প্রকাশ: রোববার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:৪০ পিএম আপডেট: ২৭.১২.২০২০ ১২:৫৮ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে শিক্ষক-শিক্ষর্থীদের মতামত নিয়ে কাজ শুরু করার কথা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ২০২১ সালের ২ জানুয়ারির মধ্যে গুগল ডকস ফরমে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মতামত ও সুপারিশ পাঠাতে জন্য বলা হয়েছে। টিএসসি উন্নয়নে পুরানো ভবন ভেঙে ফেলা হবে বলে খবর প্রকাশের পর আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই পদক্ষেপ নিলো। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদয় নির্দেশনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সার্বিক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সার্বিক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও সুপারিশ আহ্বান করা যাচ্ছে। আগামী ০২/০১/২০২১ তারিখের মধ্যে যঃঃঢ়ং://ভড়ৎসং.মষব/এহভগকঢকঝ১ঘইঠতএঘউ৭ ওয়েব লিংকে সদয় মতামত ও সুপারিশ প্রেরণের জন্য আদিষ্ট হয়ে অনুরোধ করা যাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন জাতীয় জাদুঘর, জাতীয় গ্রন্থাগার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভবন ভেঙে নতুন করে তৈরির পরিকল্পনা করেছে সরকার। গত ২ সেপ্টেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান এসব স্থাপনা দ্রুত আধুনিকায়ন করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনার পর টিএসসি আধুনিকায়নের বিষয়ে গত অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরকারের গণপূর্ত অধিদফতরের (পিডব্লিউডি) সঙ্গে যোগাযোগ করে। পিডব্লিউডির সুপারিশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ টিএসসিকে আধুনিক করতে বিভিন্ন চাহিদার কথা জানিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। টিএসসিকে ‘আধুনিক স্থাপত্যের সুন্দর নিদর্শন’ উল্লেখ করে তা ভেঙে ফেলার বিরোধিতা করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র-শিক্ষকসহ ছাত্র সংগঠনের নেতারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ফেসবুকে লেখেন, টিএসসি ষাটের দশকে নির্মিত অপেক্ষাকৃত আধুনিক স্থাপত্যের একটি সুন্দর নিদর্শন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পূর্ববর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের ঐতিহ্য ধারণ করে আছে এই টিএসসি। রক্ষণাবেক্ষণের বদলে এটিকে ভেঙে এখন বহুতল ভবন নির্মাণের আয়োজন চলছে। শুধু শুধু অর্থনীতিবিদদেরই সমালোচনা করা হয় যে তারা সবকিছুর বাজারদর বোঝে, কিন্তু কোনো কিছুর প্রকৃত মূল্য বোঝে না! অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় টিএসসিকে যুগোপযোগী ও নান্দনিক করতে সরকারের গণপূর্ত অধিদফতরের কর্মকর্তারা তাদের সাথে যোগাযোগ করেছেন। টিএসসিকে আধুনিকায়নের জন্য পরিকল্পনা ও নকশা প্রণয়নের কাজ চলছে। শতবর্ষের দ্বারপ্রান্তে এসে ক্যাম্পাসকে নান্দনিক ও যুগোপযোগী করতে প্রথমবারের মতো একটি ‘মহাপরিকল্পনা’ প্রণয়ন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় টিএসসিকে আধুনিকায়ন করা হবে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়কে সব সময় নিজের মনে করেন। তিনি বলেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ভবনটিকে তিনি আধুনিক ভবন হিসেবে দেখতে চান। সেই লক্ষে তিনি ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ভবনের নকশা প্রস্তুত করার নির্দেশ দিয়েছেন। পিডব্লিউডি ইতোমধ্যে আমাদের সাথে বসেছেন এবং টিএসসির এরিয়া ও স্থাপনা জরিপ করেছেন। এখন এটার নকশা তৈরি করে পিডব্লিউডি প্রধানমন্ত্রী বরাবর জমা দিলে পরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, বিষয়টি গণপূর্ত মন্ত্রণালয় দেখছে। আমার চাহিদার কথা বলছি। নকশা প্রণয়ন হলে প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি বলেন, ১৯৬৪ সালে টিএসসি যখন নির্মাণ করা হয়েছিল, তখন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম ছিল। এখন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে, এখানে অনেক সামাজিক-সাংস্কৃতি কর্মকা- হয়। যুগের চাহিদা অনুযায়ী এখন এটি পুনর্নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। ভবিষ্যতে আরও ৫০ বছর কিংবা ১০০ বছরকে মাথায় রেখে এটি পুনর্গঠন করতে হবে। নকশা প্রণয়নের অগ্রগতি জানতে চাইলে গণপূর্তের কর্মকর্তা আলী আশরাফ দেওয়ান বলেন, পিডব্লিউডি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে মিটিং করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মৌখিকভাবে টিএসসির বেশ কিছু চাহিদার কথা বলেছেন। কিন্তু অফিসিয়ালি কোনো কিছু করতে বলা হয়নি। নকশা তৈরির জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।