প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২০, ১১:১৯ এএম আপডেট: ২২.১২.২০২০ ৩:১৮ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
কুষ্টিয়া কুমারখালীর কয়া গ্রামে বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুরের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত তিন আসামিকে তিনদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল সোমবার দুপুর ১২টায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা কুমারখালী থানায় করা মামলায় রিমান্ড শুনানি শেষে তিন দিনের করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন কুষ্টিয়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সেলিনা খাতুন। এর আগে গত ১৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় এ মামলায় তিনজন আসামিকে গ্রেফতার দেখিয়ে প্রত্যেককে সাতদিন করে রিমান্ড আবেদনসহ আদালতে সোপর্দ করে কুমারখালী থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- কয়া ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি কয়া ফুলতলা গ্রামের বাসিন্দা মহিরুদ্দিন সেখের ছেলে আনিসুর রহমান আনিছ (৩৫), নাসির উদ্দিনের ছেলে সবুজ হোসেন (২০) এবং বুদ্দিন ম-লের ছেলে হৃদয় হোসেন (২০)।
কুমারখালী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান জানান, ‘যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের (বাঘা যতীন) আবক্ষ ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় কুমারখালী থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে কয়া মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতারকৃত তিন আসামিদের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদনসহ আদালতে সোপর্দ করা হয়। বিজ্ঞ আদালত গতকাল সোমবার রিমান্ড শুনানি শেষে ৩ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাতে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া মহাবিদ্যালয় চত্বরের বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পরদিন পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করে।
ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী নেতা যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ওরফে যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় (৭ ডিসেম্বর, ১৮৭৯-১০ সেপ্টেম্বর, ১৯১৫) ছিলেন একজন বাঙালি ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী নেতা। তিনি বাঘা যতীন নামেই সবার পরিচিত। কুষ্টিয়া কুমারখালী থানার কয়া গ্রামে নানীর বাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন। শৈশব-কৈশর অতিবাহিত হয় এখানেই। পরে শিক্ষার্জনে ভারতে গমন করেন। এবং ভারতের উড়িষ্যায় ১৯১৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ৩৫ বছর বয়সে মৃত্যু বরণ করেন। ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও অবদান রেখেছিলেন। তিনি বাংলার প্রধান বিপ্লবী সংগঠন যুগান্তর দলের প্রধান নেতা ছিলেন। ভারত স্বাধীনতা আন্দোলন, হিন্দু-জার্মান ষড়যন্ত্র, বড়দিন ষড়যন্ত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। তিনি সমাজ সংস্কারক হিসেবে নানা খাতে অবদান রাখেন। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান, ব্যায়ামাগারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন কুষ্টিয়াতে। ঐতিহাসিকভাবে বাঘা যতীন বৈপ্লবিক অবদানের কারণে কুষ্টিয়ার ইতিহাসের সাথে অবিচ্ছেদ্য হন। দীর্ঘকাল ধরে তিনি নামে এই অঞ্চলের মানুষের হৃদয়ে লালিত একটি নাম হলেও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তার কোন স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ও ভারতীয় হাইকমিশনার সমন্বয়ে উদ্যোগ নিয়ে কয়া ডিগ্রি কলেজ চত্বরে এই ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয়েছিল বলে জানান কয়া কলেজ প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বাচ্চু।