ক্ষমতার চেয়ার আর কারাগার খুব পাশাপাশি থাকে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। গতকাল রোববার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে কেরানীগঞ্জে মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার উদ্বোধনকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। একই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্মিত ২০টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, বিভিন্ন জেলা সদরে নির্মিত ৬টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, একটি এলপিজি স্টেশন এবং বিমানের নতুন একটি উড়োজাহাজ ড্যাশ ৮-৪০০ ধ্রুবতারা’র উদ্বোধন করেন। মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার উদ্বোধনের সময় দেওয়া বক্তব্যে এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নিজের কারাবন্দি হওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যারা রাজনীতি করি, আমাদের ক্ষমতার চেয়ার ও কারাগার খুব পাশাপাশি থাকে। যেটা খুবই স্বাভাবিক। ২০০৭ এ যেটা হয়েছে, ক্ষমতা ছাড়াও কিন্তু সবার আগে আমাকেই গ্রেফতার করা হয়েছিল। কাজেই সেটা আমরা জানি, রাজনীতি করতে গেলে এটা হবে।
সংগ্রামী জীবনে বঙ্গবন্ধুর বারবার জেল খাটার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু অপরাধ করলেই যে জেলে যায় তা না। এর মধ্যে ১৯৪৮ সালে যখন আমাদের মাতৃভাষা বাংলার অধিকার কেড়ে নিয়েছিল, তখন জাতির পিতা যে প্রতিবাদ করেছিলেন, সে প্রতিবাদের কারণে যে কারাগারে যেতে শুরু করেন। তারপর তার জীবনের অনেকটা সময় কারাগারে কাটাতে হয়েছে অত্যন্ত মানবেতরভাবে। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে কারাগারে যাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, কারাগারের সঙ্গে সব সময় আমাদের একটা সম্পর্ক আছে। ছোটবেলা থেকেই কারাগারে যাই, সেখানকার ভালো-মন্দ অনেক কিছু জানারও সুযোগ হয়। জাতির পিতা কারাগারের রোজনামচা ও অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়লে কারাগার সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবেন। কারাগারকে সংশোধনাগার হিসেবে গড়ে তুলতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য হলো কারাগারে শুধু অপরাধীদের বন্দি করে রাখা নয়, সঙ্গে সঙ্গে তাদের মন মানসিকতা পরিবর্তন করা, তাদের কিছু প্রশিক্ষণ দেওয়া, তাদের কিছু শিক্ষা দেওয়া এবং যাতে তারা বের হয়ে ভবিষ্যতে একই অপরাধে জড়িয়ে না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা কারাগারে এই ব্যবস্থা নিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, কারাগারে যারা গ্রেফতার হয়ে যায়, স্বাভাবিক কেউ গ্রেফতার হলে তাদের পরিবারগুলো কষ্ট পায়। অপরাধ করে অপরাধী। কিন্তু তারপরেও তাদের পরিবারগুলো কষ্ট পায়। এতগুলো বেকার বসে থাকবে কেন? সেই জন্য সেখানে তাদের ট্রেনিং করানো, তাদের কিছু পণ্য উৎপাদন করা, সেই সঙ্গে উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। বলেন, ‘বাজারজাত করার ফলে যে টাকাটা আসবে খরচ রেখে (লাভের) ৫০ শতাংশ যে উৎপাদন করবে সে পাবে। সে তা নিজে জমাও করতে পারবে, কিছু অংশ পরিবারকেও পাঠাতে পারবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কারাগারে কতগুলো পরিবর্তন এনেছি। আমাদের কারারক্ষীদের কোনো ট্রেনিং ছিল না, তাদের নিরাপত্তারও কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এমন কী তাদের থাকারও ভালো ব্যবস্থা ছিল না। নতুন কারাগারে সেই ব্যবস্থাগুলো নেওয়া হয়েছে। আমরা কারাগারগুলোর উন্নতি করে যাচ্ছি। শেখ হাসিনা বলেন, কারাগারে যারা যাবে রাজবন্দি বাদে, যারা কোনো অপরাধ করে যায়, তাদের ট্রেনিং দিয়ে তারা যাতে যথাযথ মানুষ হয় সেভাবে আমরা ছেড়ে দেবো। জেলা কারাগারগুলোতে ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করতে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, কেরানীগঞ্জের কারাগারেও ইতোমধ্যে কোর্টরুম তৈরি করা হয়েছে। এভাবে জেলা কারাগারগুলোতেও কোর্টরুম চালু করে ভার্চুয়াল কোর্ট যাতে হয় সেভাবে অনলাইনের মাধ্যমে মামলাও পরিচালিত হবে। সেভাবে আমরা একটা ব্যবস্থা নিচ্ছি। অর্থাৎ আধুনিক পদ্ধতিতে নেওয়া। যেহেতু ডিজিটাল বাংলাদেশ, এখন করোনার সময় কোর্ট চালানো মুশকিল। আমরা ভার্চুয়াল কোর্টের ব্যবস্থা করেছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকটা আইন সব কিছুই ডিজিটালাইজ করে ফেলা হচ্ছে। যে কোনো মামলার কজ লিস্ট যেটা থাকবে সেটাও অনলাইনে জানা যাবে। