ছাত্রলীগের বেয়াদবখ্যাত নিশির ‘সাম্প্রদায়িক গালি’ অতপর ফাল্গুণী তন্বী হাসপাতালে...
বাংলাদেশ ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ ব্যাপকভাবে ঘটেছিল কমপক্ষে ৫ বছর আগে। এর জের এখনো টানতে হচ্ছে সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যসহ পুরো ছাত্রলীগকেই। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শিক ছাত্রলীগ যেন ম্রিয়মান হয়ে পরেছে। শিক্ষা, শান্তি, প্রগতির পতাকাবাহী ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ছাত্রলীগের সুনাম বারবার ভুলণ্ঠিত করেছে গুটি কয়েক অনুপ্রবেশকারী। যারা কখনোই পারিবারিকভাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক নন। বর্তমান ছাত্রলীগের অবস্থা নিয়ে শেখ হাসিনা মনোনীত দায়িত্বপ্রাপ্ত দুইজন জাতীয় নেতা ভোরের পাতাকে আক্ষেপ করেই বলেছেন এসব কথা।
ভোরের পাতার এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য যিনি ছাত্রলীগেরও শীর্ষ পদে ছিলেন তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ছাত্রলীগ আর সেই ছাত্রলীগ নেই। জয়-লেখককে অনেক স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে বসানো হয়েছিল। কিন্তু তারাও কথা রাখতে পারছেন না। কারণ সর্বশেষ যে ইস্যুটি গণমাধ্যমে এসেছে তা অত্যন্ত ন্যাংকারজনক এবং নিন্দনীয়। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক যার নাম বেনজীর হোসেন নিশি, তার নেতৃত্বে রাতের আঁধারে একই সংগঠনের জুনিয়র একজন কর্মীকে আঘাত করা হয়েছিল। শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করেছে। মোবাইল ছিনতাই করেছিল। এটা কখনোই বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনার আদর্শের ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মীর পক্ষে করা সম্ভব নয়। ভুল বোঝাবুজি হতেই পারে। এতবড় সংগঠনে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতাও থাকতে পারে। কিন্তু কেউ কারো গায়ে হাত তোলাটা অন্যায় এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ অবস্থায় অবশ্যই জয়-লেখকের উচিত ছিল, উভয় পক্ষকে সাথে নিয়ে বিষয়টি সমাধান করা। কিন্তু তারা এক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে বলেও মনে করেন আওয়ামী লীগের পরিক্ষিত এই নেতা।
তিনি আরো বলেন, গণমাধ্যম থেকে শুরু করে ছাত্রলীগের অধিকাংশ নেতাদের সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। যতটুকু শুনেছি, গোয়েন্দা সংস্থার হাতে ওই মারামারি ঘটনার ভিডিও ফুটেজও চলে গেছে। এই ফুটেজটি কোনোভাবে প্রকাশ করা হলে ছাত্রলীগের কলংকিত এক অধ্যায় সামনে আসবে। কেননা কতটা উগ্রতা নিয়ে আদর্শ বিসর্জন দিলেই একজন কর্মীকে বেনজির হোসেন নিশি এবং জিয়াসমিন শান্তা সাথে আরো দুটি ছেলেকে নিয়ে মারতে পারে? ঘটনার পাঁচদিন পরও কেন জয়-লেখক এখনো পর্যন্ত এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি করে শাস্তিমূলক সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে, সেটিও এখন খতিয়ে দেখার সময় এসেছে। বিষয়টি আমরা যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত আছি তারা সবাই মিলে ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তুলে ধরার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আজ কালের মধ্যেই বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে সবিস্তারে জানানো হবে।
একই সুরে কথা বলেছেন ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আরেকজন আওয়ামী লীগের জাতীয় নেতা। তিনিও বলেন, জয়-লেখকের বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনতে শুনতে আমরা বিরক্ত হচ্ছি। কর্মীরাই যেখানে সংগঠনের প্রাণশক্তি। সেখানে তাদের অবহেলা অথবা নিজেদের মধ্যে এই মারামারির ঘটনা সামাল দিতে না পারার ব্যর্থতা জয়-লেখকের সাংগঠনিক ব্যর্থতার পরিচয় বহন করে। বেনজির হোসেন নিশি-জিয়াসমিন শান্তা এবং ফাল্গুণী তন্বী সবাই যদি ছাত্রলীগের নেতাকর্মী হয়ে থাকে, তাহলে তাদের মধ্যে কোনো ভুলবোঝাবুঝি থাকলে সেটা সমাধান করতে