#তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ নয়, বাংলাদেশ এখন পূর্ণ ঝুড়ির দেশ: অ্যারোমা দত্ত।
#বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ এখন অষ্টম আশ্চর্যের নাম: ড. মো: নূরে আলম আবদুল্লাহ।
#বাঙালি সৌভাগ্যবান যে শেখ হাসিনার মত একজন ভিশনারি লিডার পেয়েছে: খালেক জামান।
ডিসেম্বর মাসটি বিজয় ও গৌরবের মাস। কালের চাকা ঘুরে দেখতে দেখতে কেটে গেছে বছরগুলো। আমরা বাঙালিরা ২৪ বছরের পাকিস্তানি পরাধীনতার জিঞ্জির ভেঙেছি একাত্তরে। দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জন করেছি মহান বিজয়। এই মহান বিজয়ের দেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রেখে যাওয়া তার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের পূর্ণ বাস্তবায়ন করছেন তারই তনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ১৯৪তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। রবিবার (২০ ডিসেম্বর) আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য অ্যারোমা দত্ত, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো: নূরে আলম আবদুল্লাহ, নর্দ রাইন ভেষটফালেন, জার্মান অঙ্গরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি খালেক জামান। দৈনিক ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
অ্যারোমা দত্ত বলেন, এই যে এতো রাস্তা পার হয়ে আমারা এখন একটি স্বনির্ভর জাতি হয়ে দাঁড়িয়েছি, এটা কি এতো সহজ ছিল? এই রাস্তাটা আমরা কিভাবে পার হলাম। এর পিছনে অনেক কাহিনী আছে। এই কাহিনীটা অনেক কঠিন কাহিনী। ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশেকে একটি ধ্বংসস্তূপ থেকে যে জায়গায় তিনি এনে দাঁড় করিয়েছেন এই দেশটি ৪টি স্তম্ভের উপর দাড়িয়ে আছে বিশেষ করে ৩০ লক্ষ শহীদদের রক্তে লেখা আমাদের বাংলাদেশের সংবিধান যার মূল স্তম্ভ ছিল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। যেখানে আমরা সবাই এটা নিয়ে সেসময় থেকে এখন পর্যন্ত কাজ করছি। কিন্তু আমরা হোঁচট খেয়েছিলাম। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টে বঙ্গবন্ধুর মত একজন মানুষকে কি নির্মমভাবে হত্যা করলো সেই ষড়যন্ত্রকারীরা। বঙ্গবন্ধু কিন্তু মানুষ ছিলেন না, তিনি ছিলেন একটি ইনস্টিটিউট। তারা ভেবেছিল তাকে মেরে ফেললে বঙ্গবন্ধুর যে চেতনা, বঙ্গবন্ধুর যে রাজনীতি, বঙ্গবন্ধুর যে চেতনা বিশ্বাস এটা মেরে ফেলবে তারা। এটা কি এতো সহজ। এতো সহজে বঙ্গবন্ধুকে বাঙালি জাতির মনন থেকে মুছে ফেলা যায় না। এরপরে যারা আমাদের বিরুদ্ধে ছিল অর্থাৎ রাজাকার-আলবদর ছিল তাদেরকে আবার পুনর্বাসন করে রাজনীতির গদিতে বসানো হলো এইজন্য যে বাংলাদেশকে ঠিক আগের অবয়বে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু ঈশ্বরের কি লীলা খেলা দেখুন, বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া তার কন্যা শেখ হাসিনা ফিনিক্স পাখির মত এই দেশের হাল ধরলেন। সেই ১৯৮১ সাল থেকে শুরু করে তিলে তিলে বাংলাদেশকে একবারে অ্যাটল্যান্টিক মহাসাগরের নিচের তলার মত অবস্থা থেকে তীরে ভিড়িয়েছেন। এটা একেবারেই বিস্ময়। এবং এটা পেরেছে কে? একজন মেয়েই পেরেছে। এটা আমি খুব গর্ব করে বলি। আজকে এতো ধাক্কার পরেও আমরা অনেক দূরে এগিয়ে গিয়েছি। আজকে আমরা আমেরিকাকে দেখাতে পারছি বাংলাদেশ এখন তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ নয়, বাংলাদেশ আজকে পূর্ণ ঝুড়ির দেশ।
অধ্যাপক ড. মো: নূরে আলম আবদুল্লাহ বলেন, ধন্যবাদ সঞ্চালক ও ভোরের পাতাকে আজকে এই সংলাপে আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য। আজকে বিষয় হলো গৌরবের বিজয়: শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উদ্ভাসিত বাঙালি। আসলেই আমাদের উদ্ভাসিত বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা যার হাত ধরে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং বীর বিক্রম জাতি হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে বলা যায়। বাংলাদেশ একসময় তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ ছিল, অন্য দেশের কাছে হাসির পাত্র ছিল কিন্তু আজকের বাংলাদেশ কারো কাছে হাসির পাত্র নয়। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ এখন অষ্টম আশ্চর্যের নাম। