সোমবার (২১ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ৩.১৫ মিনিটে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার বসুন্ধরা রিভার ভিউ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা ওয়ারী জোনাল টিম।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ১ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টায় এস এম নজরুল ইসলাম হিরা (৫২) নামে এক সাংবাদিক অফিস থেকে বাসায় ফেরার জন্য মতিঝিলের শাপলা চত্বরের উত্তরের পাশে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন। কিছুক্ষণ পর একজন সিএনজি চালক তার গন্তব্য জানতে চান। হিরা তার গন্তব্য সানারপাড় জানালে সিএনজি চালক ৪০ টাকা ভাড়া দিতে বলেন। এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে তিনি সিএনজিতে ওঠেন। এর আগেই সিএনজিতে দুইজন লোক ছিল।
হিরাকে ওই দুই যাত্রীর মাঝে বসানো হয়। সিএনজিটি রাত ৭.৩০ টায় ওয়ারী থানার এস আলম গ্রুপের গ্যারেজের সামনে এসে পৌঁছলে সিএনজিতে থাকা লোকজন তাকে মারধর করে চোখ ও দুই হাত বেঁধে ফেলে। এরপর তার কাছে থাকা একটি স্বর্ণের আংটি, একটি রাডো ঘড়ি, একটি মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এরপর তারা অপহরণের ভয় দেখিয়ে তার পরিবারের কাছে পাঁচ লক্ষ টাকা দাবি করে। একপর্যায়ে রাত ০৮.৪০ টায় তাকে পোস্তগোলা নামিয়ে দিয়ে চলে যায়।
পরে হিরার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ অক্টোবর, ২০২০ ওয়ারী থানায় একটি মামলা রুজু হয়।
গোয়েন্দা ওয়ারী জোনাল টিমের অতিরিক্তি উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আবু আশরাফ সিদ্দিকী জানান, সাংবাদিক এস এম নজরুল ইসলাম হিরার দায়েরকৃত মামলাটি থানার পাশাপাশি ছায়া তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা ওয়ারী জোনাল টিম। তদন্তকালে বিভিন্ন তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে অভিযুক্তদের শনাক্ত করা হয়। এই ছিনতাই চক্রের মূলহোতা তাজুকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার বসুন্ধরা রিভার ভিউ এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত তাজু এই ছিনতাইয়ের ঘটনায় ছিনিয়ে নেওয়া মোবাইলের বিকাশ একাউন্ট থেকে ২৫ হাজার টাকা ক্যাশআউট করাসহ তার সহযোগীদের বিষয়ে তথ্য প্রদান করে। তার সহযোগিদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত তাজু জানিয়েছে, তার সহযোগীরাসহ সিএনজিযোগে মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর ও গেন্ডারিয়া এলাকায় যাত্রীবেশে ছিনতাই করে। এক্ষেত্রে ছিনতাইকারীরা একজন ব্যক্তিকে টার্গেট করে টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে তার গন্তব্যস্থলে পৌছে দেওয়ার জন্য ভাড়া নিয়ে কথা বলে। ভাড়া ঠিকঠাক হলে গাড়িতে তুলে তার গন্তব্যস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। কিছুদূর গিয়ে তাদের সুবিধাজনকস্থানে পৌঁছলে তাজুর সহযোগী যাত্রীবেশে থাকা ছিনতাইকারীরা টার্গেটকৃত যাত্রীকে ভয়ভীতি ও মারধর করে জোরপূর্বক তার নিকট থাকা টাকাসহ অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়। পরবর্তী সময়ে ভিকটিমের মোবাইল ফোন দিয়ে পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে তাদের নিকট হতে মুক্তিপণ বাবদ টাকা দাবি করে। মুক্তিপণ আদায় করতে ব্যর্থ হলে ভিকটিমকে হাত, পা ও মুখ বেঁধে রাজধানীর বাইরে নিরব ও নির্জন স্থানে নিয়ে ফেলে দেয়।
গ্রেফতারকৃত তাজুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে মাদক ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়া যায়। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় তার বিরুদ্ধে রুজুকৃত একটি হত্যা মামলায় সে দীর্ঘদিন কারান্তরীণ ছিল বলে জানান গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা।