বাংলাদেশ ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ব্যস্ততার বছর হতে পারতো ২০২০ সাল। কিন্তু করোনার প্রকোপে হঠাৎ করেই থমকে যায় বাংলাদেশসহ বিশ্ব ক্রিকেট। তাই ব্যস্ততম বছরটি লকডাউনেই কাটিয়ে দিল ক্রিকেটাররা। ম্যাচ যা হয়েছে বছরের শুরুতে আর বছরের শেষে। সেটি নিয়েই আজকের বিশ্লেষণ।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ব একাদশ ও এশিয়া একাদশের দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের মাটিতে। সবকিছু ঠিক থাকলে মার্চেই সেটি অনুষ্ঠিত হতে পারতো। যেখানে খেলতে আসার কথা বিশ্বের বাঘা বাঘা সব ক্রিকেটারদের। করোনার গ্রাসে সেটিও স্থগিত হয়ে গেল। মুজিববর্ষের ব্যপ্তি বেড়েছে, কিন্তু এই দুটি ম্যাচ হবে কিনা তাও নিশ্চিত না।
টেস্ট স্ট্যাটাস পাবার পর সূচি অনুযায়ী ২০২০ সালেই সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলার কথা বাংলাদেশের। প্রায় ১০টি টেস্ট খেলার কথা ছিল এবার। এক বছরে এত টেস্ট কখনোই খেলেনি বাংলাদেশ। কিন্তু করোনার গ্রাসে চলতি বছর বাংলাদেশের প্রাপ্তি মাত্র ২টি টেস্ট। সেই দুই টেস্ট বাংলাদেশ খেলেছে পাকিস্তান ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। পাকিস্তানে গিয়ে ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে দল। দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ব্যবধানে জয় পেয়েছে টাইগাররা।
এর মধ্যে করোনার কারণে পাকিস্তান সফরে একটি, শ্রীলঙ্কা সফরে তিনটি, দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি করে টেস্ট ম্যাচ পিছিয়ে গেছে। এই ম্যাচগুলো ভবিষ্যতে পূরণ হবে কিনা তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুটি বা তিনটি টেস্ট আয়োজনের সম্ভাবনা আছে।
এ তো গেল টেস্ট ম্যাচ না হওয়ার আক্ষেপ। ওয়ানডে নিয়েও বাংলাদেশের আক্ষেপ কম নয়। বরাবরের মত ওয়ানডেতে বাংলাদেশ শক্তিশালী দল। করোনার কারণে এই ফরম্যাটেও বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়নি টাইগাররা। এই বছর পাকিস্তান সফর ছিল, যুক্তরাজ্য সফরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ছিল তিনটি ওয়ানডে ও চারটি টি-টোয়েন্টি। এছাড়াও এশিয়া কাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পিছিয়ে গেছে। এর মধ্যে আগামী বছর হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপ। তবে পাকিস্তান ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচগুলো হবার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
চলতি বছর বাংলাদেশ খেলেছে মাত্র ৩টি ওয়ানডে। তাও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। সিলেটের ওই তিন ম্যাচে অবশ্য জয় পায় বাংলাদেশ। ১৯৯৫ সালের পর এত কম ওয়ানডে খেলেনি বাংলাদেশ।
জিম্বাবুয়ে সিরিজের পরপরই ওয়ানডের নেতৃত্বকে বিদায় জানান মাশরাফি বিন মর্তুজা। দেশের সবচেয়ে সফল এই অধিনায়ক বিদায় নেন নিজের নেতৃত্বে ৫০ তম জয় নিয়ে। তার বিদায়ে আবেগাপ্লুত হয়ে যান সতীর্থরা।
মাত্র ৩ ম্যাচ হলেও সেই সিরিজে বাংলাদেশ গড়েছে অনেক রেকর্ড। দেশের হয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোরের নিজের রেকর্ড ভেঙে নতুন করে গড়েন তামিম ইকবাল। পরের ম্যাচেই সেই রেকর্ড নিজের করে নেন লিটন কুমার দাস। দুজনে গড়েন জুটির রেকর্ডও।
চলতি বছর মাত্র ৪টি টি-টোয়েন্টি খেলেছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে পাকিস্তানের বিপক্ষে ছিল দুটি হার, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুটি জয়।
ঘরোয়া ক্রিকেটও তেমন মাঠে গড়াতে পারেনি এই বছর। মার্চে এক রাউন্ড হতেই স্থগিত হয়ে যায় ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। এছাড়া ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ, তৃতীয় বিভাগের মতো লিগগুলো তো মাঠেই নামতে পারেনি। জাতীয় লিগ, বিসিএলের মতো টুর্নামেন্টগুলো আয়োজন করা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশে করোনার প্রকোপ একটু কমায় দেশের ক্রিকেট ফিরে অক্টোবরে হওয়া প্রেসিডেন্টস কাপ দিয়ে। এরপর বিপিএলের বিকল্প হিসেবে দেশের ক্রিকেটারদের নিয়েই হয়ে গেল বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ। এই টুর্নামেন্ট দিয়েই ক্রিকেট মাঠে ফিরে নিষেধাজ্ঞা কাটানো সাকিব আল হাসান।
এ তো গেল জাতীয় দলের হিসেব নিকেশ। যুব ক্রিকেটের জন্য এই বছরটি অসাধারণ অর্জনের বছর। এই বছরেই ভারতকে হারিয়ে দেশকে প্রথম বিশ্বকাপের শিরোপা এনে দেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের যুবারা।
ভালো যায় নি বাংলাদেশ নারী দলেরও। গ্রুপ পর্বের সব ম্যাচ হেরে শূন্য হাতে বিদায় নেয় সালমা খাতুনের দল। নিউজিল্যান্ডকে ৯১ রানে থামিয়ে আশা জাগিয়েছিল জয়ের কিন্তু ব্যাটিং ব্যর্থতায় ১৭ রানে হেরে যায় তারা।
ভারতের উইমেন্স টি-টোয়েন্টি চ্যালেঞ্জে এবার দ্বিতীয়বারের মত অংশ নিয়েছেন জাহানারা আলম। নারীদের আইপিএল খ্যাত সেই টুর্নামেন্টে প্রথমবার খেলেছে সালমা। ট্রেইলব্লেজার্সের শিরোপা জয়ে পারফরম্যান্স দেখিয়েছে টাইগ্রেস এই অলরাউন্ডার।
বছরের নানা সময়ে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন মাশরাফি বিন মর্তুজা, মাহমুদউল্লাহ, মুমিনুল হক, আবু জায়েদ চৌধুরি, সাইফ হাসান, নাজমুল ইসলাম অপু, মাহমুদুল হাসান জয়সহ আরও কয়েকজন ক্রিকেটার।
২০২০ সাল হতে পারতো বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনেক প্রাপ্তির বছর। কিন্তু করোনার গ্রাসে সেটি পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের আফসোসের বছরে। ক্রিকেটারদের আশা, নতুন বছরে নতুন উদ্যোমে শুরু হবে দেশের ক্রিকেট।