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা এবং দেশের বিভিন্ন সেক্টরে উন্নতি সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। কিভাবে এই দেশটি বীর বিক্রমের মত এগিয়ে যাচ্ছে এটা আসলেই আশ্চর্যের বিষয়। আপনারা হয়তো খেয়াল করবেন কিছু দিন আগে বিশ্ব মিডিয়াই বাংলাদেশকে নিয়ে সংবাদ হয়েছে, সংবাদটি নেগেটিভ নয় পজিটিভ। আগে একসময় বাংলাদেশকে নিয়ে অনেক ধরণের নেগেটিভ সংবাদ হতো। ভূমিকম্প, খরা, বন্যা, অনাহার; এইরকম বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশকে জড়িয়ে সংবাদ প্রচার করা হতো। কিন্তু আজ ছাপা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কিভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। গত ১২ বছরে কতো লিজেন্ডারি এডভান্স বাংলাদেশে হয়েছে তা বলে শেষ করা যাবেনা। এরপরে আমরা পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় শেষ করে ফেলেছি। পদ্মা সেতুর খুঁটির নিচে সর্বোচ্চ ১২২ মিটার গভীরে স্টিলের পাইল বসানো হয়েছে। এসব পাইল তিন মিটার ব্যাসার্ধের। বিশ্বে এখনও পর্যন্ত কোনো সেতুর জন্য এত গভীরে পাইলিং হয়নি এবং মোটা পাইল বসানো হয়নি। এছাড়াও কোন নির্মাণ কাজে বিশ্বে প্রথম দুই বিশেষ উপাদান ব্যবহার হয়েছে। একটি হচ্ছে- ভার্টিক্যাল আরসিসি বোর্ড পাইলে গ্রাউটিং ইনজেক্ট স্কিন ফিকশন করে দৃঢ়তা বৃদ্ধি করে নদীর তলদেশে বর্হিভাবে শক্তি বৃদ্ধি। পদ্মায় এমন পাইল সংখ্যা ২২টি। অপরটি হলো স্টিল টিউবুলার ড্রিভেন পাইলে গ্রাউটিং ইনজেক্ট করে পাইলের তলদেশের স্কিন ফিকশন সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। এমন পাইল সংখ্যা ২৫২ টি। এটা একটা বিশাল অর্জন আমাদের জন্য। শেখ হাসিনার উদ্ভাবনী চিন্তা চেতনার বাস্তবায়ন ও উদ্যোগী মনোভাবের কারণে আজকে আমাদের বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সম্পদ উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিশুমৃত্যুর হার কমানো, দারিদ্র্য বিমোচন, অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জন, রফতানি আয়, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, বৈদেশিক শ্রমবাজার, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, জননিরাপত্তা, সামাজিক বৈষম্য নিরসনসহ প্রায় সব সূচকেই অনেক দেশকে ছাড়িয়ে গিয়েছি। অফুরন্ত সম্ভাবনা নিয়ে দেশটি সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখনও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি মেলেনি। রাজনৈতিক কারণে মাঝেমধ্যেই অর্থনৈতিক গতি থমকে দাঁড়ায়। এ থমকে দাঁড়ানো না হলে, সমান তালে অর্থনৈতিক চাকা ঘুরতে থাকলে অগ্রগতি আরও বেশি হতো।
খালেক জামান বলেন, প্রথমেই আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় ৪ নেতা, এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে যে সকল মানুষ শহীদ হয়েছেন তাদেরকে স্মরণ করে আমি আমার বক্তব্য শুরু করতে যাচ্ছি। আমরা আসলেই সৌভাগ্যবান জাতি। কিন্তু এখানে সংখ্যালঘু কথাটা এসে যায়। ১৯৭১ সালে আমরা যখন যুদ্ধ করেছিলাম বা তার আগের সময়কালে সেখানে কোন হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান ছিলো না। আমরা সবাই ছিলাম বাঙালি জাতি। এর আগে আমরা দেশে অনেক প্রধানমন্ত্রী পেয়েছি কিন্তু শেখ হাসিনার মত আর কেউ ছিলোনা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ দিয়ে গিয়েছেন এবং তার মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দেশটাকে তারই স্বপ্নের বাস্তবে রূপান্তরিত করছেন। বাংলাদেশে এখন যেসব বড় বড় প্রজেক্ট আছে তা সম্ভব হয়েছে একমাত্র তার কারণে। শেখ হাসিনা শুধু স্বপ্ন দেখেন না, উনার মাঝে ভিশন আছে। পৃথিবীতে অনেক প্রাইম মিনিস্টার আছে কিন্তু উনার মত আমি কাউকে দেখি না। উনি চিন্তা করেন এই বছর এই কাজটা করবো, সামনের বছর নাগাদ এই কাজটি শেষ করে ছাড়বো। এই যে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া নিজের কাছে; এটা আমি কারো মাঝে দেখনি। আমারা সৌভাগ্যবান যে শেখ হাসিনার মতো একজন নেত্রী আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এখন দুঃখ লাগে বাংলাদেশের মিডিয়ার খবর পড়লে যে, যারা একাত্তরের ঘাতক দালাল ছিল তাদের রয়ে যাওয়া প্রেতাত্মারা অর্থাৎ জামায়াত-শিবিরদের দোসররা আজকে এই বাঙলার স্থপতিকে নিয়ে এতো বড় দুঃসাহসিক কাজ করার সুযোগ পায়। তাই আমার আবেদন আর অপেক্ষা করা যাবেনা, এদের বিরুদ্ধে এখনি প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে কারণ এদেরকে আজ হালকা করে দেখলে সামনে বাংলাদেশের জন্য বিরাট দুঃখজনক খবর অপেক্ষা করছে। এই বলেই আজ আমি আমার বক্তব্য শেষ করছি। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।