সারা দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত একদিনে আরও ৩০ জন প্রাণ হারিয়েছে। এই রোগে নতুন করে শনাক্ত হয়েছে আরও ১ হাজার ৩৬৭ রোগী। গতকাল বুধবার বিকেলে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সারা দেশে করোনা পরিস্থিতির সর্বশেষ এই তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত শনাক্ত ১ হাজার ৩৬৭ জনকে নিয়ে দেশে সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৪ হাজার ৮৬৮ জন রোগী। এদিকে, গত একদিনে মারা যাওয়া ৩০ জনসহ দেশে করোনায় সর্বমোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৩৫৯ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাসা এবং হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে আরও ২ হাজার ৪১৬ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন গত একদিনে। তাতে এ পর্যন্ত সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৩৪৫ জন।
বাংলাদেশে করোনায় প্রথম সংক্রমিত রোগী ধরা পড়ে গত ৮ মার্চ, এই সংখ্যা ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত সাড়ে ৪ লাখ অতিক্রম করে যায়। যার মধ্যে গত ২ জুলাই সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়। সেই দিন ৪ হাজার ১৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। আর প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর অর্থাৎ গত ১৮ মার্চ দেশে করোনায় প্রথম মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করা হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে। এরপর ১২ ডিসেম্বর এই মারা যাওয়া রোগীর সংখ্যা সাড়ে সাত হাজার ছাড়িয়ে গেল। এই হিসেবের মধ্যে ৩০ জুন এক দিনেই সর্বোচ্চ মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়। সেই দিন ৬৪ জন মারা যান। এদিকে, বিশ^ করোনা রিপোর্ট প্রকাশকারী প্রতিষ্ঠান জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য মতে, সারাবিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে ২৭তম স্থান এবং মৃতের সংখ্যার দিক থেকে ৩৩তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত একদিনে দেশে বিভিন্ন ১১৪টি আরটি-পিসিআর ল্যাব, ১৯টি জিন-এক্সপার্ট ল্যাব ও ২৯টি র্যাপিড অ্যান্টিজেন ল্যাবে সর্বমোট ১৬৩টি ল্যাবে ১৫ হাজার ৯৩২টি নমুনার এসব পরীক্ষা করা হয়। এ পর্যন্ত সারা দেশে ওই পরীক্ষাগারে ৩১ লাখ ২২ হাজার ৪২৬টি নমুনা পলীক্ষা করা হয়। শতকরা হিসেবে গত একদিনে নমুনা পরীক্ষার তথ্য মতে শনাক্তের হার ৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ১৭শতাংশ। সেই হিসেবে শনাক্ত রেটে সুস্থতার হার ৮৮ দশমিক ০১ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৬। সব মিলিয়ে সুস্থতার হার ভালো দাবি করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। যেখানে সরকারি ব্যবস্থাপনায় এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২৪ লাখ ৮২ হাজার ৫২২। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হয়েছে ৬ লাখ ৩৯ হাজার ৯০৪টি।
গত একদিনে যারা মারা গেছেন, পুরুষের চেয়ে নারীর মৃত্যু কম হয়েছে। যেখানে ২১ জন পুরুষ আর নারী ৯ জন। এদের সবাই হাসপাতালে মারা যান বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। আর বয়েসের হিসেবে ষাটোর্ধ্ব লোকের সংখ্যা বেশি। যেখানে ১৮ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি, ৫ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৫ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে এবং ২ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে বলে জানা গেছে। আর বিভাগী হিসেবে ঢাকা বিভাগে সব চেয়ে বেশি। যেখানে মৃতদের মধ্যে ১৬ জন ঢাকা বিভাগের, ৯ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ১ জন করে মোট ৩ জন রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের এবং ২ জন রংপুর বিভাগের রোগী ছিলেন বলে জানা গেছে। দেশে এ পর্যন্ত মারা যাওয়া সংখ্যায় সব চেয়ে বেশি পুরুষ মারা গেছে। যেখানে ৭ হাজার ৩৫৯ জনের মধ্যে ৫ হাজার ৬০৭ জনই পুরুষ এবং ১ হাজার ৭৫২ জন নারী।
মৃতদের মধ্যে ১৬ জন ঢাকা বিভাগের, ৯ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ১ জন করে মোট ৩ জন রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের এবং ২ জন রংপুর বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। এদের মধ্যে ৩ হাজার ৯৯৮ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। এছাড়া আর বিভাগীয় মৃত্যুর পরিসংখানেও ষাটোর্ধ্ব বয়স্কদের মারা যাওয়া সংখ্যা পাওয়া যায় এসব তথ্যে। যেখানে ১ হাজার ৮৭৫ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৮৬৬ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ৩৭১ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ১৫৯ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে, ৫৬ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে এবং ৩৪ জনের বয়স ছিল ১০ বছরের কম। এছাড়া বিভাগীয় তথ্য মতে, ৪ হাজার ২১ জন ঢাকা বিভাগের, ১ হাজার ৩৭২ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ৪৩১ জন রাজশাহী বিভাগের, ৫১৯ জন খুলনা বিভাগের, ২৩৬ জন বরিশাল বিভাগের, ২৯০ জন সিলেট বিভাগের, ৩৩১ জন রংপুর বিভাগের এবং ১৫৯ জন ময়মনসিংহ বিভাগের রোগী পাওয়া গেছে।
প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে। ক্রমেই মহামারি রূপ নিয়ে এই রোগের সংক্রমণ বিশ্বের প্রায় সব দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম সংক্রমণ শনাক্তের কথা খবর দেয় সরকার। প্রথম দিকে রোগী শনাক্তের হার কম ছিল। তবে গত মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। ওই মাসের শেষের দিক থেকে রোগী শনাক্তের হার আস্তে আস্তে ২০ শতাংশের ওপরে উঠে যায়। করোনার প্রাদুর্ভাবের পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ জানুয়ারি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।