বঙ্গবন্ধু ও ইন্দিরার কারণেই বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছিল: মেজর জেনারেল (অব:) মোহাম্মদ আলী শিকদার
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০:১৭ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কে সাম্প্রতিক কর্মচাঞ্চল্য এই সম্পর্কের নানা দিক নিয়ে জনমনে কর্মচাঞ্চল্যতার জন্ম দিয়েছে। দুই দেশের মানুষের ইতিহাস, ভূগোল, ভাবাবেগ, মূল্যবোধ ও স্বার্থের এক অপূর্ব ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে এক বিশেষত্ব দান করেছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা ভারতীয় সরকার ও জনগণ এবং বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের মধ্যে অপূর্ব সমন্বয় ও সমঝোতা তৈরি হয়। এই সম্পর্ক মাঝখানে কিছু সময়ের জন্য চির ধরলেও তা আবার পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরে গিয়েছে ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর। তিনি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কে নতুন গতি সঞ্চার হয়েছে।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ১৯৮ তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব:) মোহাম্মদ আলী শিকদার, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সামরিক গবেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ, এফবিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি এবং ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা স্বপন কুমার সাহা। দৈনিক ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
মেজর জেনারেল (অব:) মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, এই মাসটি বিজয়ের মাস তাই আমি স্মরণ করছি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেকে। এই বিস্ময়কর ও অভূতপূর্ব বিজয়ের পিছনে বঙ্গবন্ধুর অবদান অনস্বীকার্য তো বটেই কিন্তু এর পিছনে আরও একজন যার অবদান না বললেই নয়। এই বিজয়ের পিছনে আরেকজন নেত্রী যে সবচে বড় ভূমিকা রেখেছেন, যার ভূমিকা না থাকলে এতো বড় বিজয় অর্জন সহজে হতো না, তিনি হচ্ছেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী। তার ভীষণ দূরদর্শী নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক সাহস এবং তার যে বিচক্ষণতা তিনি সে সময় আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখিয়েছেন, সে কারণেই আমরা এতো দ্রুত বিজয় অর্জন করতে পেরেছি। সুতরাং আজকে যখন আমরা আলোচনা করছি তাই আমরা স্মরণ করছি ভারতের জনগণ বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের মানুষদেরকে, ভারতের সশস্ত্র বাহিনীদেরকে যারা আমাদের এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে শাহাদাত বরণ করেছিলেন তাদের প্রতি। আওয়ামী লীগই প্রকৃত বন্ধু; এটি কোন কথার কথা নয়, এটি কোন রাজনৈতিক বক্তব্য নয়। এটাই বাস্তবতা। বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে তিনটি ধাপে। একটি হচ্ছে স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময়ে, সে সম্পর্ক তৈরি করেছেন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী। তারা দুজনই একটি বিষয়ে একত্রে ছিলেন যে, দুটি রাষ্ট্র যদি একই আদর্শে পরিচালিত হয় অর্থাৎ উদার ধর্ম নিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র যদি পাশাপাশি থাকে তাহলে এখানে কোন ধর্মান্ধতা থাকবে না এবং দুই দেশের মধ্যে একটি নিবিড় সম্পর্ক বিরাজমান থেকে দুই দেশের মানুষ একইভাবে সমস্ত অপশক্তিকে পরাজিত করে তাদের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে যাবে। এই সমঝোতার ভিত্তিতেই আমাদের দুই দেশের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল। এবং এই সমঝোতার প্রতিফলন দেখেছি আমরা ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চের পরে যখন যুদ্ধটা শুরু হয় তখন থেকে। তখন থেকেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে ভারতের জনগণ, ভারতের সশস্ত্র বাহিনী, ভারতের সীমান্ত রক্ষা বাহিনী যে সমস্ত সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাৎক্ষনিকভাবে; এটা যদি পূর্ব বোঝাপড়া না থাকতো তাহলে কিন্তু হত না।