সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   ফিল্ম সিটি থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধুর’ নাম   সিলেটের সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহিয়া গ্রেপ্তার   অনন্য অসাধারণ শেখ হাসিনা আমাদের গর্ব   নরসিংদীতে ‘থার্টি ফার্স্ট’ উপলক্ষে চাঁদা না দেয়ায় ব্যবসায়ীকে কোপালো সন্ত্রাসীরা   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
চলে গেলেন আবদুল কাদেরও, সমাহিত হলেন মায়ের পাশে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: রোববার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:৪০ পিএম আপডেট: ২৭.১২.২০২০ ১২:৫৭ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ

করোনা একে একে কেড়ে নিচ্ছে দেশের কীর্তিমান সন্তানদের। এবার কেড়ে নিলো অভিনেতা আবদুল কাদেরকে। ক্যান্সার ধরা পড়েছিল তার। ক্যান্সার নিয়ে হয়তো আরও কিছু দিন লড়াই করে বেঁচেও থাকতে পারতেন। তিনি নিজেও চাইছিলেন আরও যেন অন্তত ৬ মাস তিনি বেঁচে থাকেন। সব চেনা মুখগুলোকে শেষবারের মতো দেখতে চেয়েছেন, তাদের সঙ্গে গল্প করতে চেয়েছেন। কিন্তু করোনা সংক্রমণের কারণে তিনি আর সময় পেলেন না। গতকাল শনিবার সকাল ৮টা ২০ মিনিটে অভিনেতা আবদুল কাদের চলে গেলেন না ফেরার দেশে। মৃত্যুর সময় গুণী এই শিল্পীর বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। এক ছেলে এবং এক মেয়ের জনক তিনি। গতকাল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শেষ শ্রদ্ধা ও জানাজা শেষে মায়ের কবরের পাশে সমাহিত করা হলো তাকে।

গত ৮ ডিসেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য চেন্নাইয়ে নেওয়া হয় আবদুল কাদেরকে। সেখানে তার ক্যানসার ধরা পড়ে ১৫ ডিসেম্বর। ক্যানসার সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছিল। শারীরিক দুর্বলতার কারণে তাকে কেমোথেরাপিও দেওয়া যাচ্ছিল না। গত রোববার আবার তাকে ঢাকা ফেরত আনা হয়। ভর্তি করা হয় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে। সেখানে ২১ ডিসেম্বর তার শরীরে করোনা ধরা পড়ে।  আবদুল কাদেরের পুত্রবধূ জাহিদা জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতাল থেকে জরুরি ফোন পেয়ে তারা সেখানে পৌঁছান। চিকিৎসকরা জানান, তিনি শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন, নড়াচড়া করছেন না। মাঝেমধ্যে হালকা নিশ্বাস নিচ্ছেন। রাত ১২টার দিকে অবস্থার আরো অবনতি হলে তাকে করোনা ইউনিট থেকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই গতকাল সকালে মৃত্যুবরণ করেন।

