চাল ও আটার বাড়তি দামে নাভিশ্বাস উঠেছে। ফলে কিছুটা কম দামে জীবন ধারণের অপরিহার্য এ দুটি পণ্য কিনতে খাদ্য অধিদফতরের ওএমএস’র (ওপেন মার্কেট সেল) দিকে ছুটছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। এতে ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন ডিলাররা।
ওএমএস’র চাল ও আটা বরাদ্দ পাওয়া রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চলের ডিলারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক মাস ধরে ক্রেতাদের চাপ অনেক বেশি। তারা যে চাল ও আটা বরাদ্দ পাচ্ছেন, তা অল্প সময়ের মধ্যেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।
ডিলারদের দাবি, ক্রেতাদের চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ পাওয়ার পরিমাণ কম। বর্তমানে একজন ডিলার সর্বোচ্চ দেড় মেট্রিক টন চাল ও এক মেট্রিক টন আটা বরাদ্দ পান। এ বরাদ্দের পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে ক্রেতাদের চাহিদা মেটানো যাবে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বর্তমানে ৬৫ টাকার নিচে চিকন চালের কেজি মিলছে না। ‘গরিবের চাল’ খ্যাত মোটা চালের কেজি ৫০ টাকায় পৌঁছেছে।
সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, এক মাসের মধ্যে চিকন চালের দাম ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ বেড়েছে। মাঝারি মানের চালের দাম বেড়েছে ১৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। মোটা চালের দাম বেড়েছে ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
অপরদিকে গত এক মাসে ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ কমে বর্তমানে খোলা আটার কেজি ২৮ থেকে ৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছে টিসিবি। রাজধানীর খুচরা ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে খোলা আটার কেজি ৩২ থেকে ৩৪ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে চাল ও আটার এমন দামে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ। যে কারণে ৩০ টাকা কেজিতে চাল ও ১৮ টাকা কেজিতে আটা কিনতে তারা ওএমএস’র ট্রাকে ছুটছেন। কেউ কেউ ওএমএস’র চাল ও আটা বিক্রি শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেই নির্ধারিত স্থানে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন।
রামপুরা, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, খিলগাঁওয়ের প্রতিটি অঞ্চলেই এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
মালিবাগ হাজীপাড়া বৌ-বাজারে ওএমএস’র চালের জন্য লাইনে দাঁড়ানো আমেনা বেগম নামের একজন বলেন, চালের জন্য সকাল ৮টায় লাইনে দাঁড়িয়েছি। ১০টার দিকে চাল বিক্রি শুরু হয়। পাঁচ কেজি চালের জন্য তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে। এরপরও চাল কিনতে পেরেছি, এতেই খুশি।
তিনি আরও বলেন, বাজারে এখন এক কেজি চাল ৫০ টাকার নিচে পাওয়া যায় না। গার্মেন্টসে কাজ করে মাসে যে বেতন পাই, তা দিয়ে এতো দামে চাল কিনে খাওয়া আমাদের জন্য খুবই কষ্টকর। ট্রাকে এভাবে চাল বিক্রি না করলে আমাদের অনেক কষ্ট হতো।
খিলগাঁও থেকে ওএমএস’র চাল ও আটা কিনতে আসা আনোয়ার হোসেন বলেন, সকাল ১০টার আগে এখানে চাল-আটা বিক্রি শুরু হয় না। যদি ৯টার মধ্যে বিক্রি শুরু হতো, তাহলে আমাদের জন্য ভালো হতো। কারণ, সকালে অফিস থাকে। ফলে কোনো কোনো দিন ট্রাক থেকে কিনতে পারি না। তখন বাধ্য হয়ে দাম বেশি দিয়ে বাজার থেকে কিনতে হয়।
যাত্রাবাড়ী থেকে ওএমএস’র চাল কেনা রিকশাচালক মনির হোসেন বলেন, বাজারে সবকিছুর অস্বাভাবিক দাম। চাল, তেল, আটা কোনো কিছুতেই স্বস্তি নেই। এক কথায় আমাদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষ অমানবিক কষ্টের মধ্যে আছে। খাদ্য অধিদফতর ট্রাকে চাল ও আটা বিক্রি করায় কিছুটা রক্ষা পাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, এ চাল ও আটার জন্য কমপক্ষে তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। যদি ওএমএস’র মাধ্যমে চাল ও আটা বিক্রির পরিমাণ বাড়ানো হতো, তাহলে রিকশায় ভাড়া মেরে কিছুটা বাড়তি আয় করার সুযোগ পেতাম।
চাল ও আটার বিক্রি পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে জুরাইনের ওএমএস ডিলার মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, এখন চাল ও আটার জন্য ক্রেতাদের অনেক চাহিদা। আমি এক হাজার ২০০ কেজি চাল ও এক হাজার কেজি আটা পাই। এ চাল ও আটা দেখতে দেখতে বিক্রি হয়ে যায়। ক্রেতাদের যে চাহিদা আমাকে তিন মেট্রিক টন (৩ হাজার কেজি) চাল দিলেও একদিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।
যাত্রাবাড়ীর মীরহাজিরবাগে চালের ডিলার মারুফ হাসান মাসুম বলেন, বাজারে এখন চাল ও আটার অনেক দাম। এ কারণে নিম্ন আয়ের মানুষরা ওএমএস’র চাল কিনতে ছুটে আসছে। এক মাস ধরে আমরা চাল-আটার জন্য মানুষের চাহিদা দেখছি। অনেকে সকাল ৬টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। ট্রাকে মাল আসতেই আমরা বিক্রি শুরু করে দিই। সাধারণত বিক্রি শুরু করতে সকাল সাড়ে ৯টা-১০টা বাজে।
দেড় মেট্রিক টন চাল ও এক মেট্রিক টন আটা বরাদ্দ পাওয়া দক্ষিণ খিলগাঁওয়ের ডিলার রফিকুল ইসলাম বলেন, ক্রেতাদের যে চাহিদা তাতে চাল ও আটা বিক্রি করতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য আমরা সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানিয়েছি।
হাজারীবাগের ডিলার তুষার আহমেদ বলেন, আমার জন্য দেড় মেট্রিক টন চাল ও এক মেট্রিক টন আটা বরাদ্দ। এই চাল ও আটা আমি দুপুরের আগেই বিক্রি শেষ করে ফেলি। বিক্রি শুরু করার আগেই অসংখ্য মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ে। আমরা বাড়তি কর্মী নিয়ে দ্রুত বিক্রি করার চেষ্টা করি।
সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সারোয়ার মাহমুদ বলেন, আমাদের মোটামুটি মজুত আছে। আপদকালীন সংকট মোকাবিলার জন্য যে মজুত দরকার তা আছে। বাজার মোকাবিলার জন্য আমরা অন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমদানির ব্যবস্থা করছি। নতুন বছরে আমরা মজুত আরও বাড়ানোর চেষ্টা করব। সূত্র: জাগো নিউজ