প্রকাশ: শনিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:২৬ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
বগুড়ার ধুনটে ৮ বছরের শিশু তাবাসসুমকে পালাক্রমে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় জড়িত ৪জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলো- ধুনট উপজেলার নশরতপুর গ্রামের যথাক্রমে- তোজাম্মেল হকের ছেলে বাপ্পি আহম্মেদ(২২), দলিল উদ্দিন তালুকদারের ছেলে কামাল পাশা(৩৫), সানোয়ার হোসেনের ছেলে শামীম রেজা(২২) এবং মৃত সাহেব আলী শেখের ছেলে লাবলু শেখ(২১)। এদের মধ্যে বাপ্পি ধুনট জিএমসি ডিগ্রি কলেজের বিএ ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী, কামাল পাশা পেশায় মুদি দোকানদার, শামীম রেজা রাজমিস্ত্রি এবং লাবলু শেখ রঙ মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতো।
২য় শ্রেণির শিক্ষার্থী নিহত তাবাসসুম ধুনট উপজেলার নশরতপুর গ্রামের বেলাল হোসেন খোকনের মেয়ে। শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা নিজ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। পুলিশ সুপার জানান, আসামী বাপ্পীর পরিবারের সাথে শিশু তাবাসসুমের বাবার সাথে পারিবারিক দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এই দ্বন্দ্বের রেশ ধরে তাবাসসুমকে হত্যা করে প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা করে বাপ্পী। গত ১৪ ডিসেম্বর নশরতপুর গ্রামে ইসলামী জালসা চলছিল। সেখানে তাবাসসুম তার দাদা-দাদী ও দুই ফুফুর সাথে জালসায় যাওয়ার পর অন্য শিশুদের সাথে পাশের দোকানে বেলুন কিনতে যায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী বাপ্পি রাত ৯টার দিকে জালসার পাশের দোকান থেকে বাদাম কিনে দেয়ার লোভ দেখিয়ে তাবাসসুমকে ফুসলিয়ে হাজী কাজেম জুবেদা টেকনিক্যাল কলেজে নিয়ে যায়।
সেখানে বাপ্পি কামাল, শামীম ও লাবলু তাবাসসুমের মুখ চেপে ধরে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে নিস্তেজ হয়ে পড়লে বাপ্পি গলা টিপে তাবাসসুমকে হত্যা করে। পরে কাটিং প্লাস দিয়ে হাতের আংগুল কাটে যাতে সবাই মনে করে কোন জন্তুর কামড়ে তার মৃত্যু হয়েছে। এর পর বাপ্পি তাবাসসুমের লাশ কাধে করে বাদশার বাড়ির পাশের বাঁশ ঝাড়ে ফেলে রেখে যায় যাতে বাদশার ছেলে রাতুল(১৬) কে সবাই সন্দেহ করে। শেষে বাপ্পি বাড়িতে চলে গেল বাকি তিনজন আসামী জালসায় গিয়ে ভলেন্টিয়ারের দায়িত্ব পালন করে।
পুলিশ সুপার আরও জানান, তাবাসসুম বাসায় ফিরে না আসায় তার পরিবারের সবাই তাকে খুঁজতে থাকে। এক পর্যায়ে রাত দেড়টার দিকে লোকজন তাবাসসুমের দেহ বাশ ঝাড়ে পরে থাকতে দেখে দ্রুত উদ্ধার করে ধুনট থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। এসময় তাবাসসুমের যৌনাঙ্গ দিয়ে রক্ত ঝরছিল এবং বুকে ও গালে কামড়ের দাগ ছিল। পরে ১৫ ডিসেম্বর তাবাসসুমের বাবা খোকন বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(২) ধারায় মামলা দায়ের করেন। তারপরেই পুলিশ মাঠে নামে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আব্দুর রশিদের তত্ত্বাবধানে এবং শেরপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমানের নেতৃত্বে একটি টিম নিরসলভাবে হত্যার রহস্য উদঘাটনে কাজ শুরু করে। পরে ২৫ ডিসেম্বর রাতে আসামীদের গ্রেফতারপূর্বক ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে তাবাসসুমকে ধর্ষণের পর হত্যার কথা স্বীকার করে।
শেরপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান জানান, গ্রেপ্তাররা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা স্বীকার করেছে। আসামীদের আদালতে প্রেরণ করে ৮দিনের রিমান্ড আবেদন করা হবে।