প্রকাশ: রোববার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২০, ১:২০ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
বাবার মৃত্যুশোক সামলে শহীদুলই হলেন জিমকন খুলনার জয়ের নায়ক। শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়েছেন গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের নাহিদুল ইসলাম, তবু ৫ রানের জয়ে শিরোপা উঠেছে জেমকন খুলনার হাতে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে শেষের এই কৃতিত্ব পুরোটাই খুলনার ডানহাতি পেসার শহীদুল ইসলামের। যিনি শেষ ওভারের প্রথম পাঁচ বলে খরচ করেন মাত্র ৪ রান। যা নিশ্চিত করে দলের জয়। শিরোপা জয়ের জন্য ম্যাচের শেষ ওভারে ১৬ রান প্রয়োজন ছিল চট্টগ্রামের। শহীদুলের করা সেই ওভারের প্রথম পাঁচ বলে কোনো বাউন্ডারি হাঁকাতে পারেনি চট্টগ্রাম, উল্টো হারায় দুই সেট ব্যাটসম্যান মোসাদ্দেক সৈকত ও সৈকত আলির উইকেট। শেষ বলে ছক্কা হাঁকান নাহিদুল। কিন্তু এটি শুধুমাত্র পরাজয়ের ব্যবধান কমানো ছাড়া আর কোনও কাজেই আসেনি। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বীরোচিত ৭০ রানের অপরাজিত ইনিংসের পর বল হাতে যেমনটা দরকার ছিল, ঠিক তেমন পারফরম্যান্সই উপহার দিয়েছেন আলআমিন হোসেন, হাসান মাহমুদ, শহীদুল ইসলামরা। চট্টগ্রাম ইনিংসের ১৯ ওভার শেষে সমীকরণ যখন ৬ বলে ১৬, তখন শহীদুলের হাতেই বল তুলে নেন খুলনা অধিনায়ক এবং জিতে নেন ম্যাচ। অথচ এই ম্যাচ খেলারই কথা ছিল না শহীদুলের। পাঁচদিন আগে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের বিপক্ষে প্রথম কোয়ালিফায়ার ম্যাচের আগেরদিন (১৩ ডিসেম্বর) না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন শহীদুলের বাবা হাবিবুর রহমান। সেই ম্যাচটি খেলতে পারেননি শহীদুল। বাবার শেষকৃত্যের জন্য জৈব সুরক্ষা বলয় ছেড়ে চলে যান বাড়িতে। দল ফাইনালে উঠলেও, খুলনার পক্ষ থেকে পূর্ণ আশ্বাস ও ছাড় দেয়া হয়েছিল শহীদুলকে। কিন্তু তিনি নিজেই জানিয়েছেন, ফাইনাল ম্যাচটি খেলতে পারবেন। সেজন্য বাবার শেষকৃত্য সম্পন্ন করে আবার যোগ দেন টিম হোটেলে, তিনদিন একা থাকেন কোয়ারেন্টাইনে এবং সবশেষ করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ হয়ে সোজা নামেন ফাইনাল ম্যাচ খেলতে। ফাইনাল জেতার পর খুলনার তারকা ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজা জানিয়েছেন, তারা ম্যাচটি খেলেছেন মূলত শহীদুলের বাবার জন্য, ফাইনালের জয়টিও তিনি উৎসর্গ করেছেন শহীদুলের জন্য। মাশরাফি বলেছেন,"সবকিছুর জন্য সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে ধন্যবাদ। যখন আমি ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছি সবসময়ই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার চেষ্টা করেছি। বিশেষ করে যখন আমি ফাইনাল খেলেছি। এটার জন্য আল্লাহকে ধন্যবাদ।"তিনি আরও বলেন,"একটা জিনিস যে, আমরা সবাই আজ শহীদুলের বাবার জন্য খেলেছি। তিনি পাঁচদিন আগে মারা গেছেন। আমাদের অধিনায়ক ম্যাচের বলেছে যে, আমরা শহীদুলের জন্য খেলব। বাবা মারা যাওয়ার পর সে আবার ফিরে এসে হোটেলে কোয়ারেন্টিনে ছিল। পরীক্ষায় নেগেটিভ হয়ে ম্যাচ খেলেছে আজ। আমাদের আজকের জয় ওর জন্য ।" শহীদুল নিজেও চেষ্টা করেছেন বাবার মৃত্যুর শোক সামলে ভালো কিছু করতে। ফাইনাল ম্যাচের শেষ ওভারে দলকে জেতানোসহ ৪ ওভারে ৩৩ রান খরচায় নিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ দুইটি উইকেট। সবমিলিয়ে পুরো টুর্নামেন্টে ৮ ম্যাচে ১৫ উইকেট নিয়ে আসরের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি তিনি। সবশেষ বিপিএলে ১৩ ম্যাচে ১৯ উইকেট নিয়ে তিনি ছিলেন পঞ্চম সেরা উইকেট শিকারি।