শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   ফিল্ম সিটি থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধুর’ নাম   সিলেটের সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহিয়া গ্রেপ্তার   অনন্য অসাধারণ শেখ হাসিনা আমাদের গর্ব   নরসিংদীতে ‘থার্টি ফার্স্ট’ উপলক্ষে চাঁদা না দেয়ায় ব্যবসায়ীকে কোপালো সন্ত্রাসীরা   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
চরের হাট ও ভাসানী বিদ্যাপীঠ গণহত্যা, খুলনা
লঞ্চবোঝাই ৫০০ যাত্রীকে নামিয়ে গুলি করে হত্যা করেছিল রাজাকাররা
আরিফ রহমান
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০:৪৮ এএম | অনলাইন সংস্করণ

খুলনা সদরের খালিশপুরের নেভাল বেজ এলাকার পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ভৈরব নদী। আর ভৈরব নদী সংলগ্ন একটি এলাকার নাম চরের হাট। বর্তমানে এলাকাটিতে ইট বালুর বাজার, খালিশপুর হাইস্কুল, পুরাতন মাছ কোম্পানি, নতুন মাছ কোম্পানি ও বিজেএমসি’র অফিস রয়েছে। নদীর পূর্ব পাশে শোলপুর ও যুগিহাটি গ্রাম এবং পশ্চিম পাশে চরের হাট। ১৯৭১ সালের ৮ মে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকাররা ভৈরব নদীতে ৩টি মতান্তরে ৫টি শরণার্থী বোঝাই লঞ্চ থামিয়ে অসহায় যাত্রীদের তীরে নামিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে নির্মমভাবে গুলি করে করে। বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ ও শিশুসহ প্রায় ৫০০ লোককে এখানে হত্যা করা হয় একসঙ্গে। জানা যায়, লঞ্চগুলো বর্তমান নড়াইল জেলার রঘুনাথপুর থেকে খুলনা হয়ে ওপার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দিকে যাচ্ছিল। যেহেতু এই গণহত্যায় নিহতদের অধিকাংশের বাড়ি খুলনা শহরের বাইরে তাই তাদের নাম জানা সম্ভব হয়নি। খুলনার স্থানীয় কয়েকজনের নাম জানা গেছে। 

যাদের নাম জানা গেছে তাদের একজন হলেন মুসলীম লীগ খুলনা শাখার সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আইয়ুব হোসেন, তার শিশুপুত্র কামরুল হাসান, তার পিতা মো. হাতেম আহমেদ,  মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বাবলা এবং তার দুই ছেলে-ইবনে  আহমেদ ও মো. ফারুক হোসেনসহ এই একই পরিবারের ১১ জন। এদের বাড়ি নড়াইল হলেও তারা থাকতেন খুলনার রায়পাড়া। ভাসানি ন্যাপের খুলনা শাখার সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক এই গণহত্যায় নির্মমভাবে প্রাণ হারানো হতভাগ্যদের একজন। খুলনা নৌ ঘাটির অন্যতম অফিসার জালাল আকবর এই গণহত্যার সংবাদ পেয়ে লঞ্চঘাটে ছুটে এসে কয়েকজন লেবারের বন্দোবস্ত করে দেন। সাথে হাত লাগান এলাকাবাসী। সবাই মিলে বেশ কয়েকটি বড় বড় গর্ত খুড়ে লাশগুলো পুঁতে রাখে। যদিও এই গণহত্যায় নিহতদের বেশির ভাগ লাশ নদীতে ভেসে যায়। ১৯৭১ : গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের পক্ষ থেকে এখানে সম্প্রতি একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করেছে। 

চরের হাটের কাছেই মাওলানা ভাসানী বিদ্যাপীঠ। এখানেও সংঘটিত হয় নির্মম এক গণহত্যা। মাওলানা ভাসানী বিদ্যাপীঠের পূর্বপাশের বাড়িটি ছিল জমিদার মহীন দাসের বাড়ি। মার্চের পর পরই জমিদার পরিবার বাড়ি ছেড়ে চলে গেলে বাড়িটি গণহত্যার অন্যতম স্থানে পরিণত হয়। এই বাড়ির পশ্চিম পাশে একটি পুকুর ছিল। একাত্তরে কিছু দুর্বৃত্ত বিহারি নিরীহ বাঙালিদের ধরে এনে এখানে হত্যা করে ফেলে দিতো। এর কাছাকাছি ছিলো একটি উঁচু পানির ট্যাংক। দেশ শত্রু মুক্ত হওয়ার পরে এখান থেকে অসংখ্য নরকঙ্কাল, শাড়ি, লুঙ্গি উদ্ধার করা হয় বলে আমরা সাক্ষাৎকার গ্রহণ করতে গিয়ে জানতে পেরেছি। এখানকার গণহত্যা ও বধ্যভূমি সম্পর্কে সৈয়দ আলী হাকিম লিখেছেন- ‘যুদ্ধের পরে আমি সেখানে অনেক মানুষের কঙ্কাল, মাথার খুলি, রক্তাক্ত জামা-কাপড় পড়ে থাকতে দেখেছি। মানুষের মাংস পচা গন্ধে এলাকা অনেকদিন পর্যন্ত ভারী ছিলো। আনাগোনা হতো শিয়াল-কুকুরের। নয়মাস যুদ্ধের পরে যখন আমি সেখানে গেছি, তখনও পচা মাংসের দুর্গন্ধ সহ্য করা যেত না। 

অনেক মাথার খুলিতে তখনও চুল আটকে ছিলো।’ বিদ্যাপীঠের পাশের বাড়িতে থাকতেন ‘বৃহত্তর ফরিদপুরের ইতিহাস’ গ্রন্থের লেখক এম এম তৈয়াবুর রহমান। তিনি তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, ‘এই বিদ্যাপীঠের নতুন ভবন নির্মাণের সময় প্রাচীর নির্মাণের কাজ করতে গিয়ে প্রচুর মানুষের মাথার খুলি, হাড়-গোড় পাওয়া গেছে। এখনও এর আশপাশে খনন করলে প্রচুর কঙ্কাল পাওয়া যাবে। এখানে কয়েক হাজার লোক গণহত্যার শিকার হয়েছে বলে আমার ধারণা।’ চরের হাট এবং ভাসানী বিদ্যাপীঠ দুটো জায়গাই অত্যন্ত পরিচিত জনবহুল স্থান হলেও স্থানীয় মানুষরা এই স্থানে সংগঠিত গণহত্যা সম্পর্কে জানে না। মুক্তিযুদ্ধ এবং গণহত্যার প্রান্তিক ইতিহাস না জানতে পারলে কখনোই নিজের দেশের ইতিহাস সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ রূপে জানা সম্ভব হয় না। তাই এসব ইতিহাস জানা আমাদের কর্তব্য। 



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
https://www.dailyvorerpata.com/ad/BHousing_Investment_Press_6colX6in20200324140555 (1).jpg
https://www.dailyvorerpata.com/ad/last (2).gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/431205536-ezgif.com-optimize.gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/agrani.gif
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]