শ্রীনগর উপজেলার শ্যামসিদ্ধি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডে রেকর্ডকৃত সরকারি একটি রাস্তার প্রায় ২০০ ফুট জায়গা দখল করে পাকা ভবন ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে টিনের বেড়া দিয়ে রাখায় এলাকাবাসী বিক্ষোভ করেছে। গত ২৫ বছর যাবত শ্যামসিদ্ধি এলাকার কয়কীর্ত্তণের বটতলা গ্রামের বাসিন্দা শ্রীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মামুনের শশুর প্রভাবশালী মো. খলিলুর রহমান গংরা সরকারি রাস্তার প্রায় ২০০ ফুট রাস্তা দখল করে রাখায় জনমতে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও নিচু রাস্তাটিসহ বালুভরাট করে টিনের বেড়া দিয়ে রাখায় মানুষের চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। এলাকাবাসী রাস্তা নির্ধারনের লক্ষে আমিন দিয়ে মাপঝোক করে খুটি দিতে গেলে দখলকারীরা বাঁধা প্রদান করে ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে খলিলুর রহমানের পুত্র মো. রানা। এতে করে ক্ষোভে এলাকার শতশত নারী পুরুষ রাস্তায় নেমে আসে। খবর পেয়ে শ্রীনগর থানার এসআই আশিক সংঙ্গীয় সংঙ্গীয় পুলিশ সদস্য নিয়ে ঘটনা স্থলে আসেন। এ সময় পুলিশের উপস্থিতিতে এলাকাবাসীকে রাস্তার দাবিতে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাস্তা দখল করে রাখার বিষয়ে গত ১৬/১৭ তারিখে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর আগে একই গ্রামের মো. শাহিনসহ অনেকেই রাস্তার বিষয়ে প্রতিবাদ করলে আওয়ামী লীগ নেতার শেলক রানা শাহিনকে মোবাইল ফোনে হুমকি প্রদান করে। পরে রানার বন্ধু টুটুল ৬/৭ জনের একটি গ্রুপ শাহিনের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিয়ে আসে বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় ভূক্তভোগী শ্রীনগর থানায় সাধারণ ডায়েরী দায়ের করার পাশাপাশি শ্রীনগরের ইউএনও বরাবর লিখিত আবেদন করেন। এর পরেও রাস্তা সংক্রান্ত বিষয়ে কোন সমাধান আসেনি। বরং আওয়ামী লীগ নেতার প্রভাব খাটিয়ে রাস্তাসহ টিনের বেড়া দিয়ে রাখা হয়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, শ্রীনগর-দোহার সড়কের শ্যামসিদ্ধি এলাকার বটতলার আওয়ামী লীগ নেতার ওই বাড়ি থেকে শ্যামসিদ্ধির দেওয়ান বাড়ি পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার রেকর্ডকৃত নিচু রাস্তাটি বছরের প্রায় ৫ মাস পানিতে ডুবে থাকে। কোথাও কোথাও এখনও বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করছেন তারা। সরকারি বরদ্দ আসলেও রাস্তাটির দখল না ছাড়ার কারণে রাস্তা নির্মান করা সম্ভব হচ্ছেনা। এছাড়াও মুল রাস্তা দখল করে বালুভরাট ও টিনের বেড়া দিয়ে রাখা হয়েছে। রাস্তা নির্ধারণ করার লক্ষে মাপের পর সীমানা খুটি দিতে গেলে ওই নেতা লোকজন মারমুখী হয়ে উঠে। পরিস্থিতির শিকার এতে করে এলাকার শতশত নারী পুরুষ প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নেমে আসে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সূত্রেও রাস্তাটি নির্মাণে বরাদ্দ আসার বিষয়ে সত্যতা মিলে।
আওয়ামী লীগ নেতা শফিকুল ইসলাম মামুনের শশুর খলিলুর রহমান বলেন, আমরা তো রাস্তা দিতে চাচ্ছি তারা মানছেনা। সরকারি রেকর্ডকৃত রাস্তার অংশ দখল করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হা আছে। তবে আমরা তো আমাদের অন্য জায়গা দিয়ে রাস্তা দিতে চাচ্ছি।
ওই এলাকার বাসিন্দা শাজাহান শেখ বলেন, তারা যে পুকুর পাড় দেখিয়ে রাস্তা দেওয়ার কথা বলছেন, এটার মালিক কি তারা? তিনি দাবী করে বলেন, আমিসহ আজিম খান, ফারুক খান, তোরপ শেখ, শাজাহান শেখ, স্বপন গংরা এই পুকুরের মালিক। আমরা তো এটা মেনে নিবনা। দুই দিন পরে কোন কারণে মালিকরা যদি পুকুর পাড়টি আকটিয়ে দেয় তাহলে মানুষ কিভাবে চলাচল করবে। রেকর্ডের সরকারি রাস্তা তারা প্রভাব খাটিয়ে দখল করে রাখছে, এটা কে না জানে?
একালাবাসী বলেন, আওয়ামী লীগ নেতার প্রভাবে তার শশুর খলিলুর রহমান, চাচা শশুর নুর ইসলাম ও শেলক রানা ভাড়াটিয়া লোকজন এখানে এনে ভয়ভীতি দেখানোর পাশাপশি হামলার চেষ্টা চালায়। তাদের এমন আচরণে এলাকার শতশত নারী পুরুষ রাস্তায় নেমে আসতে বাধ্য হয়। আমরা রাস্তাটি দখলমুক্ত করার লক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
মো. রানার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি হামলা করতে যাইনি। আমর ওপর দোষ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শ্রীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলামমামুনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের দখলে রাস্তা থাকলে মেপে ছেড়ে দেবো। কোন রকম ঝামেলা হবেনা।
এ ব্যাপারে শ্রীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হেদায়াতুল ইসলাম ভূঞা জানান, দুই পক্ষের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছিল। অতিরিক্ত পুলিশ পাঠিয়ে মারমুখী দুই পক্ষকেই শান্ত থাকতে বলা হয়েছে। তাদেরকে বলা হয়েছে দ্রুত রাস্তা সংক্রান্ত বিষয়ে সমাধান করতে।