শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   ফিল্ম সিটি থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধুর’ নাম   সিলেটের সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহিয়া গ্রেপ্তার   অনন্য অসাধারণ শেখ হাসিনা আমাদের গর্ব   নরসিংদীতে ‘থার্টি ফার্স্ট’ উপলক্ষে চাঁদা না দেয়ায় ব্যবসায়ীকে কোপালো সন্ত্রাসীরা   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
হড্ডা গণহত্যা, খুলনা
‘মালাউন হটাও’ বলে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন শুরু করে রাজাকাররা
আরিফ রহমান
প্রকাশ: রোববার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:১৭ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

খুলনা জেলার গণহত্যার মধ্যে হড্ডা গ্রামের গণহত্যা অন্যতম। হড্ডা গ্রাম শিবসা নদীর তীরে অবস্থিত। উল্লেখ্য দক্ষিণ খুলনা, বাগেরহাট, রামপাল, পিরোজপুর, বরিশালের লোকেরা ভারতে যাওয়ার জন্য নদী পথে যে রুটটি ব্যবহার করতো সেটা এই শিবসা নদী। ১৯৭১ এর ২০ মে রামপালের রাজাকার সরদার রজব আলী ফকির রামপালের কলেজ মাঠে শান্তি কমিটির মিটিং করে। এবং এই মিটিংয়ে হিন্দুদের ভারতের দালাল হিসেবে আখ্যায়িত করে তাদের বিতাড়িত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। মিটিং শেষে রামপাল সরকারি পুকুর পাড়ে মিস্ত্রী বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ‘মালাউন হটাও’ বলে বিভিন্ন এলাকার হিন্দুদের উপর নির্যাতন অত্যাচার শুরু হয়। শান্তি কমিটির মিটিং থেকে অশান্তির আগুন দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে গোটা রামপাল এলাকায়। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা বুঝতে বাকি থাকলো না যে তাদের আর এখানে থাকা নিরাপদ নয়। যে যেভাবে পারে বাড়ি ছাড়তে থাকে। সেদিন ছিল ২৩ মে। 

উপরোল্লেখিত এলাকার হাজার হাজার অসহায় শরণার্থী আনুমানিক ২৫০-৩০০ নৌকাযোগে ভারতের উদ্দেশে পাড়ি জমিয়ে হড্ডা নামক স্থানে পৌঁছায়। অনুকূল স্রোতের অপেক্ষায় দুপুরে খাবার খাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে সবাই। কোনো কোনো নৌকায় খাবার খাওয়া হয়ে যায়। এমনই সময় গড়াইখালি গ্রামের রাজাকার রশিদের কাছে সংবাদ পেয়ে গড়াইখালির রাজাকার সরদার আবু ছাত্তার ওরফে বড় মিয়া আর তার ভায়েরা এবং অন্য রাজাকাররা এসে বেলা আনুমানিক বিকেল ৩-৪ টার দিকে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে হড্ডায় সমবেত হওয়া মানুষের ওপর। হড্ডা গ্রামের অপর পাড়ে ছিল সুন্দরবন। তাই তারা যে যেভাবে পারে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা করে। অসহায় নারী-শিশুর আর্তনাদে কেঁপে ওঠে হড্ডার শিবসাপাড়। নৌকাতেও বন্দুক ছিল কিন্তু নারী-শিশুদের কথা ভেবে শরণার্থীরা শুরুতে গুলি চালায়নি। এক পর্যায়ে রামপালের ক্ষিতিশ ঢালী নামে একজন বন্দুক দিয়ে রাজাকারদের দিকে পাল্টা গুলি চালান কিন্তু কোন লাভ হলো না। কিছুক্ষণ পরে তিনিও গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এমন অবস্থায় রামপালের কালেখারবেড় গ্রামের এক সাহসী নারী কালীমতি কাপড়ের মধ্যে রাম দা লুকিয়ে ওয়াপদা পাড় দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে রাজাকারদের পিছনে চলে যান। তারপর সুযোগ বুঝে পিছন দিক থেকে এক কোপে এক রাজাকারের মাথা কেটে ফেলেন। লোকটি ছিল রাজাকার সরদার। সরদারের এই পরিণতির পরে অন্যান্য রাজাকাররা পালিয়ে যায়। কত শত নিরীহ নারী-শিশু যে সেদিন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে এবং পানিতে সলিল সমাধি হয় তার সঠিক হিসাব পাওয়া খুব কঠিন। 

প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনামতে, এ সংখ্যা কোনোভাবেই ৫০০ জনের কম হবে না। সবার পরিচয় উদ্ধার করা খুবই দুরূহ। তার মধ্যে যাদের নাম পাওয়া যায় তারা রামপালের ক্ষিতিশ চন্দ্র ঢালী, কেদার হালদার, পুলিন হালদার, সুধীর অধিকারী, সুনীল বাড়ই, রাধানাথ মন্ডল, হরেন মন্ডল, বাজুয়ার গোষ্ঠ গোপাল। মোংলার বনমালী মন্ডল, সুধন্য বিশ্বাস এবং নিতাই কবিরাজ অন্যতম। যুদ্ধকালীন বেশ কয়েকবার এই নদীতে শরণার্থীদের উপর আক্রমণ হয় এবং বহু অসহায় শরণার্থী নিহত হয়। কিন্তু এই স্থানটি সেভাবে আলোচনায় আসে না এবং এখানে কোন স্মৃতিস্তম্ভ বা স্মৃতিফলকও নেই। হড্ডা গণহত্যা নিয়ে সবিস্তর গবেষণা উঠে এসেছে খুলনা জেলার গণহত্যা জরিপে। এই জরিপটি করেছেন খুলনার সরকারি ব্রজলাল কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অমল কুমার গাইন। গণহত্যার স্থানটি শনাক্ত করতে আমরা সেই স্থানে যাই এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হই এখানে নদীতে সলিল সমাধি হয়েছে শতশত মানুষের। এভাবেই বাংলার অসংখ্য নদীতে হাজার হাজার শরণার্থীর সলিল সমাধি হয়েছে। যারা মৃত্যুর পর একমুঠো মাটিও পায়নি। 



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
https://www.dailyvorerpata.com/ad/BHousing_Investment_Press_6colX6in20200324140555 (1).jpg
https://www.dailyvorerpata.com/ad/last (2).gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/431205536-ezgif.com-optimize.gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/agrani.gif
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]