#ঘুরে দাঁড়িয়েছে শুধু অর্থনীতি না, ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশও: এ্যাড. শ. ম রেজাউল করিম।
#প্রবাসীদের মেইড ইন বাংলাদেশ পণ্যকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত: ফারুক হাসান।
#গত ১০ বছরে বাংলাদেশের রুপ অনেক পাল্টে গিয়েছে: আব্দুল্লাহ আল নোমান শামীম।
করোনা মহামারিতেও ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি। প্রধানমন্ত্রীর দুঃসাহসী কিছু সিদ্ধান্ত অর্থনীতিতে বাজে প্রভাব থেকে মুক্ত রেখেছে বাংলাদেশকে। প্রধানমন্ত্রীর সাহসী সিদ্ধান্তে ঝুঁকি নিয়ে কারখানা খোলায় ইতিবাচক ফলও এটা। সকল মহল থেকে বারবার বলা হচ্ছিলো যেন দেশ পূর্ণ লকডাউনে যায়। সরকারের ইচ্ছায় লকডাউনে শিথিলতা ছিল। গার্মেন্টস, কলকারখানা সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার কথা বলছিলাম আমরা। দেশে পরিবহন চালু না রাখার কথাও বলা হচ্ছিলো। ভীতিকর পরিস্থিতিতে সারা বিশ্ব যখন লকডাউনে তখন আমাদের গার্মেন্টস, কলকারখানা চলেছে, পরিবহনও চালু করা হয়েছে। যার সুফল এখন আমরা পাচ্ছি।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ২০১তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। রবিবার (২৭ ডিসেম্বর) আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক আইন সম্পাদক এ্যাড. শ. ম রেজাউল করিম, জায়ান্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিজিএমইএ এর সাবেক সহ-সভাপতি ফারুক হাসান, অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক, মাসিক মুক্তমঞ্চের নির্বাহী সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান শামীম। দৈনিক ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
এ্যাড. শ. ম রেজাউল করিম বলেন, ঘুরে দাঁড়িয়েছে শুধু অর্থনীতি না, ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশও এবং এর জাদুকারি নেতৃত্ব দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তাকে নিয়ে একটি প্রবাদের মত কথা হয়ে গেছে এমন যে, তিনি জেগে থাকেন গোটা জাতিকে নিয়ে সেজন্য বোধয় নির্বিঘ্নে গোটা বাংলাদেশে মানুষ ঘুমিয়ে থাকে। তাদের দারিদ্রতা স্পর্শ করতে পারেনা, তাদেরকে অন্য কোন সমস্যা বিপর্যস্ত করতে পারেনা। একটা মানুষও কোথাও না খেয়ে মারা যায়না, বিবস্ত্র অবস্থায় কেউ থাকেনা, দেশের উন্নয়নের কোন গতি কোথাও নূন্যতমভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়নি। আমি একটা জরিপ জানাতে চাচ্ছি, যুক্তরাষ্ট্রে এক কোটি ৪০ লক্ষ কর্মহীন লোকের ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আজকের ইত্তেফাকে প্রথম পাতার সংবাদ এটা। আর ছোট্ট একটি দেশ বাংলাদেশ, যে কিনা যুক্তরাষ্ট্রের মত এতো নামি দামি একটি দেশ না। এই বাংলাদেশে যারা ভাতা পেতেন তাদের কারো তো ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়নি বটেই, বরংচ যারা ভাতা পেতেন না তাদের কেও এই করোনা কালীন সময়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা লক্ষ লক্ষ মানুষকে ভাতা দিয়েছেন। পুরো রিভার্স চিত্র। আমেরিকায় যাদেরকে ভাতা দেওয়া হতো তাদেরকে ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, আর বাংলাদেশে যাদেরকে দেওয়া হতো না তাদেরকেও এই করোনা কালীন সময়ে ভাতা দেওয়া হয়েছে। এটাই হচ্ছে শেখ হাসিনার জাদুকরী নেতৃত্ব। করোনার সময়ে অন্যান্য দেশের অর্থনৈতিক চাকা যেখানে থেমে যাচ্ছে সেখানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চাকা শুধু গতিময় নয়, উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় অপ্রতিরোধ্য ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। আমি