ঢাকা মহানগর কমিটির সেক্রেটারি করা হয়েছে হেফাজতে ইসলামের আলোচিত নেতা মামুনুল হককে । জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য অপসারণের হুমকি দিয়ে আলোচনায় আসা মামুনুল হকই পেলেন হেফাজতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক কমিটির দায়িত্ব।
এছাড়া প্রতিষ্ঠাতা আমির শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর গঠিত হেফাজতে ইসলামের নতুন কমিটির আকার আরও বাড়ানো হয়েছে। কমিটিতে বিভিন্ন পদে আরও ৫০ জনকে মনোনীত করার পর এর আকার দাঁড়িয়েছে ২০১ জনে। এছাড়া মহাসচিবের মৃত্যুর পর একজন নায়েবে আমিরকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক নোমান ফয়জীর পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব বিষয় জানানো হয়েছে।
ঢাকা মহানগরে সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন জুনায়েদ আল হাবীব এবং সেক্রেটারি হয়েছেন শায়খুল হাদিস আজিজুল হক হুজুরের ছেলে মামুনুল হক। চট্টগ্রাম মহানগর কমিটিতে তাজুল ইসলামকে সভাপতি এবং লোকমান হাকীমকে সেক্রেটারি ঘোষণা করা হয়েছে।’
জুনায়েদ আল হাবীব ও মামুনুল হক উভয়ই হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব পদে আছেন। গত নভেম্বরে এক ধর্মীয় সভায় রাজধানীর ধোলাইখাল থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য অপসারণের হুমকি দিয়ে আলোচনায় আসেন মামুনুল।
এ সময় দেশজুড়ে প্রতিবাদ শুরু হয়। প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মধ্যে বেশ কয়েকটি ওয়াজ মাহফিলে যোগ দেওয়ার পূর্ব ঘোষণা দিয়েও যেতে পারেননি তিনি। মামুনুল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবেরও দায়িত্বে আছেন, যে রাজনৈতিক দলটি বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরীক দল।
গত ২৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন হেফাজতের প্রধান উপদেষ্টা শাহ মহিবুল্লাহ বাবুনগরী। বৈঠকে আমির জুনাইদ বাবুনগরীসহ হেফাজতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
২০১০ সালে হেফাজতে ইসলাম নামের সংগঠনটি গড়ে তোলেন কওমী মাদরাসাকেন্দ্রিক ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব শাহ আহমদ শফী।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর আহমদ শফী মারা যান। এরপর ১৫ নভেম্বর প্রতিনিধি সম্মেলন করে হেফাজতে ইসলামের ১৫১ সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে আমির নির্বাচিত হন আগের কমিটির মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী। আর নতুন মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছিলেন নূর হোসাইন কাসেমী, যিনি গত ১৩ ডিসেম্বর মারা যান।
নতুন কমিটি গঠনের পর থেকে আহমদ শফী এবং বাবুনগরীর অনুসারীদের মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে। কমিটিতে শফীর অনুসারীদের বাদ দেওয়ার অভিযোগে সরব এক সময়ের হেফাজতের নেতারা। প্রকাশ্য এই বিরোধের মধ্যেই কমিটিতে আরও ৫০ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাদের সবাই বাবুনগরীর অনুসারী বলে চিহ্নিত করেছেন শফীপন্থীরা।
নূর হোসাইন কাসেমীর মৃত্যুতে হেফাজতে ইসলামের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ঢাকার খিলগাঁও জামিয়া ইসলামিয়া মাখজানুল উলূম মাদরাসার অধ্যক্ষ নূরুল ইসলাম। এছাড়া সংগঠনের নায়েবে আমির আতাউল্লাহ হাফেজ্জিকে সিনিয়র নায়েবে আমির, সহকারী মহাসচিব ফজলুল করীম কাসেমী, শফিক উদ্দীন, হাবীবুল্লাহ মিয়াজী ও খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়্যুবীকে যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে।
নতুনভাবে যুক্ত হয়েছেন- নায়েবে আমির পদে আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ হাসান, আব্দুস সবুর, আফজালুর রহমান, আব্দুল বাছির, আইয়ুব বাবুনগর, মহিউল ইসলাম বোরহান, আব্দুল বাছেত আজাদ এবং আব্দুল হালিম।
সহকারী মহাসচিব করা হয়েছে মুফতী সাইফুদ্দিন কাসেমী, মুশতাকুন নবী কাসেমী ও মুফতী সাখাওয়াত হোসাইন রাজীকে। সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পেয়েছেন মুহিব্বুল্লাহ, সানাউল্লাহ মাহমুদী, রেজাউল করীম।
তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদ পেয়েছেন কবি মুহিব খান এবং সহকারী তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক হয়েছেন আব্দুল্লাহ নাজীব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শেখ মুহাম্মদ ইউসুফ।
সহকারী অর্থ সম্পাদক সুহাইল সালেহ, সহকারী প্রচার সম্পাদক সুলতান মহিউদ্দীন ও কামরুল ইসলাম কাসেমী, সহকারী আইন বিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমান ও জাহাঙ্গীর হোসাইন, সহকারী সমাজকল্যাণ সম্পাদক মুহাম্মদ শফি ও জাকির হুসাইন কাসেমী, সহকারী দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক কেফায়াতুল্লাহ আযহারী ও ওমর ফারুক ফরিদী, সহকারী আন্তর্জাতিক সম্পাদক হুসাইন মুহাম্মদ শাহজাহান ইসলামাবাদী, ফয়েজ আহমদ ও মাওলানা ওবাইদুল্লাহ, সহকারী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম ফারুকী এবং সহকারী ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক পদ পেয়েছেন জুনায়েদ বিন ইয়াহইয়া।
সদস্য হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে এনামুল হক কাসেমী, কামরুজ্জামান, আব্দুল হামিদ, শব্বির আহমদ, নজরুল ইসলাম, সানাউল্লাহ, ফজলুল করীম রাজু, নাসিরুল্লাহ, আব্দুল আযিয, আবুল কাসেম, আব্দুল কাইয়ুম, ফজলুর রহমান, মনিরুজ্জামান, শওকত হোসেন সরকার, আব্দুল্লাহ সাভার, দ্বীন মুহাম্মদ আশরাফ, আবু ইউসুফ, তোফাজ্জল হুসাইন মিয়াজি, আব্দুল কাইয়ুম সুবহানী, শেহাব উদ্দিন, আলমগীর মাসউদ, আব্দুল্লাহ, হাসান ফারুক, মুহাম্মদ সোহেল চৌধুরী, ইউসুফ সাদেক, শোয়াইব চৌধুরী, তরিকুল ইসলাম, ওহিদুল আলম, আব্দুল মালেক, সালাহ উদ্দিন, আবুল কাসেম, মনসুর ও নূর মুহাম্মদ।
উপদেষ্টামণ্ডলীতে সদস্য হিসেবে মনোনীত হয়েছেন ফয়জুল্লাহ, আব্দুল হক, হামীদুর রহমান, মোবারক উল্লাহ, দেলওয়ার হুসাইন, সাআদত হুসাইন, হিফজুর রহমান, মুহসিন আহমদ, হেলাল উদ্দীন, মজদুদ্দিন আহমদ, শফিকুল ইসলাম, মুহাম্মদ মুসলিম এবং শাহাব উদ্দিন।