প্রকাশ: রোববার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:৪০ পিএম আপডেট: ২৭.১২.২০২০ ১:০৯ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের বেশ কিছু রাস্তা গত আগস্টে উন্নয়নকাজ শেষ করে। মাত্র ৫ মাস আগে সংস্কার করা সেই রাস্তা বিনা অনুমতিতে খোঁড়ে ফেলেছে ঢাকা ওয়াসা নিয়োজিত ঠিকাদার। অনুমতি ছাড়া রাস্তা খোঁড়ার অভিযোগে উত্তরা পশ্চিম থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। গতকাল শনিবার সকালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অঞ্চলের প্রকৌশল বিভাগের কার্যসহকারী সোলায়মান কবীর ওই জিডিটি করেন।
জিডিতে বলা হয়েছে, ডিএনসিসির ১ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরে নতুন উন্নয়ন করা ৯/বি, ১৩ ও ৩৪ নম্বর সড়ক আজ শনিবার বিনা অনুমতিতে খোঁড়া হয়েছে। ঢাকা ওয়াসার নিয়োজিত ঠিকাদার রাস্তা খোঁড়ে ভূগর্ভস্থ পানির লাইন স্থাপনের কাজ করছেন। এতে ডিএনসিসি রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জনসাধারণ ও যানবাহন চলাচলে বিঘœ ঘটছে। উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তপন চন্দ্র সাহা জানান, অনুমতি না নিয়ে সড়ক খোঁড়ার কারণে সিটি করপোরেশন ওয়াসার এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জিডি করেছে। এতে সিটি করপোরেশন রাজস্ব হারাচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়।
ডিএনসিসির অঞ্চল ১ সূত্রে জানা যায়, গত আগস্টে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে উত্তরার ১৫টি রাস্তার নির্মাণকাজ শেষ হয়। এসব রাস্তার মধ্যে তিনটি রাস্তা খোঁড়ার অনুমতি চান ওয়াসার ঠিকাদার। কিন্তু কয়েক মাস আগেই নির্মাণকাজ শেষ হওয়ায় রাস্তা খোঁড়তে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়নি। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিনা অনুমতিতেই রাস্তা খোঁড়ে ফেলেছে। রাস্তা খোঁড়েছে ওয়াসার ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের অধীনে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পের পরিচালক আখতারুজ্জান বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাস্তা খোঁড়ার অনুমতি চেয়েছিল। এদিকে রাস্তার কাজও শেষ। এ নিয়ে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে, বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে। ঢাকায় দুই সিটি করপোরেশন ছাড়াও বিভিন্ন সংস্থা সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করে। সড়ক খনন ও এরপরের মেরামত কার্যক্রমে সমন্বয় এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। সিটি করপোরেশন এলাকায় সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির কারণে জনগণের ভোগান্তি কমাতে ‘ঢাকা মহানগরীর সড়ক খনন নীতিমালা-২০১৯’ করা হয়েছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ছাড়াও ঢাকা ওয়াসা, তিতাস গ্যাস, ডিপিডিসি, ডেসকো, বিটিসিএলের মতামত ও সুপারিশ নিয়ে নীতিমালাটি চূড়ান্ত করা হয়।
ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিরুল ইসলাম জানান, সড়ক খনন নীতিমালা অমান্য করায় কিছু ক্ষেত্রে জরিমানা করা হয় ঠিকাদারদের। নীতিমালাটি বাস্তবায়নে সরকারি সব সংস্থার আন্তরিকতা প্রয়োজন। সংস্থাগুলোকে তাদের নিয়োজিত ঠিকাদারদের নীতিমালা মেনে কাজ করার নির্দেশনা দিতে হবে। সড়ক খনন নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো সড়কের পুরোটা একসঙ্গে খোঁড়া যাবে না। মাসের পর মাস একটানা কোনো সড়ক খোঁড়া যাবে না। ১৫ দিনকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে কাজ করতে হবে। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে ৩০ দিনের খননকাজের জন্য অনুমতি দেওয়া হবে। বিভিন্ন সংস্থা থেকে নিয়োজিত ঠিকাদারদের চুক্তিতে নীতিমালার সব শর্ত মেনে চলার বাধ্যবাধকতা যুক্ত থাকবে। নীতিমালার কোনো শর্তের ব্যত্যয় হলে ঠিকাদারকে জরিমানা বা শাস্তি দেওয়া হবে। নগরবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি আকতার মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, অনুমতি পাওয়া সাপেক্ষে রাস্তা খোঁড়বে, এর ব্যত্যয় ঘটলে আইনি পদক্ষেপ নিতেই হবে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে কঠোরভাবে সড়ক খনন নীতিমালাটি বাস্তবায়ন করতে হবে।