সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   ফিল্ম সিটি থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধুর’ নাম   সিলেটের সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহিয়া গ্রেপ্তার   অনন্য অসাধারণ শেখ হাসিনা আমাদের গর্ব   নরসিংদীতে ‘থার্টি ফার্স্ট’ উপলক্ষে চাঁদা না দেয়ায় ব্যবসায়ীকে কোপালো সন্ত্রাসীরা   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
সামাজিক বিশৃঙ্খলার মূলে মাদক
মোহাম্মদ সাইদুর রহমান
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০:৪৮ এএম আপডেট: ২৫.১২.২০২০ ১:৫৩ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ

নেশা ও মাদক মানব-সভ্যতার চরম শত্রু। বর্তমান সময়ে আমাদের সমাজে মাদক ও মাদকাসক্তির প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলছে। বিশেষত: যুব সমাজের জন্য মাদক ও মাদকাসক্তি মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাদকের বিষাক্ত ছোবলে প্রতিনিয়ত আক্রান্ত হচ্ছে অসংখ্য সম্ভাবনাময় জীবন। সমাজের যাবতীয় পাপাচার, অন্যায়, বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতার অধিকাংশের মূলেই মাদক ও মাদকাসক্তি। মাদক সেবনে মানুষের বিবেক ঠিক না থাকায়, মাদকাসক্তব্যক্তি যেকোন ধরণের অপরাধে সম্পৃক্ত হতে পারে। তাই ইসলামে  যেকোন মাদকবস্তুু কেনা-বেচা এবং সেবন হারাম করেছে। মাদকের ব্যাপারে কোরআন ও হাদিসে কঠোর হুঁশিয়ারি প্রদান করা হয়েছে।
পবিত্র কোরআনুল কারিমে বলা হয়েছে-‘হে ঈমানদারগণ! মদ, জুয়া, প্রতিমা, লটারী এসবই শয়তানের অপবিত্র কাজ। তোমরা এগুলো থেকে বিরত থাকো। আশা করা যায়, তোমরা সাফল্য লাভ করতে পারবে।’(সূরা মায়িদা-৯০)। কোরআন মাজিদের অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-‘ শয়তান মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও হিংসা-বিদ্ধেষ সৃষ্টি করতে চায় এবং আল্লাহর জিকির ও নামাজ হতে তোমাদের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে থাকে। তাই তোমরা এসব জিনিস হতে বিরত থাকবে।’(সূরা মায়িদা-৯১)। আরেক জায়গায় বলা হয়েছে, হে নবী! তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলে দিন, উভয়ের মধ্যেই নিহিত রয়েছে মহাপাপ। যদিও এতে মানুষের জন্যে কিছুটা উপকারিতাও রয়েছে। এগুলোর পাপ উপকারের চেয়ে অনেক বড়। (সূরা বাকারা-২১৯)।

হাদিসে এব্যাপারে নির্দেশনা এসেছে-হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন-‘সকল নেশা জাতীয় দ্রব্যই ‘খমর’ তথা মদের অন্তর্ভুক্ত। আর সব ধরনের মদই হারাম। (মুসলিম)। হজরত আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যদি কেউ মদ পান করে, আল্লাহ তার চল্লিশ দিনের নামাজ কবুল করেন না। আর যদি এ অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করে; তবে সে জাহান্নামি হবে। কিন্তু যদি সে লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেবেন। এরপর যদি দ্বিতীয় বার মাদক গ্রহণ করে তাহলে তার চল্লিশ দিনের নামাজ কবুল  হবে না। তবে যদি দ্বিতীয় বার তওবা করে, আল্লাহ তওবা কবুল করবেন। এরূপ যদি চতুর্থ বার সে পুনরায় মদ পান করে, তাহলে আল্লাহ তায়ালার ওপর হক হয়ে যায় যে তিনি তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন’। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মদ সকল অশ্লীলতার মূল ও মারাত্মক কবিরা গুনাহ।  মাদক ও মাদকাসক্তির প্রতি রাসুল (সা.) এর অভিসম্পাদ:মাদক ও মাদকাসক্তির সাথে সম্পর্ক রাখে এমন দশ শ্রেণীর লোকের প্রতি রাসুল (সা.) অভিশাপ করেছেন। ১. যে লোক মদের নির্যাস বের করে। ২. প্রস্তুুতকারক। ৩. মদপানকারী। ৪. যে পান করায়। ৫. মদের আমদানীকারক। ৬. যার জন্য আমদানী করা হয়। ৭. বিক্রেতা। ৮. ক্রেতা। ৯. সরবরাহকারী এবং ১০. মাদক ব্যবসায় লভ্যাংশ ভোগকারী। আব্দুল্লাহ ইবনে আস (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, মদ্যপায়ী অসুস্থ হলে তাকে দেখতে ও সেবা করতে যেও না। ইসলামের প্রাথমিক যুগে মাদকসেবনকারীকে শাস্তি স্বরূপ চল্লিশ দোররা দেয়া হতো। হযরত ওমর (রা.)-এর সময় আশি দোররা দেয়া হতো। মিরাজের রাতে মহানবী (সা.) বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি দেখেছেন। সেখানে মদ, মাদক ও নেশা গ্রহণকারীদেরও শাস্তি দেখেছেন। সেখানে তিনি দেখেছেন যে নেশাগ্রস্ত ব্যক্তিরা জাহান্নামিদের শরীর থেকে নির্গত বিষাক্ত নোংরা পুঁজ পান করছে। (বুখারি ও মুসলিম)।

