মন্ত্রিসভার বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন জুনের মধ্যে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে আসবে এসব টিকা। দুই দফায় সাড়ে চার কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনা হবে।
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২০, ১১:১৯ এএম আপডেট: ২২.১২.২০২০ ৩:১৯ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
আসন্ন জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে প্রথম দফায় করোনা ভাইরাসের তিন কোটি ডোজ টিকা আনার প্রস্তুতির মধ্যেই জুন মাসে আরও ছয় কোটি ডোজ টিকা আনার কথা জানিয়েছে সরকার। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনস গ্লোবাল অ্যাকসেস ফ্যাসিলিটি- কোভ্যাক্সের মাধ্যমে এ ছয় কোটি টিকা পাওয়া যাবে। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক কোভিড-১৯ এর টিকা প্রাপ্তি সম্পর্কিত অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে এ তথ্য জানান। ইতোমধ্যে টিকাদানের জন্য প্রস্তুত করে তোলা হচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট লোকবলকে। বিশেষ করে দেশে বিদ্যমান সম্প্রসারিত টিকা দান কর্মসূচির (ইপিআই) কার্যক্রমের সঙ্গে যে লোকবল জড়িত তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর কথা ভাবা হচ্ছে। এছাড়া করোনাভাইরাস টিকা প্রদান কার্যক্রমের জন্য সংশ্লিষ্টদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা তো রয়েছেই। তবে বিদ্যমান ইপিআই কার্যক্রমের অবকাঠামো ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ সুবিধা করোনা ভাইরাসের টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে কি না সে বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে টিকাবিষয়ক জাতীয় পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ইপিআই কর্মসূচিতে ব্যবহৃত কেন্দ্রগুলো করোনা টিকা দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হবে না। কোভিড-১৯ টিকা দেওয়া জন্য ১৫ ধরনের আলাদা কিছু স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।
মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি আশা করছেন, জানুয়ারির শেষ বা ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে টিকা (প্রথম দফা) পেয়ে যাব। এজন্য গ্রাসরুট লেভেল পর্যন্ত সবাইকে ট্রেনিং দেওয়া শুরু হয়েছে। টিকা দেওয়ার জন্য যেসব জিনিস ব্যবহার করা হবে, সেগুলো কিভাবে ডিসপোজাল করা হবে সেই ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে। বেসরকারি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করে টিকা দেওয়া যায় কি না, এ নিয়েও তারা আলোচনা করছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দেশে সম্প্রসারিত টিকা দান কর্মসূচির (ইপিআই) যে ব্যাপক কার্যক্রম আছে, সেটিকে করোনা ভাইরাসের টিকা দিতে ব্যবহার করার কথা ভাবা হচ্ছে। তারা হাসপাতালগুলোকে এবং প্রাইভেট সেক্টরকেও ব্যবহার করতে চাচ্ছেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বরাত দিয়ে মন্ত্রীপরিষদ সচিব বলেন, আরও ছয় কোটি টিকা কোভ্যাক্সের মাধ্যমে মে-জুন মাসের মধ্যে আসবে। আর প্রথম দফায় (ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন) আসছে তিন কোটি ডোজ। দ্বিতীয় দফায় আরও তিন কোটি মানুষের জন্য অক্সফোর্ডের টিকা আসবে। দুই দফার টিকা মিলিয়ে মোট সাড়ে চার কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া যাবে। তিনি জানান, একজন ব্যক্তিকে করোনা ভাইরাসের দুটি করে ডোজ নিতে হবে। সেই হিসেবে দুই দফায় পাওয়া নয় কোটি ডোজ টিকা সাড়ে চার কোটি মানুষকে দেওয়া যাবে; যা দেশের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ। ধনী দেশগুলো যেখানে তাদের সব নাগরিককে সম্ভব দ্রুততম সময়ে টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, সেখানে গরিব দেশগুলোর জন্য টিকা পাওয়া হয়ে উঠেছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। গরিব দেশগুলোও যাতে টিকা পায়, সেই লক্ষ্যেই গত এপ্রিলে কোভ্যাক্স নামের একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস বা গ্যাভি এবং কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনস বা সিইপিআই। এই জোট আসছে নতুন বছরে নিম্ন ও মধ্যমআয়ের ৯২টি দেশে ১৩০ কোটি ডোজ টিকা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে। তার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশের জন্য টিকা সরবরাহ করবে তারা। বাংলাদেশ সরকার ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের তিন কোটি ডোজ সংগ্রহের জন্য ইতোমধ্যে চুক্তি করেছে। ভ্যাকসিন কেনার জন্য ১৬ নভেম্বর অর্থ বিভাগ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে ৭৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকাও বরাদ্দ দিয়েছে।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম জানান, নতুন বছরের শুরুতেই দেশে টিকা আসার সম্ভাবনা রয়েছে। মাঠপর্যায়ে প্রয়োগের জন্য ২৬ লাখ স্বাস্থ্য সহকারী ও সরকারের ইপিআই কার্যক্রম যারা পরিচালনা করছে তারাই বিষয়টি বাস্তবায়ন করবে। এদিকে, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা করোনাভাইরাসের যে টিকা তৈরি করছে, তার উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। ওই টিকার তিন কোটি ডোজ কিনতে গত মাসের শুরুতে সেরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করেছে সরকার। সিরামের উৎপাদিত টিকার ‘এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর’ হিসেবে বাংলাদেশে ওই টিকা সরবরাহ করবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে ছয় মাসে তিন কোটি ডোজ টিকা পাঠাবে সিরাম। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গ্যাভির কাছ থেকে প্রতি ডোজ টিকা আনতে এক দশমিক ৬২ থেকে দুই ডলারের মতো ব্যয় হবে। তারা ভর্তুকি দিয়ে টিকা সরবরাহ করবে।
অপরদিকে বেক্সিমকোর মাধ্যমে যেসব টিকা আসবে তার প্রতি ডোজের জন্য লাগবে ৫ মার্কিন ডলার। করোনা ভাইরাসের কার্যকর টিকা পাওয়া গেলে তা যাতে সারা বিশ্বের মানুষ পায়, তা নিশ্চিত করতে কয়েক মাস ধরে কাজ করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও গ্যাভি। এ দুই বিশ্ব সংস্থার আয়োজনে গত ৪ জুন গ্লোবাল ভ্যাকসিন সামিট অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন। সম্মেলনে সর্বসম্মতভাবে ‘কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনস গ্লোবাল অ্যাকসেস ফ্যাসিলিটি’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা হয়, যাকে সংক্ষেপে বলা হচ্ছে কোভ্যাক্স। গত ৩০ জুলাই গ্যাভির বোর্ড সভায় এই কোভ্যাক্সের অ্যাডভান্স মার্কেট কমিটমেন্ট (এএমসি) প্রকল্পের আওতায় নিম্ন ও মধ্যমআয়ের ৯২টি দেশকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশকেও সেই তালিকায় রাখা হয়।