একই কথা বলেছেন টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকার সমাজকর্মী নবাব উদ্দিন যিনি ইস্ট হ্যানডস নামে একটি দাতব্য সংস্থার সাথে জড়িত।
বিবিসি বাংলাকে নবাব উদ্দিন জানান, সম্প্রতি এলাকার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের ওপর পরিচালিত সংক্ষিপ্ত একটি জরিপে তারা দেখেছেন কোভিড এবং ভ্যাকসিন নিয়ে তাদের মধ্যে নানা বিভ্রান্তি সন্দেহ কাজ করছে।
“উত্তর দাতাদের ৬৫ শতাংশই বলেছেন ভ্যাকসিন নেবেন কিনা তা নিয়ে তারা নিশ্চিত নন। অপেক্ষা করে দেখবেন।“ মি উদ্দিন বলেন, সমাজের কিছু অংশে সঠিক তথ্য প্রবাহের দারুণ ঘাটতি রয়েছে। “মানুষের ভেতর নানা ধরনের অদ্ভুত সব ধারণা রয়েছে। অল্প শিক্ষার কারণে বিশেষ করে বয়স্করা নিজেরা খবর তেমন পড়েন না বা দেখেন না। অন্যের কাছে শোনেন এবং কান কথা বিশ্বাস করেন, নানা গুজব ঘোরাফেরা করে।“
ব্রিটিশ সরকার বলছে প্রথম সপ্তাহেই ছয় লাখেরও বেশি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে।
হারাম না হালাল
বিশ্বের অনেক দেশের মত ব্রিটেনেও মুসলিমদের একাংশ ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কোভিড ভ্যাকসিন নিয়ে সন্দিহান।
ব্রিটিশ বোর্ড অব স্কলারস অ্যান্ড ইমামস (বিবিএসআই)- যারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ইসলামী শরিয়তের ব্যাখ্যা দেয় - তারা এ সপ্তাহে তাদের একটি বিবৃতিতে বলেছেন কোভিড ভ্যাকসিনের ধর্মীয় গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে অনেকেই তাদের কাছে প্রশ্নে করছেন।
যেমন, সংগঠনটি বলছে, এসব ভ্যাকসিনে যদি হালাল কায়দায় জবাই না করা গরুর বা শুয়োরের কোলাজেন থেকে তৈরি জেলাটিন থাকে, তাহলে তা হালাল হবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরও অনেক মুসলিম চাইছেন।
বিবিএসআই, যাদের সাথে অনেক চিকিৎসকও জড়িত, তারা তাদের এক বিবৃতিতে মুসলিমদের আশ্বস্ত করেছেন ফাইজার বা মডার্নার ভ্যাকসিনে কোনো জেলাটিন ব্যবহৃত হয়নি।তারা নানা হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, ইসলামে অসুস্থতা থেকে নিরাময়ের চেষ্টার নির্দেশ রয়েছ। তারা বলেছে, কোনো ওষুধে জেলাটিন বা এমন কিছু পদার্থ যদি থাকেও যা সাধারণভাবে হারাম বলে বিবেচিত হতে পারে, তাহলেও জীবন বাঁচাতে সেই ওষুধ সেবন হালাল।
মোস্তফা ফারুক বলেন, টাওয়ার হ্যামলেটসে যে কোনো ভ্যাকসিন কর্মসূচি চালানোর সময় একটি অংশ ধর্মীয় কারণ দেখিয়ে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে।
তিনি জানান প্রতি বছর ফ্লু ভ্যাকসিন দেওয়ার সময় এমন অভিজ্ঞতা হয়। এজন্য তারা স্থানীয় কম্যুনিটি নেতা এবং মসজিদের ইমামদের সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করেন।
“তবে এই সমস্যা বড় কোনো সমস্যা নয়। যেমন আমাদের জিপি সার্জারিতে মাত্র দুইজন মুসলিম নারী ধর্মীয় কারণ দেখিয়ে কোভিড ভ্যাকসিন নিয়ে অনীহা প্রকাশ করেছেন।“
শুধু মুসলিম নয়, অন্যান্য জাতি গোষ্টীর মধ্যেও ভ্যাকসিন বিরোধিতা রয়েছে, এবং এদের অনেকেই সোশাল মিডিয়ায় সোচ্চার। ব্রিস্টল শহরে গত ১২ই ডিসেম্বর অনেক মানুষ ভ্যাকসিনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।
ব্রিটিশ মুসলিম চিকিৎসকদের সংগঠন ব্রিটিশ ইসলামিক মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইবিএম) জেনারেল সেক্রেটারি ড সালাম ওয়াকার বলেছেন, মুসলমানরা ধর্মীয় কারণে ভ্যাকসিন নিয়ে সন্দিহান এ ধরণের অভিযোগ ভিত্তিহীন।
তুরস্কের সরকারি মিডিয়া টিআরটি ওয়ার্ল্ডকে এক সাক্ষাৎকারে ড. ওয়াকার বলেন, “বিষয়টি হচ্ছে কম্যুনিটিকে আস্থায় নেওয়া। তাদের মধ্যে বিশ্বাস তৈরি করা যেটা রাতারাতি হয় না। যে স্বাস্থ্য বিভাগ বছরের পর বছর অনেক মানুষের খোঁজই নেয় না, তারা যদি হঠাৎ মানুষের দরজায় টোকা দেয় অনেক মানুষ সন্দিহান হয়ে পড়তেই পারে।“
“ভ্যাকসিন নিয়ে যাদের মধ্যে দ্বিধা কাজ করছে তাদের অনেকেই তাদের অনেক প্রশ্নর জবাব পাননি।“
মোস্তফা ফারুক বলেন, কোভিড প্যানডেমিক শুরুর পর গত নয় মাস ধরে সাধারণ মানুষের সাথে ডাক্তারদের যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, সেটাও ভ্যাকসিন নিয়ে এই দ্বিধা ও সন্দেহের অন্যতম একটি কারণ।
“মার্চ থেকে ডাক্তারদের সাথে মানুষের মুখোমুখি দেখা হয়না বললেই চলে। ডাক্তাররা টেলিফোনে পরামর্শ দিচ্ছেন। ফলে যোগাযোগের যে একটি ঘাটতি তেরি হয়েছে কোনো সন্দেহ নেই। ডাক্তাররা যদি মুখামুখি বসিয়ে তাদের বোঝাতে পারতেন তাহরে হয়তো দ্বিধা অনেকটা কাটতো।“