প্রকাশ: রোববার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:৪০ পিএম আপডেট: ২৭.১২.২০২০ ১:০৯ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
আমনের ভরা মওসুমে রাজশাহীতে অস্থির হয়ে উঠেছে চালের বাজার। ৪০ টাকার চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজি দরে, ২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৪ টাকা দরে। এতে করে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে চালের দাম। রীতিমত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে যে একবার চালের দাম বাড়লে আর কমে না। চালের কোনো ধরনের ঘাটতি না থাকলেও দাম বাড়ায় বেকায়দায় পড়ছেন ক্রেতারা। চলতি মাসে দুই দফায় চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
ক্রেতা সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চেলে যাচ্ছে রাজশাহীর চালের বাজার। কিন্তু দাম নিয়ন্ত্রণে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। চালের আড়ৎদাররা বলছেন এবার ধানের দাম বেশি, যার কারণে চালের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষকরা বলছেন, ধানের দাম খুব একটা বেশি না। অন্যান্য বছরের মতই এ মওসুমে রয়েছে ধানের দাম। চালের দাম বাড়ার কারণ হিসাবে ক্রেতারা ব্যবসায়ীদের দায়ী করছেন। আর ব্যবসায়ীরা দায়ী করছেন চাতাল মালিকদের। এছাড়াও এবার মোটা ধানের উৎপাদন কম। বিরূপ আবহাওয়ার প্রভাবে বর্তমানে চাম বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও কোনো কোনো ব্যবসায়ী মন্তব্য করছেন। রোদ নাই, চাতালে ধান শুকাচ্ছে না। এতে চালের আমদানি কমে গেছে। একারণে বেড়েছে চালের দাম।
রাজশাহীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহ আগে যে চালের কেজি ছিল ৪০ টাকা ছিল, সেই চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা কেজি দরে। চিকন চাল কেজিতে দাম বাড়ানো হয়েছে প্রায় ৫ থেকে সাড়ে ৫ টাকা পর্যন্ত। আগে ২৮ চাল বিক্রি হতো ৫০ থেকে ৫১ টাকার মধ্যে। কিন্তু এখন সেই চাল এক লাফে উঠে গেছে ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে। মিনিকেট চাল ৫২ থেকে ৫৪ টাকার মধ্যে বিক্রি হলে এখন দাম বেড়ে উঠে গেছে ৫৬ থেকে ৫৭ টাকা কেজি দরে। বস্তা প্রতি প্রকার ভেদে চালের দাম বেড়েছে সাড়ে ৩শ’ টাকা থেকে চারশ টাকা। আবার রাজশাহী নগরীর একেকটি বাজারে একেক ধরনের দামে চাল বিক্রি হচ্ছে। পাইকারী বাজারে বস্তা প্রতি যে পরিমাণ চালের দাম বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি বেড়েছে খুচরা বাজারে। দেখা গেছে, ২৮ ধানের চাল পাইকারী বাজারে বিক্রি হচ্ছে বস্তা প্রতি ৪৫শ’ টাকা থেকে ৪৬শ’ টাকার মধ্যে, মিনিকেট ৪৮শ’ থেকে ৫ হাজার, মোটা চাল ৩৭শ’ থেকে ৩৮শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বর্তমান রাজশাহীর উপজেলা পর্যায়ে ধানের বাজার প্রতি মণ ২৮ধান বিক্রি হচ্ছে ১৪৫০ টাকা, মিনিকেট ১৫৫০টাকা থেকে ১৬শ’ টাকা, মোটা ধান সাড়ে ১২শ’ থেকে সাড়ে ১৩শ’ টাকা মণে ধান বিক্রি হচ্ছে। সেই হিসাবে চালের দাম এতোটা বৃদ্ধি পাওয়ার কথা না। কিন্তু মিলাররা ধান কিনে চাল করার পর বেশি দামে আড়ৎদারদের কাছে বিক্রি করছেন। এছাড়াও বাজার থেকে যে পরিমাণ ধান ক্রয় করা হচ্ছে সেই পরিমাণ চাল উৎপাদন হচ্ছে না। কারণ মিলাররা যে পরিমাণ ধান কিনছেন তার একাংশ মজুদ রেখে বাকিটা চাল করে আড়তে দিচ্ছেন। বর্তমান মওসুমে যে পরিমাণ ধান উৎপাদন হয়েছে তাতে চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কথা না। কিন্তু ধান মজুদ রাখার কারণে চালের উৎপাদন কমে গেছে। কৃত্রিমভাবে তৈরি করা সংকটের কারণে রাজশাহীর পাইকারী ও খুচরা উভয় বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
নগরীর সাহেব বাজারে চাল কিনতে আসা হেতেমখাঁ এলাকার রফিকুল ইসলাম জানান, তার সংসারে স্ত্রী সন্তান মিলে ৫ জন সদস্য। ছোট একটি মুদি দোকানের উপর ভর করে তার সংসার। কিন্তু বর্তমান সবজির দাম নাগালের মধ্যে থাকলেও ঊর্ধ্বমুখি চালের দামের কারণে সংসার চালাতে হিমমিক খেতে হচ্ছে তাকে। রিকশা চালক মজিবুর রহমান জানান, অটোরিকশার ভাড়া কমে গেছে। ভাড়া কমে যাওয়ায় আয়ও কমেছে। কিন্তু সংসারের খচর কমেনি। চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে চরম বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে পরিবার নিয়ে। অন্যান্য খরচসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় টানা হেচড়ার মধ্যে সংসার চালাতে হচ্ছে বলেও জানান তিনি। বিষয়টি নিয়ে কথা বলা হয় নগরীর গোরহাঙ্গা সততা এন্টারপ্রাইজের আড়তের মালিক বলেন, চালের দাম বাড়ার প্রধান কারণ মিলার ও চাতাল ব্যবসায়ী। তারা ঠিকমত চাল সরবরাহ করছে না। এছাড়াও বাজারে দানের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে চড়া দামে মিলারদের ধান কিনতে হচ্ছে। তাই তারা বেশি দাম ছাড়া চাল দিচ্ছে না। তিনি বলেন, বর্তমান ধানের ভরা মওসুম হলেও এবার ধানের উৎপাদন অনেক কম। বন্যায় অনেক কৃষকের ধান ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ধানের ঘাটতি রয়েছে রাজশাহীতে। এর কারণেই এখন চালের দাম বেড়েছে। ভাইভাই রাইস এজেন্সির পরিচালক শহিদুল ইসলাম জানান, নগরীতে যে পরিমাণ চালের প্রয়োজন সে পরিমাণ চাল পাওয়া যাচ্ছে না। শীতের কারণে চাতালে ধান শুকাচ্ছে না।
তিনি বলেন, শুক্রবার ও শনিবার দেড় থেকে ২শ’ বস্তা করে চাল আড়তে আসে। কিন্তু গত শুক্রবার আড়তে কোনো চাল আসেনি। গতকাল শনিবার আসবে কিনা তারও ঠিক নেই। চাল আমদানি না হলে দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক বলেও তিনি মন্তব্য করেন। এ ব্যাপারে রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলির জানান, বর্তমান আমনের ভরা মওসুম বলা যায়। এখন কৃষকরা ধান কাটতেও ব্যস্ত। রাজশাহীতে ধানের যেমন সংকট নেই তেমনি চালেও সংকট নেই। তারপরও যদি ব্যবসায়ীরা চালের দাম বৃদ্ধি করে তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, দু’একদিনের মধ্যে চালের বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।