প্রকাশ: সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০:২২ এএম আপডেট: ২৮.১২.২০২০ ১২:৪০ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
আমনের ভরা মৌসুমে বাজারে চালের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক। গতকাল রোববার ঢাকার কেআইবি মিলনায়তনে এক কর্মশালায় তিনি জানিয়েছেন, ‘চালের দাম কেন এত বাড়বে, তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। এই দাম বাড়ার পেছনে আসলে কোথাও একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট কাজ করছে। যারা দেশে উৎপাদিত পর্যাপ্ত চাল মজুদ করে কৃত্তিম সংকট তৈরি করছে। কৃষিমন্ত্রী জানান, বাজারে ১-২ টাকা বাড়াও কিন্তু অনেক বড় বিষয়। সেখানে ৩২-৩৩ টাকার মোটা চাল ৪৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কারণগুলো কি? কৃষিমন্ত্রী বলেন, চলতি বছর দুই দফা বন্যার কারণে আউশ ও আমন ফলনের কিছু ক্ষতি হয়েছে। তবে উৎপাদনের যে পরিসংখ্যান সরকারের হাতে আছে, তাতে চালের এত ঘাটতি হওয়ার কথা নয়। অথচ আজকে সরকারের ঘরে চাল নেই। আমাদের চাল আমদানি করতে হচ্ছে। কখনও তাও আমদানি করতে পারি না। কিছু ভুলভ্রান্তি আমাদের আছে। কিন্তু চালের দাম কেন এত বাড়বে? নিশ্চই এর পেছনে গভীর ব্যবসায়িক দূরবিসন্ধি আছে। যারা চাল মজুদ করে দেশে চালের দাম বাজারে চড়া করছে।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) গবেষণা হিসেব বলছে, পরপর চার দফা বন্যায় এবার ধান উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাতে ১৫ লাখ মেট্রিক টন চাল কম উৎপাদন হতে পারে। কিন্তু তারপরও যে পরিমাণ চাল উৎপাদন হবে, তা দিয়ে আগামী জুন পর্যন্ত চাহিদা মিটিয়েও কমপক্ষে ৩০ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকার কথা। এখন আমনের ভরা মৌসুম চললেও ধান ও চাল-দু’টোরই দাম গত বছরের তুলনায় বেশি। সরকারের ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে নাজিরশাইল ও মিনিকেটের দাম বেড়েছে ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ। আর ইরি বা স্বর্ণার মত মোটা চালের দাম ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেড়েছে। মাঝারি মানের চাল পাইজাম বা লতার দাম বেড়েছে ১৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ২৩ ডিসেম্বরের যে তথ্য দেওয়া আছে, তাতে সরকারি গুদামগুলোতে মোট ৭ দশমিক ৪৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ আছে। এর মধ্যে চাল ৫ দশমিক ৪২ লাখ মেট্রিক টন এবং গম ২ দশমিক ৪ লাখ মেট্রিক টন। চালের মজুদের এই পরিমাণ গত বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। এ পরিস্থিতিতে চাল আমদানিতে জোর দিচ্ছে সরকার। এ মাসেই ভারত থেকে আরও ৫০ হাজার টন সেদ্ধ চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এতদিন চাল আমদানিতে ৬২ দশমিক ৫ শতাংশের মত শুল্ক দিতে হতো। তা কমিয়ে ২৫ শতাংশ করার কথা রোববারই জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের আয়োজনে ‘উন্নত মানের ডাল, তেল ও মসলা বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের (তৃতীয় পর্যায়- প্রথম সংশোধিত)’ কর্মশালায় কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমাদের পেঁয়াজ বীজের ক্রাইসিস রয়েছে। দুই বিলিয়ন ডলারের ভোজ্য তেল আমাদের আমদানি করতে হয়। এ নিয়ে ভাবতে হবে। দেশে মুগডাল উৎপাদনের ‘ভালো সম্ভাবনা’ রয়েছে জানিয়ে ডাল, তেল, মসলার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ আরও বাড়ানো দরকার। তাহলে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম না বেড়ে চাহিদার বেশি যোগান থাকলে দাম আরও কমবে। যেমন আপনারা দেখছেন শীতের শাক-সবজি।