গতকাল জোহর নামাজের পর রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএস সেন্ট্রাল মসজিদে আবদুল কাদেরের প্রথম জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয় হয়। সেখানে অভিনেতার আত্মীয়-স্বজন, ঘনিষ্ঠজন ও মসজিদের মুসুল্লিরা অংশ নেন। পরে তার মরদেহ নিয়ে  যাওয়া হয় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে। সর্বস্তরের মানুষ তাকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা শেষে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বনানী মসজিদে। সেখানে তৃতীয় জানাজা শেষে বাদ মাগরিব রাজধানীর বনানী কবরস্থানে তার মায়ের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। অভিনেতা আবদুল কাদেরের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত বিখ্যাত নাটক ‘কোথাও কেউ নেই’র বাকের ভাই (আসাদুজ্জামান নূর) আবদুল কাদেরকে নিয়ে স্মৃতিকাতর হয়ে উঠেন। তিনি বলেন, আবদুল কাদের এমন একজন মানুষ, তাকে দেখলেই মন ভালো হয়ে যেত। মন খারাপ করে থাকার কোনো উপায় থাকত না। আমি তাকে কোনোদিনও কারও বিরুদ্ধে কিছু বলতে শুনিনি। এটা ছিল তার বড় গুণ। বড় হৃদয়ের মানুষ ছিল সে। আর পারিবারিকভাবে ছিল একজন মায়ার মানুষ। স্ত্রী, সন্তান, নাতী-নাতনীদের ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখত। মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার সোনারং গ্রামে অভিনেতা আবদুল কাদের ১৯৫১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আবদুল জলিল এবং মা আনোয়ারা খাতুন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আবদুল কাদের অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন। শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। সিঙ্গাইর কলেজ ও লৌহজং কলেজে অর্থনীতিতে তিনি শিক্ষকতা করেছিলেন। ১৯৭৯ সাল থেকে আন্তর্জাতিক কোম্পানি ‘বাটা’তে চাকরি শুরু করেন। ৩৫ বছর ছিলেন সেখানে। অমল চরিত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে তার নাটকে অভিনয় করা শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মহসিন হল ছাত্র সংসদে ১৯৭২-৭৪, পরপর তিন বছর নাট্য সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সেলিম আল দীন রচিত ও নাসির উদ্দীন ইউসুফ নির্দেশিত ‘জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন’-এ অভিনেতা হিসেবে ১৯৭২ সালে পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। আবদুল কাদের ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ডাকসু নাট্যচক্রের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৭৩ সাল থেকে থিয়েটার নাট্যগোষ্ঠীর সদস্য এবং চার বছর যুগ্ম সম্পাদকের ও ছয় বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সাল থেকে টেলিভিশন ও ১৯৭৩ সাল থেকে রেডিও নাটকে অভিনয় শুরু হয় তার।
‘এসো গল্পের দেশে’ টেলিভিশনে আবদুল কাদের অভিনীত প্রথম ধারাবাহিক নাটক। আবদুল কাদের বাংলাদেশ টেলিভিশনের নাট্যশিল্পী ও নাট্যকারদের একমাত্র সংগঠন টেলিভিশন নাট্যশিল্পী ও নাট্যকার সংসদের (টেনাশিনাস) সহসভাপতি ছিলেন। তিনি জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র নিয়মিত শিল্পী ছিলেন। এক হাজারের বেশি প্রদর্শনীতে অভিনয় করেছেন আবদুল কাদের। তার উল্লেখযোগ্য মঞ্চনাটক ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘এখনও ক্রীতদাস’, ‘তোমরাই’, ‘স্পর্ধা’, ‘দুই বোন’, ‘মেরাজ ফকিরের মা’। ১৯৮২ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসবে বাংলাদেশের নাটক থিয়েটারের ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’-এ অভিনয় করেন তিনি। জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, কলকাতা, দিল্লি, দুবাই এবং দেশের প্রায় সব কটি জেলায় আমন্ত্রিত হয়ে অভিনয় করেছেন। টেলিভিশনে দুই হাজারের বেশি নাটকে অভিনয় করেছেন কাদের। তার উল্লেখযোগ্য নাটক ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘মাটির কোলে’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘শীর্ষবিন্দু’, ‘সবুজ সাথী’, ‘তিন টেক্কা’, ‘যুবরাজ’, ‘আগুন লাগা সন্ধ্যা’, ‘প্যাকেজ সংবাদ’, ‘সবুজ ছায়া’, ‘কুসুম কুসুম ভালোবাসা’, ‘নীতু তোমাকে ভালোবাসি’, ‘আমাদের ছোট নদী’, ‘দুলাভাই’, ‘অজ্ঞান পার্টি’, ‘মোবারকের ঈদ’, ‘বহুরূপী’, ‘এই মেকআপ’, ‘ঢুলি বাড়ি’, ‘সাত গোয়েন্দা’, ‘এক জনমে’, ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’, ‘খান বাহাদুরের তিন ছেলে’ ইত্যাদি। অভিনয় করেছেন চলচ্চিত্রেও। অভিনয়ের পাশাপাশি বেশ কিছু বিজ্ঞাপনের কাজও করেছেন এ সফল অভিনেতা।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
https://www.dailyvorerpata.com/ad/BHousing_Investment_Press_6colX6in20200324140555 (1).jpg
https://www.dailyvorerpata.com/ad/last (2).gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/431205536-ezgif.com-optimize.gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/agrani.gif
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]