ড. কাজী এরতেজা হাসান
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম আপডেট: ২৫.১২.২০২০ ১:১৯ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
রাজধানীকে যানজট মুক্ত করার লক্ষ্যে রাজধানীর প্রান্ত সীমায় ৪টি বাস টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য ঢাকার দুই মেয়র জায়গাও দেখেছেন। এই উদ্যোগ রাজধানীর বহু অপ্রত্যাশিত যানজট মুক্তিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিপ্রায়ে ঢাকার দুই মেয়র রাজধানীর প্রান্ত সীমায় ৪টি বাস টার্মিনাল বানানোর পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং আগামী বছরে কাজ শুরু করার কথা জানিয়েছেন। যানজটমুক্ত রাজধানী গড়ে তোলার ব্যাপারে সরকার দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। সে উদ্দেশ্যেই নির্মাণ হচ্ছে মেট্রোরেল। পাতাল রেল। মোট কথা, যানজটমুক্ত রাজধানী গড়ে তুলতে পিছিয়ে নেই সরকার। রাজধানী ঢাকার যানজট বহুদিন ধরে আলোচনার শীর্ষে রয়েছে। নানা সময়ে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিন্তু রাজধানীর যানজট কমানো যায়নি। তবে সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তাতে যানজট মুক্ত রাজধানী পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়। ঢাকা দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ইতোমধ্যে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন তাতে সুন্দর একটি রাজধানী উপহার দেওয়ার লক্ষণ ফুটে উঠেছে। আশা করা যায় তিনি তার পদক্ষেপে সফল হবেন। একই কথা বলা যায় ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলামের ক্ষেত্রে। তিনি আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেরণা নিয়ে তিনিও কাজ করছেন। ঢাকার দুই মেয়র দিনরাত নগরবাসীর সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন। গতকাল দৈনিক পত্রিকাগুলো জানিয়েছে, রাজধানীর যানজট কমাতে শহরের মধ্যে অবস্থিত প্রধান চারটি বাস টার্মিনাল সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১০ সালে। সায়েদাবাদ টার্মিনাল কাঁচপুর ব্রিজের পাশে, ফুলবাড়িয়াকে কেরানীগঞ্জে, মহাখালীকে উত্তরায় ও গাবতলী টার্মিনাল সাভারে স্থানান্তর করার প্রস্তাব করা হয়। এ জন্য ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) রাজউকের কাছে জমি চেয়ে চিঠি দেয়। ওই বছরের ২৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর যানজট নিরসনের গুরুত্ব তুলে ধরে টার্মিনালগুলোর বর্তমান অবস্থান থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার তাগিদ দেন। সিটি করপোরেশন থেকে রাজউককে একেকটি বাস টার্মিনালের জন্য অন্তত ২০ একর জমি বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়।
এ নিয়ে কয়েক দফা চিঠি চালাচালির পর রাজউক সিটি করপোরেশনকে জমি বরাদ্দ না দিয়ে অধিগ্রহণের ছাড়পত্র দেয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বলা হয়েছিল, রাজধানীর ঠিক ভেতরেই বড় ধরনের বাস-ট্রাক টার্মিনাল থাকায় প্রতিটি টার্মিনালের আশপাশের সড়কে যানজট লেগেই থাকে। মহাখালী, সায়েদাবাদ ও গাবতলী টার্মিনালের পাশে পাইকারি কাঁচাবাজার নির্মাণ করা হয়েছে। এতে যানজট আরও বাড়ছে। টার্মিনালগুলো নগরীর বাইরে সরিয়ে নিলে রাজধানীর ওপর যানবাহনের চাপ কমবে। আর যাত্রীদের সুবিধার্থে আন্তঃটার্মিনাল সিটি বাস সার্ভিস চালু করা হবে। ওই সভায় ঢাকা মহানগরীর প্রান্ত সীমায় চারটি আধুনিক বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের জন্য সিটি করপোরেশনকে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। গত বুধবার দুই মেয়র সাভারের ভাটুলিয়া-বিরুলিয়া, হেমায়েতপুর, কেরানীগঞ্জ ও কাঁচপুর এলাকার প্রস্তাবিত জায়গাগুলো পরিদর্শন করেন। মেয়র তাপস বলেন, আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল নির্মাণের জন্য বাস রোট র্যাশনালাইজেশন কমিটির গত সভায় ১০টি জায়গার প্রস্তাব করা হয়। এগুলোর মধ্য থেকে আমরা চারটি স্থান চূড়ান্ত করব। এগুলো দেখে আগামী জানুয়ারি মাসে এক সভা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এরপর প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। আমাদের লক্ষ্য হলো ঢাকা শহরের ভেতরের চাপ কমিয়ে আনা। মেয়র তাপস আরও জানান, গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ সিটি টার্মিনাল হিসেবে পরিচালিত হবে। এগুলো সরিয়ে নেওয়া হবে না। তিনি বলেন, বর্তমানে দেখা যাচ্ছে সিটি বাসগুলো এই টার্মিনাল ব্যবহার করতে পারছে না। আন্তঃজেলা বা দূরপাল্লার বাস সেগুলোকে টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহার করছে। যত্রতত্র সিটি বাসগুলো রাস্তার উপর যানজট, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ঢাকার দুই মেয়র রাজধানীর বাইরে ৪টি বাস টার্মিনাল স্থাপনের মাধ্যমে রাজধানীকে যানজটমুক্ত করতে পারবেন বলে আশা করা যায়। বেশ কয়েক বছর ধরে রাজধানীর প্রান্ত সীমায় টার্মিনাল স্থাপনের পরিকল্পনা ঝুলে ছিল। এবার দুই মেয়র এই অসাধ্যকে সাধ্যে আনতে কাজ করছেন। আমরা মনে করি তারা ব্যর্থ হবে না।