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সব কাজগুলো যেন আরও সুন্দরভাবে সুষ্ঠুভাবে হয়, সেই ব্যবস্থাটা আমরা নিচ্ছি। মামলার রায় বাংলায় ছাপাতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, মামলার রায় ইংরেজিতে বের হয়, সেটাকে বাংলা করে ছাপানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
কেরানীগঞ্জে একটি এলপিজি স্টেশনও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এলপিজি স্টেশন থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়। ফলে এখন থেকে আর কাঠ পুড়িয়ে রান্না করতে হবে না। এলপিজি গ্যাসে রান্না হবে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত ড্যাশ ৮-৪০০ মডেলের নতুন প্লেন ধ্রুবতারার উদ্বোধন করেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে নবনির্মিত ২০টি ফায়ার স্টেশন, জেলা সদরে নবনির্মিত ৬টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসও উদ্বোধন করেন তিনি। বিমানের নতুন উড়োজাহাজ ড্যাশ ৮-৪০০ ধ্রুবতারা’র উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাঁর সরকার উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আঞ্চলিক পর্যায়ে একটি সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায়। বলেন, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা আমাদের পার্শবর্তী দেশগুলোর সঙ্গে একটি সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সেই সব বিমান ক্রয় করছি যেগুলো সব থেকে আধুনিক এবং উন্নতমানের। আর আজকে যে বিমানটি উদ্বোধন করতে যাচ্ছি তার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের পাশাপাশি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গেও আমরা যোগাযোগ বৃদ্ধিতে সক্ষম হব।’
বাংলাদেশের চমৎকার ভৌগলিক অবস্থানের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আমরা যদি আমাদের আশপাশের দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং যোগাযোগ বাড়াতে পারি তাহলে সবদিক থেকেই আমাদের উন্নতি হতে পারে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা ইতোমধ্যেই অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছি। যার অংশ হিসেবে আজ এই নতুন উড়োজাহাজ ড্যাশ ৮-৪০০ এর উদ্বোধন করছি।’ নতুন বিমানটির নাম তিনি ‘ধ্রুবতারা’ রেখেছেন এবং নতুন আনা বিমানগুলোর নামকরণ দেশের প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তিনিই করেছেন, যে কাজে তাঁকে ছোট বোন শেখ রেহানা সহযোগিতা করেছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। যেগুলোর মধ্যে রয়েছে- পালকি, অরুণ আলো, আকাশ প্রদীপ, রাঙ্গা প্রভাত, মেঘদূত, ময়ুরপঙ্খী, আকাশবীনা, হংস বলাকা, গাঙ্গচিল, রাজ হংস, অচিনপাখি, সোনারতরি। আর আজ যেটা উদ্বোধন করতে যাচ্ছি সেটা ধ্রুবতারা, বলেন তিনি।
‘ধ্রুবতারা’ আমাদেরকে দিক নির্দেশনা দেয় উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করতে যাচ্ছি আর ২০২১ সালে আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপিত হবে। কাজেই, এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই ধ্রুবতারা নামটি পছন্দ করেছি। নামগুলোর পছন্দ করায় আমাকে সহযোগিতা করেছেন আমার ছোট বোন শেখ রেহানা।’ করোনাভাইরাস এসে আমাদের সবকিছু ওলটপালট করে দিয়েছে, সব কর্মকান্ডকে স্থবির করে দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সকলের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখতে আমরা বাধ্য হচ্ছি। এটা শুধু বাংলাদেশের নয় সমগ্র বিশ^ব্যাপীই এই সমস্যাটা হচ্ছে। তিনি এ সময় নতুন বিমান আনায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ বিমানের পদক্ষেপকে ‘অত্যন্ত সাহসী’ আখ্যায়িত করে সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সদস্যগণ, সচিব এবং বাংলাদেশ বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং ঊর্ধ্বতন সামরিক এবং বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ এ সময় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে সংযুক্ত ছিলেন।