হবে অবশ্যই জয়-লেখককেই। তারা এখনো পর্যন্ত সাংগঠনিকভাবে এ দায়িত্ব পালন করতে পারেনি বলেও মনে করেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে পুলিশ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের উপস্থিতিতেই ঢাবির রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও হল সংসদের এজিএস ফাল্গুণী দাস তন্বীর ওপর নির্মম অত্যাচার করে বেনজির হোসেন নিশি এবং জিয়াসমিন শান্তা। বেনজির হোসেন নিশি একজন প্রভাবশালী সংসদ সদস্যের কথিত ভাগনি পরিচয় দিয়ে ছাত্রলীগে দাপট দেখায়। এমনকি এ ঘটনায় তার কিছু হবে না বলেও ঘনিষ্ঠজনদের কাছে জানিয়েছেন। খুব অহংকার নিয়েই নাকি তার একজন ছাত্রলীগের বন্ধুকে বলেছেন, ‘ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির একজন শীর্ষ নেতা আমার কাছে ধরা আছেন। তিনি আমার একটা (প্রকাশ অযোগ্য) ছিঁড়তে পারবেন না।’ ভোরের পাতার এ প্রতিবেদকের কাছে ছাত্রলীগেরই একজন এ কথা স্বীকার করেছেন যিনি বেনজির হোসেন নিশির খুবই ঘনিষ্ঠবন্ধু হিসাবে পরিচিত।
এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযে কর্মরত একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা ভোরের পাতাকে নিশ্চিত করেছেন তারা ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন। তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সেটি পৌঁছেও দিয়েছেন। সেখানে দেখা গেছে, মারামারির আগে বঙ্গবন্ধু টাওয়ারের সামনে এসে দৌঁড়ে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেন ফাল্গুণী তন্বী। কিন্তু গেট বন্ধ থাকায় তাকে পেয়ে যায় নিশি এবং শান্তা। সেখানে মোবাইল ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হলে ফোনটি মাটিতে ফেলে দেন ফাল্গুণী। এরপর একটি ব্রিশী ভাষায় ‘সাম্প্রদায়িক গালি’ দিয়েই নিশি মারতে শুরু করেন। প্রায় ৪ মিনিট মার খাওয়ার পর পুলিশ সেখানে আসে। প্রক্টরিয়াল টিমও দূর থেকে বিষয়টি দেখেছে।’
এসব ঘটনার পর প্রথমে ফাল্গুণী তন্বীকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়, কিন্তু সেখান থেকে চিকিৎসা নিয়ে এখন তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং লেখক ভট্টচার্য অসুস্থ তন্বীকে দেখে আসার পর থেকেই তাকে হাসপাতাল থেকে জোরপূর্বক বের করে দেয়ার জন্য অদৃশ্য এক চাপ সৃষ্টি করছেন। এমনকি ফাল্গুণীর চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান কক্সবাজার চলে যান। সেখান থেকে ফোন করে তারাতারি হাসপাতাল ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা বলেন। রোগীকে রেখে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক মনিরুজ্জামান কক্সবাজার কেন গেলেন, আবার সেখান থেকে ফোন করে রোগীকে কেন জোরকরে বের করে দেয়ার জন্য ফোন করলেন, সে প্রশ্নের উত্তর জানার দাবিও করেছেন ফাল্গুণী তন্বীর বন্ধু এবং পরিবারের লোকজন। দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে বেনজির হোসেন নিশিকে সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দুপুরে কল দেয়া হয়েছিল। তখন তিনি নিজের অবস্থান ব্যাখা করার জন্য ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলেন প্রায় ৬ মিনিট। কিন্তু কেন ছাত্রলীগ নেত্রী হয়ে আরেকজন জুনিয়রকে শারিরীকভাবে আঘাত করা হলো, এই প্রশ্ন করার সাথে সাথেই ফোন কেটে দিয়েছেন। তবে তিনি এখন ছাত্রলীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের বলছেন, আমার কেউ কিছুই করতে পারবে না। আমি ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের চেয়েও পাওয়ারফুল। পারলে কিছু করে দেখাক। এই পাঁচদিনেও তারা এই বিষয়ে কিছুই করতে পারেনি। কারণ তারা আমার কিছুই করতে পারবে না।
অপরদিকে, ফাল্গুণী তন্বী এখনো ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ওপর বিশ্বাস রেখেছেন এবং বলেছেন, তারা অবশ্যই এই বিষয়টির বিচার করবেন। বিচার না পেলে অবশ্যই দেশের নাগরিক হিসাবে তিনি শারিরিকভাবে নির্যাতনের বিষয়ে মামলা করবেন।
আগামী পর্বে- ঢাবি সংগীত বিভাগের আতংকের নাম বেনজির নিশি!