প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০:৫১ এএম আপডেট: ২৪.১২.২০২০ ১:১২ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
পুুরান ঢাকার হাকিম আদালতের এজলাসে আইনজীবীকে দুই ঘণ্টা আটকের অভিযোগে ঢাকার এক অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিমের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন আইনজীবীরা। গতকাল বুধবার সকালে মিছিল করে অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূরসহ কয়েকজন বিচারকের এজলাসে ঢুকে পড়েন এবং বিচার চেয়ে সেøাগান দিতে শুরু করেন বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা। এ সময় হৈহুল্লোর মধ্যে আদালতপাড়ার পরিবেশ সরগরম হয়ে যায়। এরফলে বিচার কার্য বন্ধ হয়ে যায়। এসময় ওই বিচারকের এজলাসে তালা লাগিয়ে দেন আইনজীবীরা। পরে পুরানো মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত ভবনের কলাপসিবল গেইটেও তালা লাগিয়ে দেন বলে সেখানে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এদিকে, বিক্ষোভের মুখে ওই ঘটনায় ছুটিতে পাঠানো হয়েছে ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম (এসিএমএম) আসাদুজ্জামান নূরকে।
আইনজীবী মো. মাহবুবুল হক ভূঁইয়া বাবলু বলেন, গত মঙ্গলবার ‘এজলাসে উঠে বিচারকের আসন গ্রহণ করতে দেরি হওয়ায়’ প্রতিবাদ করেছিলেন রুবেল আহমেদ ভূইয়া নামের একজন আইনজীবী। তার এই আচরণের জন্য ক্ষুব্ধ হয়ে বিচারক হাকিম আসাদুজ্জামান নূর ওই আইনজীবীকে দুই ঘণ্টা আটকে রাখেন। ওই ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল সকালে বিক্ষোভ শুরু করেন আইনজীবীরা। পরে ঢাকা বারের কার্যকরী পরিষদের অফিস সেক্রটারি এইচ এম মাসুমসহ কয়েকজন বিষয়টি সুরাহা করতে মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত ভবনে আসেন। আইনজীবী মাসুম বলেন, বিষয়টি নিয়ে তারা বারের সাধারণ সভা আহ্বান করা হবে। এক সহকর্মীকে এজলাসে এভাবে আটকে রাখা আইনগত কোন বৈধতা নেই এই অভিযোগে বুধবার পুরান ঢাকার হাকিম আদালতের ফটকে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ করেন আইনজীবীরা। ঢাকা আইনজীবী সমিতির প্রবীণ সদস্য সৈয়দ আহমেদ গাজী ও মো. রেজাউল করিম নিজাম বলেন, ওই বিচারকের বিষয়ে ‘যথাযথ আইনি ব্যবস্থা’ নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে।
আইনজীবী মাহবুবুল হক ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আইনজীবী রুবেল আহমেদ ভূইয়া গত মঙ্গলবার বেলা ১১টায় একটি মামলার শুনানি করতে বিচারক আসাদুজ্জামান নূরের এজলাসে যান। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর ওই আদালতের পেশকার জানান, দুপুর ১২টায় বিচারক এজলাসে আসবেন। তখন আইনজীবী বলেন, ‘একটা নির্দিষ্ট সময় বলা হোক, তা না হলে আমাদের সমস্যা হয়। সকালে অন্য আদালতেও মামলা থাকে। এক মামলার শুনানি করতে গেলে অন্যটিতে করা যায় না।’ পরে বিচারক এজলাসে উঠে ওই আইনজীবীকে অন্য মামলা সেরে আসতে বলেন। অন্য মামলা সেরে আসার পর আইনজীবী রুবেল তার কনিষ্ঠ সহযোগী আইনজীবীকে পাঠান এ মামলা শুনানি করতে। তখন বিচারক বলেন, ‘সেই আইনজীবীকে আসতে হবে, যিনি সময় বিভ্রাটে পড়েছেন। আইনজীবী রুবেল এজলাসে আসা মাত্রই পুলিশকে ওই আইনজীবীকে আটক নির্দেশ দেন বিচারক। পরে অন্য আইনজীবীরা অনুরোধ করে তাকে এজলাস থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে নেন। এদিকে, আদালত পাড়ায় বিক্ষোভ, উত্তেজনার পর এই বিচারককে ছুটি পাঠানো হয়েছে বলে মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) বরাত দিয়ে জানিয়েছেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ইকবাল হোসেন। বিকালে তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার অনাকাক্সিক্ষত একটা ঘটনা ঘটেছে। একজন আইনজীবীকে ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নূর অসম্মান করেছেন। ওই আইনজীবী ঢাকা আইনজীবী সমিতিতে লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়েছেন। এরপর আমরা এ বিষয়ে সিএমএম জুলফিকার হায়দারের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তিনি আমাদের জানিয়েছেন, তাকে (আসাদুজ্জামান নূর) আপাতত দুদিনের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। আইনজীবী সমিতির সভাপতি বলেন, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। তাকে প্রত্যাহার বা বদলি করা হবে কিনা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়।