গণভবণ থেকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে সম্পৃক্ত হয়ে বক্তৃতা করেন। সেখানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সদস্যবৃন্দ, মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের সচিব, বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানগণ এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালে একটি স্বাধীন দেশের উপযোগী করে সকল প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার যে উদ্যোগ জাতির পিতার নিয়েছিলেন তা যদি পরবর্তী সরকারগুলো অনুসরণ করতো তাহলেও দেশ অনেক দূর এগোতে পারতো। কিন্তু দুর্ভাগ্য তা হয়নি। অবশ্য ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ যখন আবার ক্ষমতায় আসে তার পরেই এদেশে উন্নয়নের যাত্রা আবার শুরু হয়। এ সময় দেশে নতুন নতুন বিমানবন্দর প্রতিষ্ঠা এবং পুরাতন বিমান বন্দরগুলোর আধুনিকায়নসহ হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নতুন টার্মিনাল, কার্গো টার্মিনাল এবং বোর্ডিং ব্রিজ করা থেকে শুরু করে সরকারের চার মেয়াদে বিমানকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে চলাচলের উপযোগী করে তোলায় সরকারের পদক্ষেপ সমূহের উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, এখন বিমানবন্দরগুলোকে আরো উন্নত করা হচ্ছে, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনালও নির্মাণ হচ্ছে, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের করা হচ্ছে, সৈয়দপুর এবং সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরকে আরো উন্নত করা হচ্ছে। দ্বিতীয়বার ২০০৯ সালে দায়িত্ব নিয়েই আওয়ামী লীগ সরকার দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে যোগাযোগ বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যখন কোন দেশে আমাদের প্লেন নামে তখন আমাদের প্লেনটি দেশের একটি বার্তা নিয়েই সেখানে যায়। সমগ্র দেশের পরিচয় ঘটে এর মাধ্যমে। আর জাতির পিতা বিমানের লোগো করা থেকে শুরু করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সৃষ্টি করে সে কাজের গোড়াপত্তন করে যান।’ বর্তমান সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পুরাতন জবুথবু অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বিমান বহরে এখন বিমানের সংখ্যা ১৯টি উন্নীত হয়েছে, স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।
বিমানের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জানায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে সদ্য যুক্ত হওয়া সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত সম্পূর্ণ নতুন ১ম ড্যাশ ৮-৪০০ এয়ার ক্রাফট হচ্ছে এই ধ্রুবতারা। বাংলাদেশ ও কানাডা সরকারের মধ্যে জি-টু-জি ভিত্তিতে ক্রয়কৃত ৩টি ড্যাশ ৮-৪০০ উড়োজাহাজের মধ্যে ১মটি এটি। কানাডার প্রখ্যাত উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডি হ্যাভিল্যান্ড নির্মিত, ৭৪ আসন বিশিষ্ট ড্যাশ ৮-৪০০ উড়োজাহাজটি পরিবেশবান্ধব এবং অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সমৃদ্ধ। নতুন উড়োজাহাজটি সংযোজিত হওয়ায় বিমান বহরে বিদ্যমান মোট উড়োজাহাজের সংখ্যা ১৯টি, তন্মধ্যে মধ্যে ৪টি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর, ৪টি বোয়িং ৭৮৭-৮, ২টি বোয়িং ৭৮৭-৯, ৬টি বোয়িং ৭৩৭ এবং ৩টি ড্যাশ ৮-৪০০ উড়োজাহাজ।