#শতাব্দীর সবচে বড় অর্জন হচ্ছে আমাদের বিজয়: পঙ্কজ দেবনাথ।
#সারা বিশ্বই আজ শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্ব দেখছেন: অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান।
#বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে মৌলবাদীদের আস্ফালন সহ্য করা হবেনা: নাসির উদ্দিন আহমেদ।
ডিসেম্বর। বিজয় ও গৌরবের মাস। কালের চাকা ঘুরে দেখতে দেখতে কেটে গেছে বছরগুলো। আমরা বাঙালিরা ২৪ বছরের পাকিস্তানি পরাধীনতার জিঞ্জির ভেঙেছি একাত্তরে। দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জন করেছি মহান বিজয়। আজকের এই বিজয়ের বাংলাদেশের উন্নয়ন ও আস্থার প্রতীক শেখ হাসিনা।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ১৯৬ তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান। দৈনিক ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
পঙ্কজ দেবনাথ বলেন, বিজয়ের মাসে আমি কথা বলার শুরুতেই এই বিজয়ের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি, আরও স্মরণ করছি ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ ইজ্জত হারা মা বোনদের যাদের বিনিময়ে আজকের এই স্বাধীন বাংলায় কথা বলতে পারছি। গৌরবের বিজয়। আসলেই এটা গৌরবের বিজয়। আমাদের শতাব্দীর সবচে বড় অর্জন হচ্ছে আমাদের বিজয়। আমরা এই মাসে বিজয় হয়েছি। এই মাসে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী মুক্তিবাহিনীদের কাছে যৌথ বাহিনীদের ফ্রোসদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। আমরা রক্ত দিয়ে এই বিজয় অর্জন করেছি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উদ্ভাসিত বাঙালি, আসলেই আমরা উদ্ভাসিত তার নেতৃত্বে। বিজয়ের এই মাসে আমাদের নতুন একটি সেতু সংযোগ হয়েছে; পদ্মা সেতু। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়নের জন্য পদ্মাসেতুর গুরুত্ব অপরিসীম। এ সেতু নির্মিত হলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার দূরত্ব অনেকাংশে কমে যাবে, যা দেশের অভ্যন্তরে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে। বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শুধু স্বপ্ন দেখে না, স্বপ্ন সম্পন্ন করেন বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখতে জানে ও স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরিত করার সাহস আছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, তারও আগে বাংলাদেশের মাতৃভাষা এবং বাংলাদেশে স্বাধীনতার পরে স্বৈরশাসকদের পরাভিত করা এবং সকল অসম্ভবকে সম্ভব করাই বঙ্গবন্ধু পরিবারের একটি অন্যতম গুন। সমুদ্র বিজয় থেকে শুরু করে মহাকাশ বিজয়, পদ্মা বিজয় সবই আজ সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। আমি শুধু স্যালুট জানাই বঙ্গবন্ধু কন্যাকে সকল অসম্ভবকে সম্ভব করে বাংলাদেশকে বিশ্বের অনন্য মর্যাদার আসনে নিয়ে গেছেন এই জন্য। আসলে বিজয় নিয়ে কেন আমরা উদ্ভাসিত। স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে যখন দেশের একটি মানুষ না খেয়ে মারা যাবে, স্বাধীনতা তখনি ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি আমি নিরক্ষতার অভিশাপে দারিদ্রের কষাগাতে নিষ্পেষিত হয়। বঙ্গবন্ধু কন্যা তার লব্দ জ্ঞান, প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা দিয়ে মানুষের প্রতি তার যে ভালোবাসা সে ভালোবাসা থেকে উচ্ছ্বাসিত হয়ে দেশপ্রেম; সেখান থেকে তিনি গণতন্ত্র উদ্ধার করাই নয়, গণতন্ত্র উত্তরণের যাত্রাকে অব্যাহত রেখে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা চিকিৎসা, কর্মসংস্থান; এই যে মৌলিক অধিকার গুলো শেখ হাসিনা পরম যত্নে নিশ্চিত করেছেন। কেন আজকে বিএনপি ব্যর্থ হচ্ছে? কেন আজকে জামায়াত ধর্মীয় সুড়সুড়ি দিয়ে উগ্রবাদী কর্মকাণ্ড করে ব্যর্থ হচ্ছে? কারণ জননেত্রী শেখ হাসিনা অসাম্প্রদায়িক চেতনার মূল্যবোধকে ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখে শুধুই যে রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিচ্ছেন না, তিনি একেবারে মানুষের পেটে দুবেলা দুমুঠো ভাত তুলে দিতে পেরেছেন। আজকে তার এই বিচক্ষণ রাজনীতির নেতৃত্বের দেশে কিছু ধর্ম ব্যবসায়ীরা উশৃঙ্খলতা সৃষ্টি করছে। এ দেশ ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী নির্বিশেষে সবার। আমরা চাই, সবাই তার নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে। এক্ষেত্রে যারা বিরোধ সৃষ্টি করতে চাইবে তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা যারা ধর্মের নামে অধর্ম করে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার পায়তারা করার চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এ ক্ষেত্রে তাদেরকে ছাড়া দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। কেননা ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের সাথে যে দেশই সুসম্পর্ক বজায় রাখবে সে দেশে কখনো শান্তি ফিরে আসতে পারে না।
অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, ধন্যবাদ ভোরের পাতাকে তারা আজকে এতো সুন্দর একটি আয়োজন করেছে তার জন্য। ভোরের পাতা নিয়মিত এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে নানা সমসাময়িক বিষয় নিয়ে এর জন্যও তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। আমি প্রথমেই গভীর শ্রদ্ধা জানাই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যে মহামানবের অবদানে আজ আমারা লাল সবুজের পতাকা নিয়ে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছি, গভীর শ্রদ্ধা সাথে স্মরণ করছি ১৫ই আগস্টের সেই কালো রাতে তার পরিবারের যেসব সদস্যরা শাহাদাৎ বরণ করেছিলেন। গভীরভাবে স্মরণ করি জাতীয় ৪ নেতাকে। গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ ইজ্জত হারা মা বোনদের। আজকে আমরা শুধু বাংলাদেশের মানুষ প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব দেখছি না পুরো বিশ্বই তার সুফল নেতৃত্ব দেখছেন। গতবছর উইকিলিকস এর একটি জরিপের ভিত্তিতে ইউনাইটেড প্রেস অফ ইন্ডিয়া একটি নিউজ করেছিল। সেখানে তারা বলেছিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্ধিরা গান্ধী, ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী, শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। সে হিসেবে আজকে আমরা জানি বাংলাদেশের কি পরিচয় আছে। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত লাভ করেছে। এবং এটা নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার উন্নয়নের ধাঁরা নিয়ে অনেক প্রশংসা হচ্ছে। আমাদের এই বিজয়ের মাসে গত ১০ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর ৪১তম স্প্যান বসানো হয়েছ। এই পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্ব ব্যাংক অভিযোগ করেছিল দুর্নীতি নিয়ে। পদ্মা সেতু নিয়ে ঘটেছে নানা ঘটনা। দেশি-বিদেশি বহু ষড়যন্ত্রও হয়েছে। হয়েছে রাজনৈতিক নোংরা খেলা আর নোংরা বক্তব্য। পরে কিন্তু এটা কানাডার আদালতে প্রমাণ হয়েছে আমারা কোন দুর্নীতির সাথে জড়িত ছিলামনা। এই সকল প্রতিকূলতার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ পশ্চিমা দাতা সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দেশের জনগণের সহযোগিতায় পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করেন। আজ বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে এইরকম একটি মাল্টিপারপাস সেতু হচ্ছে এটা আমি মনে করি সারা বিশ্বে একটি রেকর্ড কারণ নিজস্ব অর্থায়নে উন্নত বিশ্বের কোন দেশ করতে পেরেছি কিনা সেটা নিয়েও আমার সন্দেহ আছে। করোনা মহামারিতেও যেখানে সারা বিশ্ব দিক বেদিক হয়ে আছে সেখানে আমাদের অর্থনীতির নানা খাতকে সহ তুলনামূলক শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও কৃষিখাত।
সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিজয় দিবস। ১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হওয়ার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির জীবনে যে ঘোর অমানিশার সূচনা হয়েছিল, তার অবসান হয়েছিল আজ থেকে ৪৯ বছর আগে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরে। বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গিয়েছেন। স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা গড়ার। সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। শোষণ বৈষম্যর অবসান ঘটিয়ে প্রত্যেক মানুষকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা। জাতির পিতার কাছে জনগণের থেকে প্রিয় আর কিছু ছিল না। স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি চক্র ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে স্বাধীনতার স্থপতি মহাকালের মহাপুরুষকে সপরিবারে হত্যা করে। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা, শিশু রাসেল ও নারী সদস্যসহ পরিবার ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয় সকলকে নির্মমভাবে হত্যা করে। সেই ধ্বংসস্তুপ তারই রেখে যাওয়া স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়ন করছেন তারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু হতাশার কথা এখানেই যে তার এই স্বপ্নের সোনার বাংলায় আজ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য যেভাবে ভাঙচুর করা হলো, যেভাবে মৌলবাদী উগ্র গোষ্ঠী জাতির পিতাকে অগ্রাহ্য করার স্পর্ধা দেখাল সেটা চরম ধৃষ্টতা। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহিদের বিনিময়ে পাওয়া এই বাংলাদেশে জাতির পিতাকে এভাবে অবমূল্যায়ন করা আমাদের দেখতে হবে সেটা কল্পনার অতীত। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হবে আগামী বছর। এই সময় দাঁড়িয়ে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি এই স্পর্ধা দেখাচ্ছে। আমি বলব, আমাদের রাষ্ট্রের চেতনা বিরোধী এই শক্তির বাংলাদেশে থাকার অধিকার নেই। কারণ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একই। একই সমান্তরালে এ নাম দুটি উচ্চারিত হয়। তিনি না জন্মালে আমরা এই স্বাধীন দেশ পেতাম না। পূর্ব পাকিস্তানের সেই অপমানকর জীবন ঝেড়ে ফেলে আজকের সমৃদ্ধ বাংলাদেশের মর্যাদার জায়গায় আমরা পৌঁছাতে পারতাম না। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি এই যে অসম্মান প্রদর্শন করার সাহস তারা দেখাল এদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। তাদের প্রতি নমনীয় আচরণ করা যাবে না। এ ধরনের ঘটনা আমাদের বিব্রত করে, মর্মাহত বোধ করি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালিত বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।