প্রকাশ: রোববার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:৪৪ পিএম আপডেট: ২০.১২.২০২০ ১২:৪৭ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
জয়পুরহাট
সদর উপজেলার পুরানাপৈল রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের সাথে বাসের সংঘর্ষে ১২ জন
বাসযাত্রী নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন ৫ জন। গতকাল শনিবার সকাল
৬টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনায় আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে জয়পুরহাট জেলা
আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা
করছেন হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক। এ ঘটনায় পর দেশের সাথে উত্তরাঞ্চলের
রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় আট ঘণ্টা পর ফের রেল চলাচল শুরু হয়।
জয়পুরহাট জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, রেলের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা,
স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং ঘটনা
তদন্তে জেলা প্রশাসন ৩ সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করেছে।
পুলিশ
দুর্ঘটনায় নিহতদের নাম জানিয়েছে। তারা হলেন, জয়পুরহাট সদর উপজেলার হারাইল
গ্রামের মামুনুর রশিদ (বাস চালক), শহরের চিত্রাপাড়ার নিশি ম-লের ছেলে
রেজাউল করিম, হিচমী গ্রামের মানিকের ছেলে রমজান, কুঠিবাড়ী ব্রিজ এলাকার
শরীফুলের ছেলে আব্দুল লতিফ, ক্ষেতলাল উপজেলার ইটাখোলা এলাকার মঙ্গলার ছেলে
সুমন, পাঁচবিবি উপজেলার আটাপাড়ার মোশারফের ছেলে মুনজুরুল নাসিম, জিয়ার
মোড়ের মিরাজের ছেলে জিয়া হক, আটুল গ্রামের সরোয়ার হোসেন, আরিফুর রহমান
রাব্বি, আক্কেলপুর উপজেলার চকবিলা গ্রামের দুদু কাজীর ছেলে সাজু মিয়া,
নওগাঁর রানী নগর উপজেলার বিজয়কান্দি গ্রামের বাবুল ও টাঙ্গাইলের মাটিকাটা
গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে জুলহাস। এদিকে দুর্ঘটনা এলাকায় ট্রেন লাইনচ্যুত
হয়ে আটকা পড়ায় আট ঘণ্টা পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলের সাথে দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ
ছিল। পরে পার্বতীপুর ও ঈশ্বরদী থেকে দুটি উদ্ধার ট্রেন এসে উদ্ধার কাজ
সম্পন্ন করলে বিকেলে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী,
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস জানায়, গতকাল ভোর ৬টার দিকে পার্বতীপুর থেকে
রাজশাহীগামী লোকাল উত্তরা মেইল ট্রেন জয়পুরহাটে আসছিল। এ সময় জয়পুরহাট সদর
উপজেলার পুরানাপৈল রেলক্রসিং এ কর্তব্যরত লাইনম্যান রেলগেটে সিগ্ন্যাল
পোস্ট না ফেলায় জয়পুরহাট থেকে হিলিগামী বাঁধন এক্সপ্রেস নামক যাত্রীবাহী
বাসটি রেল ক্রসিং অতিক্রম করতে গিয়ে ট্রেনের সাথে সংঘর্ষ হয়। এতে বাসটি
দুমড়ে মুচড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় বাসের ১০ জন যাত্রী। এ ঘটনায় গুরুতর
আহত হয় আরো ৫ যাত্রী। তাদের উদ্ধার করে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে
নেওয়ার পথে আরও দু’জনের মৃত্যু হয়। বাকিদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানা
গেছে। দুর্ঘটনার পর পরই জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম,
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাম কবির পিপিএম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা
মিল্টন চন্দ্র রায়, পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বরমান হোসেনসহ
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং আহতদের দ্রুত
চিকিৎসার খোঁজখবর নেন।
এ ব্যাপারে স্থানীয় বেশ কয়েকজন ব্যক্তি জানান,
পুরানাপৈল রেল ক্রসিংয়ে কর্তব্যরত গেইটম্যান রাতের বেলা অনেক সময় সেখানে
থাকেন না এবং প্রায় সময়ই রাতের বেলা বিভিন্ন যানবাহনের চালক নিজ দায়িত্বে
রেলক্রসিং অতিক্রম করেন। ফলে এখানে মাঝে মধ্যেই ছোটবড় দুর্ঘটনা ঘটে এবং
আশঙ্কাজনক অবস্থায় বিভিন্ন যানবাহন রেল ক্রসিং পারাপার হয়। এ ব্যাপারে
জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম জানান, খবর পাওয়ার সাথে সাথেই
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, গেটম্যানের অবহেলার কারণে এ
হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করতে অতিরিক্ত জেলা
ম্যাজিস্ট্রেট রেজা হাসানকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা
হয়েছে। এছাড়াও আহতদের চিকিৎসার জন্য সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে এবং
নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পুলিশ সুপার
মোহাম্মদ সালাম কবির পিপিএম বলেন, রেল ক্রসিংয়ে কর্তব্যরত গেটম্যান না
থাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তদন্ত করে প্রয়োজনীয়
ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।