আরও একটা তথ্য জানাতে চাচ্ছি যে, এই করোনার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত এই কেবিনেটের কোনও মিটিং বন্ধ হয়নি, একনেকের কোনও মিটিং বন্ধ হয়নি, ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের মিটিং বন্ধ হয়নি। আজকে এই করোনার মধ্যেও কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের কোন বড় মেগা প্রকল্পের কাজ থেমে থাকেনি যার প্রমাণ হচ্ছে আজ আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সফল বাস্তবায়ন। পদ্মা সেতু এখন আমাদের আত্ন মর্যাদার, সক্ষমতার পরিচায়ক হিসাবে পরিচিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের এমন কোনো খরস্রোতা নদীতে এত বড় সেতু হয়নি। এক সময় পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় যেসব পত্রিকা সমালোচনা করেছিল, তারা এখন তারা পদ্মা সেতু নিয়ে ভালো কথা বলছেন।
ফারুক হাসান বলেন, আমি প্রথমেই ভোরের পাতাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি আজকের এই টপিকে সংলাপ করার জন্য আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য। আজ থেকে ১০-১১ বছর আগে আমাদের রপ্তানি পরিমাণ ছিল ১১ বিলিয়নের বেশি। কিন্তু ২০১৮-১৯ দিকে এসে আমরা এর পরিমাণ ৩৪ বিলিয়নে নিয়ে গিয়েছি। করোনার সময় আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একক সাহসের কারণে যখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলো খুলে দেওয়া হলো এবং এই কারণেই আমাদের এখন অর্থনীতিতে পজিটিভ গ্রোথ আছে যেখানে সারা বিশ্বের বেশীরভাগ দেশই নেগেটিভ গ্রোথে আছে। উনার এই সাহসী পদক্ষেপের কারণেই আমরা আমাদের গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন দিতে পেরেছি ও একইভাবে রপ্তানি দিক সামঞ্জস্যতা বজায় রেখে আমরা রাজস্বতে অর্থায়ন করতে ভূমিকা রেখেছি। এখন যে সারা বিশ্বে করোনার যে দ্বিতীয় ওয়েব চলছে সেখানেও আমরা কিন্তু আমাদের সরকারের সাহায্যে এবং আমাদের মালিক ও শ্রমিকদের যে দারুণ কম্বিনেশন এখন আছে তাতে আমরা ভালো প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলে মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সি, উনার সাথে আমরা অনেক কাছাকাছি থেকেই তার ভূমিকা পাচ্ছি এবং সরকারের নীতি নির্ধারকদের কাছ থেকে আমরা সবসময় নানা রকম পরামর্শ ও সাথে সহযোগিতা পেয়ে আসছি। সারা বিশ্ব যখন করোনার ডামাডোলে তাল মাতাল হয়ে আছে সেখানে আমারা আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যে বেশ ভাল অবস্থানে আছি এবং অবশ্যই কিছু সমস্যা চলছে এইগুলো সমাধানে আমরা প্রতিনিয়ত আলোচনা করে যাচ্ছি। প্রবাসীরা আমদের রেমিটেন্সে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছে এবং সেই কারণে আমাদের রিজার্ভের পরিমাণ ৪২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১,০৩,০০০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা, রেকর্ড পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও রেমিট্যান্স প্রবাহের সঙ্গে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি অর্থনীতিকে সচল রেখেছে। আজকে এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে আমরা একটি অনুরোধ থাকবে যে, সারা বিশ্বে আমাদের বাংলাদেশী অনেকেই আছেন যারা এখন সেসব দেশে সিটিজেনশিপে অবস্থান করছেন বা পড়াশোনার জন্য গিয়েছেন বা শ্রমের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করছেন, তারা সবাই যদি সেখানে 'মেইড ইন বাংলাদেশ' এর পণ্য কিনে তাহলে আমাদের অর্থনীতিতে আরও ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে। আর আরেক দিক আমি বলতে চাচ্ছি শুধু রপ্তানি করলেই হবে না, আমাদের গ্রামীণ ইকোনমি বিষয়টাতে আমদের ভূমিকা রাখতে হবে। ২০২০ সালের আমাদের যে নেগেটিভ গ্রোথ হয়ে সেখানে যদি আমদের দেশের প্রোডাক্টকে সাপোর্ট দেই তাহলে আমদের এই জিনিসটা অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে।
