প্রাচীনকালে যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্যদের লড়াইয়ে তলোয়ারই ছিল প্রধান অস্ত্র। কালের বিবর্তনে আধুনিক সমাজে এই অস্ত্রের ব্যবহার এখন অতীত ইতিহাস। তবে যুদ্ধের ময়দান থেকে বিদায় নিলেও আধুনিক যুগে তলোয়ার খেলা বা ফেন্সিং বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। অন্যতম এই খেলাটি স্থান করে নিয়েছে অলিম্পিকেও। ফেন্সিং খেলার উৎপত্তি হয় স্পেনে। আধুনিক ফেন্সিং ১৮শ শতাব্দীর দিকে ইতালিতে সর্বপ্রথম শুরু হয়। পরে ফ্রান্সেও ছড়িয়ে পড়ে খেলাটি। ফরাসিরা পর্যায়ক্রমে ফেন্সিংকে আরও উন্নত ও আধুনিক করে তোলে।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৮৯৬ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে স্থান পায় ফেন্সিং। বাংলাদেশে ফেন্সিং খেলার গোড়াপত্তন হয় ২০০৭ সালে। আমাদের দেশে অপ্রচলিত এই খেলাটি এখনো অনেকের কাছেই অজানা। ফেন্সিং খেলাকে ঘিরে গড়ে ওঠা দলগুলিও ঢাকাকেন্দ্রিক। নতুন খেলাটিকে ঢাকার বাইরে উত্তর জনপদে ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর। এই প্রচেষ্টার সবচেয়ে বড় অংশীদার বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও। তাঁর একান্ত প্রচেষ্টা ও দিক নির্দেশনায় ২০১৮ সালে গড়ে তোলা হয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ফেন্সিং ক্লাব। শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের জন্য অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ ও ফেন্সিং এ দক্ষ করে তুলতে কেনা হয়েছে এই খেলার প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সরঞ্জাম। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইভেন্টে অংশ নেয়া অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের নিবিড় তত্ত্বাবধানে প্রায় অর্ধশত ছাত্র ও ছাত্রী নিয়মিত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে প্রশিক্ষণও থেমে যায় বেরোবি ফেন্সিং ক্লাবের খেলোয়াড়দের। স্বল্প সময়ের অনুশীলনকে পুঁজি করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ সদস্যের ফেন্সিং টিম দীর্ঘ বিরতির পর প্রথমবারের মতো জাতীয় পর্যায়ের বড় ইভেন্ট গত ২২ ডিসেম্বর থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু ৬ষ্ঠ প্রেসিডেন্ট কাপ ফেন্সিং চ্যাম্পিয়নশীপ-২০২০ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে।
বাংলাদেশ ফেন্সিং এসোসিয়েশনের আয়োজনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি), রংপুর, বাংলাদেশ আনসার, বেঙ্গল স্পোর্টস একাডেমি ও মিরপুর ফেন্সিং ক্লাব মোট ৬টি দল টুর্নামেন্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। ঢাকার মিরপুুর সোহরাওয়ার্দি ইনডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই টুর্নামেন্টে নারী ও পুরুষ উভয় ক্যাটাগরিতে ব্রোঞ্জ পদক লাভ করে বেরোবি ফেন্সিং টিম।
টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের শুরু থেকে স্টেডিয়ামে সশরীরে উপস্থিত থেকে খেলোয়াড়দের নিরন্তর উৎসাহ জুগিয়েছেন ক্রীড়াপ্রেমী বেরোবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মেজর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ, বিএনসিসিও।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “দেশের সকল পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ ফেন্সিং ফেডারেশন হতে ফেন্সিং ক্লাবের অনুমোদন প্রাপ্ত একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্বল্প সময়ের মধ্যেই জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করে দুটি ইভেন্টে পুরস্কার অর্জন করেছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি বড় অর্জন। এজন্য আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই বেরোবি ফেন্সিং টিমসহ সংশ্লিষ্টদের, যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে এই অর্জন এসেছে। আমি আশাকরি ভবিষ্যতে বেরোবি’র ফেন্সিং টিম এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আরো বেশি সাফল্য লাভ করবে।”
প্রথমবারের মতো জাতীয় পর্যায়ের ‘বঙ্গবন্ধু ৬ষ্ঠ প্রেসিডেন্ট কাপ ফেন্সিং চ্যাম্পিয়নশীপ-২০২০’ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া বেরোবি ফেন্সিং টিমের সদস্য আল মামুন জানান, বিদ্যা অর্জনের পাশাপাশি খেলাধুলার মাধ্যমে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারাটা খুবই আনন্দের। ফেন্সিং টিমের এই অর্জনের জন্য আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই আমাদের মাননীয় উপাচার্য স্যারকে। যাঁর সহযোগিতা ও নির্দেশনায় আমাদের এই অর্জন সম্ভব হয়েছে।”
আরেক সদস্য নিশাত তাবাসসুম নিশি বলেন, “করোনা মহামারির কারণে তাদের ফেন্সিং প্রশিক্ষণ বেশ কয়েক মাস বন্ধ ছিল। পূর্বের প্রশিক্ষণ অভিজ্ঞতা এবং পরবর্তীতে এই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের আগে অল্প কিছুদিন নিবিড় অনুশীলন কাজে লেগেছে।”
বেরোবি ফেন্সিং খেলোয়াড় মিতু রায় বলেন, ‘দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ফেন্সিং খেলায় অগ্রগামী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়ে কিছুটা ভয় ও জড়তা কাজ করছিল। তবে প্রথমদিনের খেলার পর সেই ভয় ও জড়তা কেটে গেছে। এই টুর্নামেন্ট আগামীতে জাতীয় পর্যায়ের ফেন্সিং প্রতিযোগিতায় আরো ভালো ফলাফল করার আত্মবিশ্বাস যোগাবে।”
বঙ্গবন্ধু ৬ষ্ঠ প্রেসিডেন্ট কাপ ফেন্সিং চ্যাম্পিয়নশীপ-২০২০ টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী বেরোবি’র ফেন্সিং টিমের সার্বিক তত্বাবধায়নের ছিলেন শারীরিক শিক্ষা বিভাগের পরিচালক মোঃ মাসুদ-উল-হাসান, ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর মোছাঃ ইরিনা নাহার ও মোঃ সোহেল রানা। ফেন্সিং টিমের শিক্ষার্থীরা হলেন- ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের নিশাত তাবাস্সুম, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শারমিন শিলা, জান্নাতুল ফেরদৌস, অর্থনীতি বিভাগের শাম্মি ইসলাম, জেন্ডার এন্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের মিতু রায়, শোহানুর রহমান, ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের মাহমুদ কাইসার, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মোঃ সম্্রাট আলী, আল মামুন, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মীম আক্তার এবং ইতিহাস ও প্রতœতত্ত্ব বিভাগের রাসেল আল মামুন।