ইসলামি দৃষ্টিকোণে মাদক ও মাদকাসক্তির নানাবিধ কুফল এবং ভয়াবহ পরিণাম তো রয়েছেই, পাশাপাশি সামাজিক এবং ব্যক্তিগত পর্যায়েও মাদকের ছোবল ভয়ংকর। যেকোন প্রকার মাদকদ্রব্য যা নেশা সৃষ্টি করে, সুস্থ মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটায় এবং জ্ঞান ও স্মৃতিশক্তি লোপ করে দেয়, তা হারাম বা নিষিদ্ধ, চাই তা প্রাকৃতিক হোক যেমন- মদ, তাড়ি, আফিম, গাঁজা, ইত্যাদি অথবা রাসায়নিক হোক যেমন- হেরোইন, মরফিন, কোকেন, প্যাথেড্রিন ইত্যাদি। মাদক মানুষের শরীরে বিভিন্ন ক্ষতি সাধন করে থাকে। নেশাদ্রব্য গ্রহণের ফলে ধীরে ধীরে মানুষের হজম শক্তি বিনষ্ট হয়, খাদ্যস্পৃহা কমে যায়, চেহারা বিকৃত হয়ে পড়ে, স্নায়ু দুর্বল হয়ে যায়, শারীরিক ক্ষমতা লোপ পায়, কিডনী বিনষ্ট করে, মস্তিষ্কের লক্ষ লক্ষ সেল ধ্বংস করে ফেলে, যেটা কোন চিকিৎসার মাধ্যমেই সারানো সম্ভব নয়। মাদক সেবনের ফলে লিভার সিরোসিস রোগের সৃষ্টি হয়, যার চিকিৎসা দুরূহ।

ইউরোপীয় ও পাশ্চাত্য সভ্যতা মদ, নারী ও সম্পদের উপর প্রতিষ্ঠিত। আধুনিক বিশ্বে এ সভ্যতা চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে। ইসলাম মানুষকে দৈহিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক, সামাজিক ও নৈতিক অধঃপতন থেকে বিরত থাকার আহবান জানিয়ে সমাজকে সুসভ্য করার জন্য মাদক নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। সমাজ থেকে নেশা ও মাদক নিশ্চিন্ন করার জন্যে সরকার ও সমাজের সকল স্তরের লোকজন এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মাদকদ্রব্য গ্রহণ, বহন ও বিতরণ বন্ধ করতে কঠোর শাস্তির প্রয়োগ করতে হবে। অন্তরে মহান আল্লাহর ভয় এবং রাসুল (স.)-এর প্রেম জাগ্রত করে যাবতীয় হারাম ও নেশাদার বস্তুু থেকে দূরে থেকে যথাযথভাবে ইসলামী আদর্শ গ্রহণ করলেই সমাজ থেকে মাদক দ্রব্যসহ সকল অপরাধ প্রবণতা দূর হবে এবং সমাজ হবে সুন্দর ও চির শান্তিময়।
- ব্যাংকার



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
https://www.dailyvorerpata.com/ad/BHousing_Investment_Press_6colX6in20200324140555 (1).jpg
https://www.dailyvorerpata.com/ad/last (2).gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/431205536-ezgif.com-optimize.gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/agrani.gif
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]