দেশের মানুষের সার্বিক অবস্থা কী, করোনা মহামারীর পরিস্থিতি এখন কোন পর্যায়ে - সময়ের এই সকল জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ দিয়ে তারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্রে মেতে উঠলো। দুই চারজন ব্যক্তি বাদে এদের সকলেই জনবিচ্ছিন্ন ব্যক্তি হিসেবেই পরিচিত।
তাদের অধিকাংশই কখনোই মানবতার পাশে দাঁড়ায় নি। বঙ্গবন্ধু কন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার আহ্বানে সারা দিয়ে আওয়ামী লীগের বহু নেতা কর্মী মানুষের পাশে দাঁড়াতে দিয়ে জীবন দিয়েছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাদের অনেকেই করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এখনোও হচ্ছেন। এই জনবিচ্ছিন্ন লোকগুলো তখন নিরাপদ অবস্থানে ছিল।
এই তথাকথিত সুশীলগণ দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরী করার লক্ষ্যেই এই ধরণের বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। এরা মুখে গণতন্ত্র আর আইনের শাসনের কথা বললেও আসলে এদেশে একটি অসাংবিধানিক ব্যবস্থা দেখতে চায়। এদের অনেকেই এক এগারোর সমর্থক হিসেবে দেশে বিদেশে পরিচিত। তারাই অসাংবিধানিক সরকার এক এগারোকে দীর্ঘায়িত করতে চেয়েছিলো। এরা বরাবরই ব্যক্তি স্বার্থ কেন্দ্রিক ও কাপুরুষ। এদেশের সকল সুযোগ সুবিধা নিয়ে তারা বিদেশিদের স্বার্থেই, বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বের স্বঘোষিত এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন। মুলত এরা উচ্ছিষ্টভোগী।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশে বিদেশে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত হয়েছিল। এই নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার সারা বিশ্বে অনেক ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে প্রসংশিত হয়েছে। আর্থ-সামাজিক প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই সরকার বিশ্বের সকল প্রভাবশালী রাষ্ট্রসহ সকলের প্রশংসা পেয়েছে।
নির্বাচনের দুই বছর পর আবার তারা এই নির্বাচন নিয়ে নানা আজগুবি কথা বলছেন। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অব্যবহিত পর নির্বাচনে কারচুপি নিয়ে তারা কিছু উদ্ভট কথা বলেছিলো। তারাই বলেছিলো, নির্বাচনের পর এক সপ্তাহ সময়ের মধ্যে তারা পঞ্চাশটি আসনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে গবেষণা সম্পন্ন করেছিল। মাত্র সাত দিনে এই ধরণের গবেষণা অসম্ভব ও অবাস্তব। তাদের এই মিথ্যাচার দেশে বিদেশে কেও ই গ্রহণ করেনি।
আমাদের কাছে মনে হয়, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ কে নিয়ে যে সকল দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্র হয়েছে, এটি তারই ধারাবাহিকতা মাত্র। তাদের এই কর্মকান্ডে মনে হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে এটি তাদের পছন্দ হচ্ছে না। বাংলাদেশের অগ্রগতিতে তারা নিজেদেরকে সংক্ষুব্দ মনে করছে। তাদের আচরণে এটি মনে হচ্ছে, তারা ঢিল ছুড়ে মেরে রাষ্ট্রের পথ চলাকে ব্যাহত করতে চায়। তারা হয়তো জানে না, ঢিল ছুড়ে রাষ্ট্রকে বাধাগ্রস্ত করা যায় না। এটি সম্ভব নয়।
তারা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করার কথা বলছেন। তাদের জানা উচিত, সংবিধানে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান বাতিল সংক্রান্ত বিষয়টি এখন সাব জুডিস বিষয়। কারণ এ বিষয়টি বর্তমানে আপীল বিভাগে রিভিউ পর্যায়ে বিচারাধীন। তাই এখন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান কার্যকর করার আইনগত কোন সুযোগ নেই।
যারা দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতিকে এই পত্র দিয়েছেন, তাদের কারো কারো বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলন জনিত অপরাধ সহ নানা অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। তাদের একজন বেআইনি কর্মকান্ডের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাকুরিচ্যুত হয়েছিলেন। একই ব্যক্তি পরবর্তীকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্দালয়ে তার চাকুরীচ্যুতির বিষয়টি গোপন রেখে ১৯৯৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্দালয়ের আরেকটি বিভাগে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আবেদন করেছিলেন। বিশ্ববিদ্দালয়ের সিন্ডিকেট নৈতিক স্খলন জনিত অপরাধের কারণে সিলেকশন কমিটি কর্তৃক তার নিয়োগের সুপারিশ বাতিল করেছিল।
ঐ একই ব্যক্তি বিলিয়ায় (বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ল এন্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স ) পরিচালকের দায়িত্ব পালনকালে ব্যাপক দুর্নীতি আর অনিয়মের সাথে যুক্ত ছিল। সেখানে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। মানি লন্ডারিং এর মাধ্যমে লন্ডন থেকে পাঠানো যুদ্ধাপরাধীদের টাকায় বিলিয়া থেকে একটি বই প্রকাশ করা হয়েছিল যার শিরোনাম The Death Penalty Regime in Bangladesh - Exploring Perspectives of Former Judges।
মূলত যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদণ্ডাদেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যই যুদ্ধাপরাধীদের টাকায় তথাকথিত এই গবেষণামূলক বই বিলিয়া থেকে প্রকাশ করা হয়েছিল। সেটি বিলিয়ার পরিচালনা পর্ষদ পরবর্তীতে বাজেয়াপ্ত করেছিল। এই গণবিচ্ছিন্ন ব্যক্তিবর্গের সাম্প্রতিক কর্মকান্ড দেখে আইন বিজ্ঞানের একটি বিখ্যাত নীতির কথা মনে পড়ছে যেটি তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। "He who comes to equity, must come with clean hands."
লেখক: রাজনীতিবিদ, আইনজ্ঞ, গবেষক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।