অনুপ্রবেশকারী বেনজীর নিশির বহিষ্কার চায় ছাত্রলীগের বৃহৎ অংশ, তদন্ত শুরু হচ্ছে!
উৎপল দাস
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ১:১৫ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন সাবেক সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে সবচে বেশি অনুপ্রবেশ ঘটেছিল। এই ধারা থেকে বের হওয়ার জন্য সব ধরণের চেষ্টা করা হলেও এখনো পুরোপুরি অনুপ্রবেশমুক্ত হতে পারেনি আল নাহিয়ান খান জয় এবং লেখক ভট্টচার্যের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে গড়া ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনটি বারবার ইমেজ সংকটে পরেছে শুধুমাত্র অনুপ্রবেশকারীদের কারণে। এই অনুপ্রবেশকারীরা ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাদের মনোরঞ্জন করে এখনো গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল আছেন। তাদের মধ্যে একজনের নাম বেনজীর হোসেন নিশি। যিনি একাধারে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল ছাত্রলীগের সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে নানা তদবির, সিট বাণিজ্য, পারিবারিকভাবে বিএনপির সম্পৃক্তার অভিযোগ, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছাড়াও রয়েছে সচিবালযে নানা তদবিরের অভিযোগ। বেনজির হোসেন নিশি ওরফে আশার বিরুদ্ধে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ থাকছে পথম পর্ব।
সর্বশেষ সোমবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের নির্বাচিত এজিএস এবং হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফাল্গুণী দাস তন্বীকে শাসন করার নামে রক্তাক্ত করা এবং মোবাইল ছিনিয়ে নেয়ার দায়ে অভিযুক্ত এই নেত্রী নিশির সঙ্গে ভোরের পাতার পক্ষ থেকে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন ৬ মিনিটের বেশি সময় বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টার পর জানান, আমরা যারা ছাত্রলীগের শীর্ষপদে আছি তাদের কাছে তন্বীর নামে নানা বিচার আসছিল বেশ কয়েক মাস ধরেই। এটা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারাও জানেন। তবে জয়-লেখককে না জানিয়েই সাংগঠনিক পন্থায় বিচার না করে নিজেই শাসন করার দায়িত্ব নিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ইনিয়ে বিনিয়ে বারবার নিশি বলতে থাকেন, আমরা তো শাসন করতেই গিয়েছিলাম। বুঝাতেও গিয়েছিলাম। মারতে চাইনি। তন্বী বেয়াদবি বেশি করেছিল, তাই একটু সাইজ দিয়েছি মাত্র। এ প্রতিবেদক ছোট্ট করে আবারো প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, আপনি স্বপ্রনোদিত হয়ে কেন শাসন করতে গেলেন। এটার দায়িত্ব কি জয় লেখক আপনাকে দিয়েছেন। উত্তরে তিনি আমতা আমতা করে বলতে থাকেন. বিষয়টা আসলে আমরা নিজেদের মধ্যেই শেষ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মেয়েটার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমে গেছে। হলে সিট বাণিজ্য করার অভিযোগ নিয়ে বারবার তিনি তন্বীকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা চালাতে থাকেন। এমনকি তার কাছে নাকি একটি ভয়েস রেকর্ডও রয়েছে। তারপর কেন নিজে জুনিয়র কর্মীর গায়ে হাত তুললেন এ কথা জানতে চাওয়ার আগেই তিনি প্রশ্নটি সুকৌশলে এড়িয়ে যান। বারবার বলেন, আমরা এমন কিছু করতে যাইনি। কিন্তু ঘটনা ঘটে গেছে। এখন কি আর করার আছে? এরপর তার পারিবারিক রাজনীতি এবং তার বিরুদ্ধে সুনিদিষ্ট কিছু প্রশ্ন করতে গেলেই ফোন কেটে দেন এই বেনজীর নিশি।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, মাগুরা মেয়ে হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন না এই নীশি। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মেহেদী হাসান মোল্লা তাকে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের নেতা বানানোর প্রস্তাব দিলেও তিনি প্রত্যাখান করেছিলেন। কেননা তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না আসলে ছাত্রলীগ করবেন না এমন একটা ধারণা নিয়ে বেড়ে ওঠা নিশি পরের কমিটিতে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্সকে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে হলের নেতা বনে যান। সেই থেকে শুরু। বেপোরোয়া জীবনাচরণ এবং সর্বশেষ গোলাম রাব্বানীকে জিম্মি করেই গণভবনের অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার মঞ্চে উঠার সুযোগ করে নেন।
ফাল্গুণী দাস তন্বীকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করার অপরাধে এই নিশি এবং শামসুন নাহার হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি যিনি ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের ভিপি প্রার্থী হয়েও শুধুমাত্র সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নানা অত্যাচার করার কারণে ফেল করেছিলেন তার নাম জিয়াসমিন শান্তা। তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার কথা ইতিমধ্যেই গণমাধ্যমে জানিয়েছেন আল নাহিয়ান খান জয় এবং লেখক ভট্টাচার্য। তারা দুজনই বলেছেন, ছাত্রলীগে কোনো গুণ্ডামি চলবে না। ছাত্রলীগ আদর্শিক সংগঠন। নিজে আইন হাতে তুলে নিতে পারেন না কেউ। আমাদের না জানিয়ে নিশি এবং শান্তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক তদন্ত কমিটি হবে। এমনকি অভিযোগকারী এবং রক্তাক্ত আমাদের কর্মী ফাল্গুনীর পাশে দাঁড়িয়ে পুরো বিষয়টা জানবো। তারপর অবশ্যই যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ছাত্রলীগ কোনো বিতর্কিতকে পশ্রয় দিবে না। এটা শেখ হাসিনার ছাত্রলীগ। এখানে যারাই অনুপ্রবেশকারী রয়েছে তাদের বহিষ্কার করার অধিকার নেত্রী আমাদের দিয়েছেন। আমরা শুধুমাত্র শেখ হাসিনার কাছেই দায়বদ্ধ।
এদিকে, ছাত্রলীগের বিতর্কিত বেনজীর হোসেন নিশিকে বহিষ্কারের দাবি তুলেছেন খোদ ছাত্রলীগেরই একটি বৃহৎ অংশ। দীর্ঘদিন ধরে অনুপ্রবেশকারী হিসাবে পরিচিত থাকলেও নিশি এবং শান্তা মিলে আবারো সংগঠনকে বিতর্কিত করেছে। ছাত্রলীগের তিনজন সহ-সভাপতি, একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং আরো ২০ জন কেন্দ্রীয় নেতা বলেছেন, বেনজীর নিশির জন্য ছাত্রলীগের ইমেজ সংকট হতে দেয়া যাবে না। এ বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে অবশ্যই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে এই ঘটনার বিচার গণভবনে যাবে। ইতিমধ্যেই বিষয়টি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সকল নেতাকে জানানো হয়েছে। তাদের একটাই কথা, যে বা যারা সংগঠনের সম্মান হানি করেছে, তাদের বহিষ্কার করতেই হবে।
আগামী পর্বে: বেপোরোয়া বেনজীর নিশির দাপটের পিছনের শক্তি কারা!