আব্দুল্লাহ আল নোমান শামীম বলেন, তরুণ প্রজন্মের যে সংখ্যাটা এই মুহূর্তে বাংলাদেশে আছে, এদের মধ্যে যারা নেতৃত্ব পর্যায়ে এসে পড়েছে বা নেতৃত্ব দেওয়ার চেষ্টা করছে তাদের সাথে বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষের, প্রত্যেকটা সুশীল সমাজের মানুষের যে চিন্তা ভাবনা এটা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাইরে থেকে আমরা দেশের কাছ থেকে বা দেশের সরকারের কাছ থেকে তেমন একটা চাহিদা অনুভব করি না, আমরা যে জিনিসটা অনুভব করি সেটা হলো, আমরা যদি কিছুটা বাংলাদেশকে ফেরত দিতে পারি যেভাবে আমরা ছোট বেলায় ফ্রিতে পড়াশোনা করেছি, কম খরচে যোগাযোগ ব্যবস্থায় উপভোগ করেছি, সেটা থেকেই আমরা এখন দেশের জন্য কিছু প্রতিদান ফিরিয়ে দিতে চাচ্ছি। আমদের অবস্থা কিন্তু একেবারে শূন্যের কোঠায় ছিল, বেকারত্ব ছিল, শিক্ষার হার কম ছিল, তলাবিহীন ঝুড়ির অবস্থায় ছিলাম, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দিক থেকেও দুর্বল ছিলাম, দেশের মেগা প্রকল্প নিয়ে দেশীয় আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র ছিল। সেখানে ২০০৮ সালের আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ব্যবস্থা কায়েম করে একটি চ্যালেঞ্জ হাতে নিয়েছিল এবং দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনও ঘটানোর মত স্কোপ ছিল, যা এই সরকার প্রতিটা পদক্ষেপে তা বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন। জাপানের রাষ্ট্রদূত যে বলেছেন, আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে যাবে, আমি সম্মানের সাথে বলতে চাচ্ছি বাংলাদেশ গত ১০ বছরে অলরেডি চেঞ্জ হয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি করোনার প্রভাব কাটিয়ে উঠছে। স্বাস্থ্য ও করোনা ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক চাপ সত্ত্বেও অর্থনৈতিক প্রণোদনা, সামাজিক নিরাপত্তা, দরিদ্র ও ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের মৌলিক প্রয়োজনসহ খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দিয়ে সরকার দেশের অর্থনীতিকে ভালোভাবে সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে রফতানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা করোনা মোকাবিলা করে অর্থনীতিকে ভালো করতে সহযোগিতা করেছে। গত ১০ বছর আগে বাংলাদেশের যে একটা চেহারা ছিল আর আজকের বাংলাদেশের যে রুপ আছে তাতে আকাশ পাতাল ব্যবধান লক্ষ্য করা যাবে। এখন যদি বিরোধী দল ক্ষমতায় আসে তারা কি এই অর্থনীতির ধারাকে অব্যাহত রাখতে পারবে। তাদের আসলে ক্ষমতার বাইরে যে, শেখ হাসিনার চিন্তা ভাবনা কত দূর এগিয়ে গিয়েছে দেশকে নিয়ে। আজ বাংলাদেশের উন্নয়নের সাথে বাইরের দেশের মানুষরাও গর্ব করে। তারা আসলেই অনেক খুশি হয় আমাদের এই বাংলাদেশের চেহারা দেখে। বাংলাদেশে যে পদ্মা সেতুর মত প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে, আমার অস্ট্রেলিয়াতে ২২ বছর থাকাকালে এইরকম পরিকল্পনা আমি এভাবে দেখিনি। এটা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয় যেকোনো দেশের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল এটা, কিন্তু শেখ হাসিনার একক সাহসিকতা ও চ্যালেঞ্জমুখী পারদর্শিতার কারণে আজ আমরা নিজস্ব অর্থায়নে এই পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন করতে পেরেছি।