প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০:৫১ এএম আপডেট: ২৪.১২.২০২০ ১:১২ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
পরীক্ষা নেওয়ার আগে আবাসিক হল খুলে দেওয়াসহ আরো কয়েকটি দাবিতে আন্দোলনে পথে নেমেছেন ঢাকা বিশ্ববিদালয়ের শিক্ষার্থীরা। রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গতকাল বুধবার সকাল ১১টায় এ দাবিতে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীরা একই দাবিতে সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের কাছে গতকাল দুপুরে স্মারকলিপি দিয়েছে ছাত্রদল। ১৮ মার্চ থেকে অন্য সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও বন্ধ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেশনজট রোধে অনলাইনে পাঠদান চালিয়ে গেলেও পরীক্ষা নিতে পারেনি তারা। সেশনজট নিরসন ও ৪৩তম বিসিএস পরীক্ষার কথা বিবেচনা করে মহামারির মধ্যেই আগামী ২৬ ডিসেম্বর থেকে স্নাতক ফাইনাল ও স্নাতকোত্তরের পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগ ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে পরীক্ষা নেওয়ার রুটিন প্রকাশ করেছে।
শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার খবরে উচ্ছ্বসিত হলেও আবাসিক হল বন্ধ থাকায় ঢাকায় এসে কোথায় থেকে পরীক্ষা দেবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। অধিকাংশ ছাত্র সংগঠন আবাসিক হল খুলে দিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তাই আন্দোলনে নেমেছে শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষার আগে আবাসন নিশ্চিত করা, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রয়োজনে শুধু পরীক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে হল খুলে দেওয়া, পরীক্ষা নেওয়ার পূর্বে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ দেওয়া, প্রয়োজনে মেকাপ ক্লাসের ব্যবস্থা করা, একসাথে দুই সেমিস্টার ফাইনাল না নেওয়া, একটি সেমিস্টার শেষ করে পরবর্তী সেমিস্টারের প্রস্তুতির জন্য নির্দিষ্ট সময় দেওয়া, যেসব বিভাগের পরীক্ষার রুটিন ঘোষণা করা হয়েছে তা বাতিল করে পুনরায় তারিখ ঘোষণা করা এবং অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য বাসে যাতায়াত নিশ্চিত করা, এই দাবিগুলো নিয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন।
স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী আবিদ খান বলেন, ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অনার্স শেষ বর্ষ ও মাস্টার্সের পরীক্ষ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়। এই সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা, এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। হলে থেকে আমরা অনেকে পড়ালেখা করতাম। ঢাকা শহরের কোথায় থেকে এখন আমরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করব? পরীক্ষা নেওয়ার পূর্বে আমাদের এই বিষয়টা চিন্তা করা উচিত।’ রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, ‘অধিকাংশ শিক্ষার্থী দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছে। মধ্যবিত্ত ও নি¤œ মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীর জন্য ঢাকায় থাকার জায়গা ব্যবস্থা করা দুরূহ। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য রীতিমত একটি ঝুঁকি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমাদের যৌক্তিক দাবিগুলো মেনে নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ‘আনুমানিক ৬০% শিক্ষার্থী হলে থেকে পড়াশোনা করে। নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান অনেকে। অধিকাংশই আবার টিউশনি করে চলত। এখন টিউশনিও নাই। এখন সবাই গ্রামে অবস্থান করছে। অনেকের পিতামাতার আয় উপার্জনও একপ্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় আবাসিক হল না খুলে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত অমানবিক।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘এই মহামারি পরিস্থিতিতে হল খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরই জাতীয় কনসেন্ট লাগবে। বিচ্ছিন্নভাবে আমাদের এ রকম সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন। অনেক জায়গায় পরীক্ষা হচ্ছে। শিক্ষাথীদের সুবিধার কথা চিন্তা করেই অনার্স ফাইনাল ও মাস্টার্সের পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, যাতে আমাদের ছেলে-মেয়েরা পিছিয়ে না থাকে।’ শিক্ষার্থীদের আবাসিক সমস্যা স্বীকার করে বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে হলে থেকে পড়ালেখা করত। তাদের জন্য ঢাকায় থাকাটা একটু কষ্ট হবে। তবে এই মহামারিতে শিক্ষার্থীদের এই কষ্টের চেয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও নিরাপত্তার বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ।’