বৃদ্ধা তইজান নেছা। তিনি এখন বিশ্বের সবচেয়ে প্রবীণ নারী বলে তার সন্তানদের দাবি। তাদের মায়ের বয়স বর্তমানে ১৩৫ এর কোটায়। তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়েসহ ৮ সন্তানের এই জননীর এখন ৩৪ জন নাতি নাতনি।
৩৪ জন নাতি নাতনির ঘরে আছে ৭২ জন পুতি ও পুতনি। চার পুরুষের সংসার জীবনে তার বংশধর এখন ১১৪ জন। তবে তার স্বামী গোলাম বিশ্বাস মারা গেছেন প্রায় ২৫ বছর আগে। শুধু স্বামী নয়, বৃদ্ধা তইজান হারিয়েছেন তার বড় ছেলে ইউনুস আলি ও মেয়ে আত্তাজান নেছাকে।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কল্যাণপুর কালীতলা পাড়া এলকায় স্বামীর ভিটায় বসবাস করছেন তিনি। তার তিন ছেলের মধ্যে ইউনুস আলি মারা গেলেও মেঝ ছেলে ইউসুফ আলি ও ছোট ছেলে আক্কাস আলি বেঁচে আছেন। মেয়েদের মধ্যে আত্তাজান নেছা মারা গেছেন। এখন বেঁছে আছেন, হাওয়া জান নেছা, আহাজান নেছা, সাহাজান নেছা ও মেহজান নেছা।
বয়সের ভারে নুয্য শরীর। চোখ দুটি বিদীর্ণ, মুখে পড়েছে অসংখ্য ভাজ। তারপরেও থেমে নেই বৃদ্ধা তইজান নেছার জীবন। এখনও তইজান নেছা ঘুরতে যান পাড়াতে। নাতি পুতির সঙ্গে আড্ডায় মাতেন।
শোনেন, জীবনের সেই সোনালি দিনের গল্প। কখনো লাঠি ভর দিয়ে বা কখনো একাই হেঁটে বেড়ান তিনি। শরীরের শক্তি আগের মতো না পেলেও এই বয়সে এখনো চোখে স্পষ্ট দেখতে পান তিনি। তবে মাঝে মাঝে স্মৃতিভ্রম হয়ে পড়লেই ভুল বকেন তিনি। কথাগুলো জানালেন, তইজান নেছার মেঝ মেয়ে হাওয়া জান নেছা (৫০)।
হাওয়া জান নেছা জানান, আমরা অত্যন্ত ভাগ্যবান যে এখনো মা আমাদের মাঝে আছে। আমার মায়ের চার পুরুষের জীবন। আমার বড় বোন এবং বড় ভাই মারা গেছেন। তবে আমার মা আজোও আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন।
বৃদ্ধা তইজান নেছাকে তার ছেলে এবং মেয়েরা সবাই দেখা শোনা করেন বলে জানালেন স্থানীয়রা। কথা হলো, তইজান নেছার সঙ্গে। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে তিনি জানান, আর বাঁচতে ইচ্চা করে না। আমার ছেইলি ছেলে) মইরি (মারা) গিচে (গেছে)। মেয়িও (মেয়েও) মইরি (মরে) গিচে (গেছে)। মরণ আমাকে দ্যাকে (দেখে) না।
স্বামীর কথা খুব স্মরণ করতে না পারলেও বার বার বলছিলেন ও আমাকে খুব ভালবাসতে। ওর কতা মনে হইলে খুব কষ্ট হয়। আমাকে একা ফেইলি সে আল্লাহর কাছে চইলি গিচে। তবে, মাঝে মাঝে বলছিলেন আমাকে কেউ দ্যাকে (দেখে) না বাবা, মিত্তি কতা কবোনা (মিথ্যা কথা বলব না), আমাকে কেউ দ্যাকেনা (দেখেনা)।
জানা গেছে, তইজান নেছার স্বামী গোলাম বিশ্বাস ছিলেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর। এলাকার প্রভাবশালী ছিলেন তিনি। অনেক সম্পদের মালিক ও ছিলেন গোলাম বিশ্বাস। মারা যাওয়ার পর জমি জমা ভাগ করে নিয়েছেন ছেলে মেয়েরা। তবে সবাই মায়ের প্রতি যত্নশীল।
তইজান নেছার নাতি আব্দুল মতিন, আতিন ও শিউলি খাতুন জানান, আমরা দাদীকে পেয়ে খুবই সুখী। আমাদের পরিবারের সব চেয়ে বয়ষ্ক মানুষ সে। আমরা ভাগ্যবান যে, আমাদের নাতি নাতনিরাও আমার দাদীকে দেখতে পাচ্ছে।