এমন পরিস্থিতি দেখার জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়নি :সিতারা বেগম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২০, ১১:১৯ এএম আপডেট: ২২.১২.২০২০ ৩:২০ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলাদেশে এমন পরিস্থিতি দেখার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেননি বলে অনুযোগ করেছেন বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা সিতারা বেগম (৭৪)। এবারের ৫০তম বিজয় দিবস উপলক্ষে গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি একথা জানিয়েছেন। এসময় তিনি দেশের জীবন মানের অভাবনীয় উন্নতির ভূয়সী প্রশংসা করেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বসবাসরত সিতারা জানিয়েছেন, ‘গত ফেব্রুয়ারিতে দুই সপ্তাহের জন্য দেশে গিয়েছিলাম। সে সময় ঢাকা এবং কিশোরগঞ্জে সময় কাটিয়েছি। সবকিছুই ভালো লেগেছে। মানুষের জীবন-মানের উন্নয়ন ঘটেছে। কেউ না খেয়ে থাকেন না। ছেড়া জামা-কাপড়ও দেখিনি কারো গায়ে। রাস্তার দুই পাশে গাছ-পালাও দেখলাম। সবুজের সমারোহ। পরিবেশ দূষণ রোধে এমন কার্যক্রমের প্রয়োজন রয়েছে। তবে আমার গভীর দৃষ্টিতে একটি বিষয় আমাকে হতবাক করেছে। যারা ইতোমধ্যে কাড়ি কাড়ি টাকার মালিক হয়েছেন, তারা আরও টাকা বানাতে চাচ্ছেন। মনে হচ্ছে চাহিদার যেন শেষ নেই। এজন্য কিছু মানুষকে সীমাহীন দুর্নীতিতে লিপ্ত হতে হচ্ছে। এটি আমাকে মনক্ষুন্ন করেছে। কিছু মানুষ এত বেশি ধনী হয়েছেন যা অন্যদের ঈর্ষার কারণ হয়েছে। অপরদিকে, সাদাসিধে মানুষরা কঠোর শ্রম দিয়েও ততটা ধনী হতে সক্ষম হচ্ছেন না। এটা বিজয়ের চেতনার পরিপন্থি। আমরা এমন পরিস্থিতি দেখার জন্য যুদ্ধে যাইনি, মুক্তিযুদ্ধ করিনি। আশা করছি রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা রয়েছেন তারা এ নিয়ে ভাববেন। তাহলেই স্বাধীনতার স্বপ্নসাধ পূরণ হবে অতি সহজে। কিশোরগঞ্জের আইনজীবী মোহাম্মদ ইসরাইল ও হাকিমুন নেসা দম্পতির সন্তান সিতারা বেগম বৈবাহিক সূত্রে ‘সিতারা রহমান’ হয়েছেন। তিন বোন ও দুই ভাইয়ের ভেতর তিনি তৃতীয়। বাবার সঙ্গে কিশোরগঞ্জে সিতারা বেগম শৈশব কাটান। সেখান থেকে মাধ্যমিক পাশ করার পর ঢাকায় হলিক্রস কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে পাশ করার পর তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেডিকেলে লেফটেন্যান্ট হিসেবে যোগ দেন।
১৯৭০ সালের উত্তাল দিনগুলোতে সিতারা বেগম কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে নিয়োজিত ছিলেন। সে সময় তার বড় ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর এ টি এম হায়দার পাকিস্তান থেকে কুমিল্লায় বদলি হয়ে আসেন। তিনি কুমিল্লার তৃতীয় কমান্ডো ব্যাটেলিয়নে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিতারা ও তার ভাই হায়দার ঈদের ছুটি কাটাতে তাদের কিশোরগঞ্জের বাড়িতে যান। কিন্তু সে সময়ে দেশজুড়ে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। হায়দার তার বোনকে ক্যান্টনমেন্টে আর ফিরে না যাবার জন্য পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে তিনি তার বোন সিতারা, বাবা-মা ও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে ভারতে পাঠিয়ে দেন। কিশোরগঞ্জ থেকে মেঘালয়ে পৌঁছাতে প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লেগে যায়।