এবার সারা ভারতে একযোগে অনশনের ডাক কৃষকদেরমোদির ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানের দিন সর্বত্র থালা বাজিয়ে প্রতিবাদের আহ্বান
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২০, ১১:১৯ এএম আপডেট: ২২.১২.২০২০ ৩:২০ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
২৬ দিন ধরে আন্দোলন করছেন ভারতের কৃষকরা। তাদের দাবি একটাই, নয়া কৃষি বিলের সংস্কার চাই। এরপরও দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে আসেনি আইন বাতিলের কোনো সিদ্ধান্ত। দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার ও আন্দোলনকারী কৃষক ইউনিয়নগুলোর মধ্যে আলোচনার পর আলোচনা হলেও তা নিষ্ফলা হয়েছে। উল্টো দেশটির প্রধানমন্ত্রী মোদি দাবি করছেন কৃষকদের স্বার্থেই নয়া এই কৃষি আইন। তাই আরো প্রতিবাদী হয়ে উঠেছেন কৃষকরা। এর অংশ হিসেবে গত সোমবার থেকে সারা ভারতজুড়ে একযোগে অনশন শুরু করেছেন প্রতিবাদী কৃষকরা। ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টু ডে জানিয়েছে, আগামী ২৭ ডিসেম্বর দেশটির সম্প্রচারমাধ্যমে প্রচারিত পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান চলাকালীন থালা বাজিয়ে প্রতিবাদ জানানোর জন্য ভারতবাসীকে অনুরোধ জানিয়েছে ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের নেতা জগজিৎ সিং ডালেওয়ালা। এছাড়া দিল্লি-হরিয়ানা সীমানায় অবস্থানকারী বিক্ষুব্ধ কৃষকদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী ২৫-২৭ ডিসেম্বর হরিয়ানায় অবস্থিত মহাসড়কের সব টোলপ্লাজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে। কোনও যানবাহনের থেকে কর আদায় করতে দেওয়া হবে না। অনশনের বিষয়ে গত রোববার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে স্বরাজ ভারতের প্রধান যোগন্দ্র যাদব বলেন, ‘সোমবার থেকে ২৪ ঘণ্টার রিলে অনশন শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দিল্লি সীমানায় প্রতিটি প্রতিবাদস্থলেই এই অনশন শুরু হবে। এক সঙ্গে কমপক্ষে ১১ জন থাকবেন অনশনে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা কৃষকদের আমাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’ অনশনের পাশাপাশি কৃষক সংগঠনগুলো আগামী দিনগুলোতে আন্দোলন চলাকালীন বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচিও হাতে নিয়েছে। প্রতি বছর ২৩ ডিসেম্বর ভারতে পালিত হয় কৃষক দিবস। সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে ওই দিন সে দেশের সব কৃষককে দুপুরের খাবার না খাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। এ বিষয়ে ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের রাকেশ তিকাইত বলেন, ‘এই কিসান দিবসে দেশের সব কৃষককে এক বেলা খাবার না খাওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। যারা জাতিকে খাবারের জোগান দেন তারা ক্ষুধার্ত থাকেন। কারণ সরকারের কৃষকবিরোধী পদক্ষেপ। আমি সবাইকে অনুরোধ করছি ওই দিন রান্না না করতে এবং কৃষকদের সঙ্গে যোগ দিতে।’ প্রতিবাদ আন্দোলনের মাঝেই গত রোববার ফের কৃষক সংগঠনগুলোকে নতুন করে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছিল বিজেপি সরকার। সংগঠনগুলোর মর্জি মাফিক আলোচনার দিন স্থির করার আর্জি জানানো হয়েছিল।
ভারতের কিষাণ ইউনিয়নের পাঞ্জাব শাখার রাজ্য সভাপতি দর্শন পালকে লেখা পাঁচ পাতার চিঠিতে দেশটির কৃষিমন্ত্রীর যুগ্ম সচিব বিবেক আগারওয়াল জানিয়েছেন, ‘কৃষি আইনের বিভ্রান্তি কাটাতে এর আগেও কেন্দ্র ও কৃষক ইউনিয়নগুলোর মধ্যে বৈঠক হয়েছে। আবারও আলোচনার জন্য প্রস্তাব দিচ্ছি। তবে দিনক্ষণ আপনাদের মরজি মাফিক স্থির হবে। সমস্যা সমাধানে বিজ্ঞান ভবনে এই বৈঠক হবে জানানো হয়েছে। এর আগে ১৬ ডিসেম্বর আন্দোলনকারী কৃষকরা কেন্দ্রের আইন সংশোধনের প্রস্তাব নাকচ করে দেন। তার প্রেক্ষিতেই এই চিঠি।’ এদিকে, আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি জানাতে ফেসবুক পেজ খুলেছিলেন আন্দোলনরত কৃষকরা। অভিযোগও উঠেছে কিষাণ একতা মোর্চা নামে ওই ফেসবুক পেজ ব্যান করার। অভিযোগকারী পেজটির এডমিন জানিয়েছে, গত রবিবার ফেসবুক ওই পেজ বেশ কিছুক্ষণের জন্য ব্যান করে দিয়েছিল। তবে ওইদিন ওই ফেসবুক পেজ কতক্ষণ বন্ধ ছিল, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। কেন অকার্যকর করা হয় মেলেনি সেই উত্তরও। এ বিষয়ে কৃষক আন্দোলনকারীদের তথ্যপ্রযুক্তি শাখার প্রধান বলজিৎ সিং বলেছেন, ‘কিষাণ একতা মোর্চার অফিসিয়াল ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে সে সম্পর্কে আগে থেকে কিছু জানানো হয়নি।’ তার কথায়, ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের নেতা জগজিৎ সিং ডালেওয়ালা শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাষণের পাল্টা জবাব দিয়েছিলেন। তাই এই পদক্ষেপ। উল্লেখ্য, কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে ২৬ দিন ধরে দিল্লির সিংঘু, তিরকি, ইউপি গেট এবং চিল্লা সীমান্তে অবস্থান নিয়েছেন কৃষকরা। দিল্লির প্রবল শৈত্যপ্রবাহ উপক্ষো করেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। এই ২৬ দিনে অন্তত ২৪ জন কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে নিজের গায়ে গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন এক শিখ পুরোহিত।