আশরাফ ইসলাম।
প্রকাশ: সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২০, ৯:৫৯ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
পুরো বিশ্বের অর্থনীতির ওপর করোনা সংকটের মারাত্মক প্রভাবের মাত্রা দিনে দিনে আরেও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থনীতির অবস্থা সম্পর্কে ভয়াবহ চিত্র উঠে আসছে। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি তুলনামূলক অনেক ভালো অবস্থানে আছে। এমনকি ভারত, পাকিস্তান, চীন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থনীতির চেয়েও কম ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। দুর্যোগে এদেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এখনও ভালো, ফলে করোনাকবলিত অন্যান্য দেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করবে এটাই স্বাভাবিক।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ২০২তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর এর উপ- উপাচার্য অধ্যাপক ড. সরিফা সালোয়া ডিনা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন, বঙ্গবন্ধু পরিষদ ফ্রান্স এর সাধারন সম্পাদক এবং ইউরোপীয়ান প্রবাসী বাংলাদেশী এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি আশরাফ ইসলাম। দৈনিক ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
অধ্যাপক ড. সরিফা সালোয়া ডিনা, আজ এমন একটি সময়ে আমরা কথা বলছি যে সময়ে পুরো পৃথিবী সহ সারা বাংলাদেশ করোনা আতঙ্কে কাঁপছে। অর্থনীতির চাকার উপরে দাড়িয়ে থাকে একটি দেশ। অর্থনীতির চাকা যদি সচল না থাকে তাহলে একটি দেশ কোনভাবেই এগুতে পারেনা। আমাদের শিক্ষার সমৃদ্ধি, আইসিটির সমৃদ্ধি, বাণিজ্যের সমৃদ্ধি যাই বলি না কেন কোন কিছুই এগুতে পারেনা। সব কিছুর পিছেই যে অর্থনীতি আছে সেটা আমরা সব কিছুতেই দেখতে পাই। একটি পুরাতন উদাহরণ দিতে পারি এক্ষেত্রে। বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হলো তখন পাকিস্তানের ১০০ টাকা পেতে হলে আমাদের ১৬৫ টাকা দিতে হতো। আজকে বিষয়টা পুরো উল্টে গিয়েছে। আজকে বাংলাদেশের ১০০ টাকা পেতে গেলে পাকিস্তানের ১৮৯ টাকা খরচ করতে হয়। অর্থাৎ এই যে উল্টে যাওয়া এই বিষয়টা কিন্তু আমাদের অর্থনীতির ব্যাপক পরিবর্তন দেখাচ্ছে। যে দেশকে স্বাধীন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের একটি রাষ্ট্র উপহার দিয়েছে, সেই রাষ্ট্রকে আজকে এখানে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন তারই সুযোগ্য কন্যা, আমাদের জননেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারই নেতৃত্বে আমাদের অর্থনীতির অগ্রগতি দৃঢ় গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে একটি উন্নতির ধারার দিকে। আমরা অতীতে একটা সময় দেখেছি আমাদের অন্নের ঘাটতি ছিল, বস্ত্রের অভাব ছিল, শিক্ষার অভাব ছিল; আজকে সেটা উন্নতি হয়েছে তো বটেই এই করোনার লকডাউনে যেখানে সারা বিশ্বই লকডাউনে ছিল সেখানে আমরাও কিন্তু অনেকেই বলেছিলাম, আমরা কেন লকডাউনে যায়নি। আমরা আমাদের জীবন যাত্রার প্রবাহ, নিম্ন বিত্ত মানুষের জীবন যাত্রার প্রবাহকে না থামিয়ে আমরা সব কিছুই খোলা রেখেছি। এর ফলে কি হয়েছে, আমরা অন্যান্য দেশের মতো দারিদ্রের মধ্যে পড়িনি, আমরা বস্ত্র অভাবে নেই, আমরা অন্নের অভাবে নেই। করোনা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলোতে উন্নতি করে প্রবৃদ্ধিতে পেছনে ফেলছে প্রতিবেশী দেশগুলোকে বাংলাদেশ। আমরা সবাই কয়েকদিন আগের একটা জরিপ জানাতে পেরেছি, যুক্তরাষ্ট্রে এক কোটি ৪০ লক্ষ কর্মহীন লোকের ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের কি হয়েছে; এই বাংলাদেশে যারা ভাতা পেতেন তাদের কারো তো ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়নি বটেই, বরংচ যারা ভাতা পেতেন না তাদের কেও এই করোনা কালীন সময়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা লক্ষ লক্ষ মানুষে যাতে এই দুরাবস্থার মধ্যে না পড়ে সে জন্য অনেক অনেক টাকার প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। অবশ্য করোনাভাইরাসের কারণে তুলনামূলক ‘সবল’ এ দেশের অর্থনীতি। ‘সবলতা’র অন্যতম কারণ হলো করোনাকবলিত বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক-নির্দেশনায় পরিচালিত হচ্ছে।
অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন, বাংলাদেশের যে উত্থান তা আমরা গত একযুগে অনেক ভালোভাবেই দেখেছি। বাংলাদেশের এই বর্তমান চিত্রের স্বপ্ন আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন করার আগেই দেখেছিলেন। তিনি স্বপ্ন বুকে ধারণ করে এই দেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। তার আমলে আমরা দেখেছি এই দেশের জিডিপি গ্রোথ ছিল ৭.৫%, বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে উনি অনেক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন এবং তারই ধারাবাহিকতায় জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা সারা বাংলাদেশের মানুষকে পুরো বিশ্বের কাছে যেভাবে সম্মানিত করেছেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। করোনা মহামারি বিশ্ব অর্থনীতিতে রীতিমতো ধস নামিয়েছে। অনেক দেশেরই জিডিপির প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক ধারায় চলে গেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও শুরুতে করোনা আঘাত হেনেছে। রফতানি আয় কমে গিয়েছিল। রাজস্ব আদায়ের হার কমেছে। কিন্তু বর্তমান অবস্থা অনেক পাল্টে গিয়েছে। আশা করা যায়, ২০২৪ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে চলে যাবে। কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে চলেছে। অবকাঠামো খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান বাস্তবতা। বিদ্যুতে দেশ আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ। মাথাপিছু আয় দুই হাজার ডলার ছাড়িয়েছে। করোনার মধ্যেও বর্তমান অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রফতানি আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তৈরি পোশাক রফতানি ছাড়া অন্যান্য খাতেও রফতানি বাড়ছে। বাংলাদেশের ওষুধ যাচ্ছে ১৬৬টি দেশে। প্রবাসী আয় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছাড়িয়েছে ৪২ বিলিয়ন ডলার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় বলে থাকেন, বাংলাদেশের মানুষের রয়েছে আশ্চর্য এক সহনশীল ক্ষমতা এবং ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা। ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে যে জাতি মাত্র ৯ মাসের মধ্যে স্বাধীনতা অর্জন করতে পারে, যুদ্ধে বিজয় অর্জন করতে পারে- সেই জাতিকে কেউ কখনও দাবিয়ে রাখতে পারবে না, এটা জাতির পিতা নিজেই বলে গেছেন। কাজেই মহামারিতে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট দূর করার জন্য জাতির পিতার সেই অমরবাণী বুকে ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে; ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। তাঁর নেতৃত্বে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে ভবিষ্যতে মানুষের আর কোনো সমস্যা থাকবে না। সকলের কষ্ট লাঘব করাটাই বর্তমান সরকারের অন্যতম দায়িত্ব।
আশরাফ ইসলাম বলেন, আমরা প্রবাসীরা বাংলাদেশের জন্য কি করতে পেরেছি এবং আরও কি করতে পারি তা ইতিমধ্যে সবাই দেখেছে। ১ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে। এই করোনাকালীন সময়ে আমারা প্রবাসীরা কিন্তু রেমিটেন্স পাঠানো বন্ধ করিনি। আমরা যে রেমিটেন্স পাঠিয়েছি তা এই মুহূর্তে দেশের জন্য কতোটা কল্যাণ বয়ে আনছে তা কিন্তু আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনা খুবই ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছেন এবং অনেকভাবেই তিনি প্রবাসীদের এই অর্জনে সহযোগিতা করে আসছিলেন। এই দুর্যোগকালে কোন সরকার কি দেখেছেন যে, শুধু নিজ দেশেই না, বরং বিদেশে যারা নিজ দেশে মানুষ অবস্থান করছে তাদেরকে সাহায্য দিতে। কিন্তু আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা এটা করেছেন। তিনি দেশে বাইরে প্রত্যেকটা এম্বাসিতে আমাদের কথা চিন্তা করে সাহায্য পাঠিয়েছেন। এই করোনার মধ্যেও তিনি আমাদের ফ্রান্সের মতো একটি দেশে ২০ লক্ষ টাকা পাঠিয়েছেন। উনি যতটুকও করেছেন আমাদের জন্য এটা কি বিগত কোন সরকারকে করতে দেখেছেন। আমাদের প্রবাসীদের যে রেমিটেন্সের যে ধারাবাহিকতার উত্থান গত ৫ বছরে হয়েছে তা বাংলাদেশ ব্যাংক আরও ভালোভাবেই বলতে পারে, এমনকি এই করোনা কালেও তা আরও বেশি হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা কোটি বাংলাদেশির পাঠানো অর্থ বা রেমিটেন্স। দেশের জিডিপিতে এই রেমিটেন্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো। মহামারীর মধ্যেও সব ধারণা ভুল প্রমাণ করে রেমিটেন্সে একের পর এক রেকর্ড বাংলাদেশের রিজার্ভকেও নিয়েছে অনন্য উচ্চতায়।