দেশের শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে উজ্জ্বলতম নক্ষত্র ছিলেন এম এ হাসেম। তার গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানে লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে।
তামাক পণ্যের ব্যবসা দিয়ে শুরু হলেও গত পাঁচ দশকে তিনি ব্যবসা-বাণিজ্যের বিস্তার ঘটিয়েছেন আবাসন, আমদানি-রফতানি, পার্টিকেল বোর্ড, ইস্পাত, প্লাস্টিক, ভোগ্যপণ্য, ব্যাংক-বীমাসহ বিভিন্ন খাতে। এ সময় একে একে গড়ে তোলেন ৬০টিরও বেশি কোম্পানি।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন এম এ হাসেম। করোনা পজিটিভ হওয়ার পর গত ১১ ডিসেম্বর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর অবস্থার অবনতি হলে গত ১৬ ডিসেম্বর তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।
বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১টা ২০ মিনিটে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এই আলোকিত মানুষটি।
দেশের বিশিষ্ট এই শিল্পপতি অর্ধশতক আগে তামাকপণ্য দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। সত্তরের দশকে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন এম এ হাসেম করপোরেশন লিমিটেড। যেটির সদর দপ্তর ছিল চট্টগ্রামে। এরপর গত পাঁচ দশকে তিনি আবাসন, আমদানি-রফতানি, পার্টিকেল বোর্ড, ইস্পাত, প্লাস্টিক, ভোগ্যপণ্য, ব্যাংক-বীমাসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসার পরিধি বাড়ান। ব্যবসা ও শ্রমবান্ধব এ মানুষটির গড়ে তোলা ৬০টির বেশি কোম্পানিতে হয় লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান।
ব্যাংক, বীমা ও শিক্ষাখাতেও তার ছিল বড় অবদান। তিনি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ছিলেন। এর মাধ্যমে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়েছেন। নিজের প্রতিষ্ঠানে উপবৃত্তিসহ নানা আর্থিক সহায়তা চালু করেন। এম এ হাসেম এক সময় সিটি ব্যাংক লিমিটেড ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন। জনতা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিও গড়ে তোলেন তিনি।
দেশের বড় শিল্পগ্রুপগুলোর মধ্যে অন্যতম পারটেক্স গ্রুপ। দেশের চাহিদা মিটিয়ে তার গড়া প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে উৎপাদিত পণ্য রফতানি হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি নিজের ব্যবসায় পরিবর্তন আনেন। পারটেক্স গ্রুপ ও পারটেক্স স্টার গ্রুপ থেকে আলাদা করে প্রতিষ্ঠা করা হয় আম্বার গ্রুপ। এসব গ্রুপের অধীনে রয়েছে ৬০টির বেশি কোম্পানি। সব প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব তিনি ছেলেদের হাতে তুলে দেন।
এম এ হাসেমের পাঁচ ছেলে। এর মাঝে বড় ছেলে আজিজ আল কায়সার টিটো পারটেক্স স্টার গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এবং সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান। দ্বিতীয় ছেলে আজিজ আল মাহমুদ মিঠু পারটেক্স স্টার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং আইডিএলসি ফাইন্যান্সের চেয়ারম্যান। পারটেক্স গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির দেখভাল করেন তার দুই ছেলে আজিজ আল মাসুদ ও আশফাক আজিজ রুবেল। আর শওকত আজিজ রাসেল দেখছেন আম্বার গ্রুপ। এম এ হাসেমের স্ত্রী সুলতানা হাসেম এবং পুত্রবধূরাও এসব কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে আছেন।
এম এ হাসেম ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে বিএনপির প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর তিনি রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে ব্যবসায় মনোনিবেশন করেন। সর্বশেষ ২০১৬ সালে বিএনপি ছাড়ার ঘোষণা দেন।