শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   ফিল্ম সিটি থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধুর’ নাম   সিলেটের সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহিয়া গ্রেপ্তার   অনন্য অসাধারণ শেখ হাসিনা আমাদের গর্ব   নরসিংদীতে ‘থার্টি ফার্স্ট’ উপলক্ষে চাঁদা না দেয়ায় ব্যবসায়ীকে কোপালো সন্ত্রাসীরা   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
বিজয়ের ৪৯তম বছর : আশা জাগানিয়া তবু নিরাশারও কারণ আছে বৈকি!
মুঈদ রহমান
প্রকাশ: রোববার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:১২ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

বিজয়ের প্রথম বর্ষটি যখন উদযাপিত হয়েছিল তখন আমার বয়স ছিল আট বছর। একেবারে ভুলে যাওয়ার বয়স ছিল না সেটা এবং ভুলে যাইনিও। এবারের ডিসেম্বরটি ৪৯তম। এই দীর্ঘ প্রায় অর্ধশতকের স্মৃতি-অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, এবার বিজয়ের মাসটি তুলনামূলকভাবে হতাশার চিত্র তুলে ধরেছে, মনে হয়েছে খানিকটা মলিন। কিন্তু সুযোগ ছিল স্বপ্নের পদ্মাসেতু নিয়ে গৌরব করার, তবে তা মিলিয়ে গেল কিছু কর্মকাণ্ডে।

এ মাসের শুরুটাই হয়েছে একটি অবাঞ্ছিত অঘটনের মধ্য দিয়ে। কুষ্টিয়ার পাঁচ রাস্তার মোড়ে নির্মীয়মাণ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটিকে ৪ তারিখ গভীর রাতে একদল ধর্মান্ধ ভাঙচুর করেছে। ক্ষোভে-প্রতিবাদে সারাদেশ জেগে ওঠে। মুক্তিযুদ্ধেও সকল শক্তি মনে কওে যে এটি আমোদেরও সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যেও প্রতি চরম আঘাত। স্বাধীন বাংলাদেশের ৫০ বছরের মাথায় অপশক্তির এই আস্ফালন মেনে নেয়া যায় না। কিন্তু লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো সাধারণ মানুষ যতটা বিক্ষুব্ধ হয়েছে সরকারি মহল ততটা হয়েছে বলে মনে হয় না, তাদেরও আচার-আচরণ তা বলে না। সব কিছুতেই ক্ষমতা হারানোর ভয়। সমস্ত স্বত্তার বিনিময়ে ক্ষমতার স্বাদ কতোটা পরিপূর্ণ হয় জানি না। অথচ বঙ্গবন্ধুই বলেছিলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না, আমি এদেশের মানুষের অধিকার চাই। বঙ্গবন্ধুর সেই চাওয়ার সঙ্গে আজকের সরকারি দলের অনেক তফাৎ। বাংলাদেশে ভাস্কর্য থাকবে কি থাকবে না- এমন প্রশ্নের সমাধান তাঁরা আলেম-ওলামায়েদের সাথে বসে ফয়সালা করতে চান। ভাস্কর্যেও পরিবর্তে তৈরী করতে চান কুতুবমিনারের আদলে কোন কিছু। স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী একটি দলের কাছে এমনটি অপ্রত্যাশিত। সরকার যেন কোনমতেই জনগণের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। তা না হলে ভাস্কর্যেও মতো একটি মীমাংসিত বিষয় নিয়ে ধর্মান্ধের সাথে আপসের চেষ্টা করা হতো না।

‘ইতিহাস কোন অব্যক্ত বেদনার কাহিনী নয়’। কারো কোন সুপ্ত বাসনা পূর্ণ হলো কি হলো না, ইতিহাস তা বলে না। কালের সাক্ষীর ওপর ভর করে, কালের প্রবাহকে বিবেচনায় নিয়ে সত্য উপস্থাপনই হলো ইতিহাস,  এখানে আবেগের কোন জায়গা নেই। সেই অর্থে এ অঞ্চলের মানুষ পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ও জাতি গঠনের পথে হেঁটেছে। কোন ধর্মকে অস্বীকারও করেনি আবার কোন একক ধর্মেও ওপর ভর কওে রাষ্ট্র গঠন করতেও চায়নি। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান ও ভারত সৃষ্টির পর থেকেই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান যা বর্তমানে বাংলাদেশ’র রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। সে সময়কার মুসলিম লীগারদেও মধ্যে রাষ্ট্র পরিচালনার দর্শনগত দিক নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। রক্ষণশীলরা ধর্মকে আধার করেই রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চেয়েছিল। কিন্তু তুলনামূলকভাবে প্রগতিশীল ও উদারনীতি করা ধর্মেও পরিবর্তে সকল ধর্মেও মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করাটাকেই যথার্থ মনে করেছিলেন। সেই পথের পথিক ছিলেন মওলানা ভাসানী ও শেখ মুজিবুর রহমান ( পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) । দেশ ভাগের মাত্র ২ বছরের মাথায় মুসলিম লীগের বিপরীতে তৈরী করলেন ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ এবং ৫ বছরের মাথায় ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে নামকরণ করা হয় আওয়ামী লীগ যা বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নামে পরিচিত। সুতরাং আপনি যদি আওয়ামী লীগের চলার দৃষ্টিভঙ্গিটি দেখেন তাহলে সেখানে কোন ধর্মকে প্রাধান্য না দিয়ে বরং সকল নাগরিকের অধিকারের কথা বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। আবার পাশাপাশি কোন ধর্মকে অস্বীকারও করা হয়নি। আওয়ামী লীগের যাঁরা মুসলিম সম্প্রদায়ের তাঁরা নামাজের সময়ে মসজিদে যাচ্ছেন,  যাঁরা হিন্দু সম্প্রদায়ের তাঁরা মন্দিরে যাচ্ছেন কিংবা যিনি খৃস্টান তিনি প্রার্থনার জন্যে গীর্জায় যাচ্ছেন। এতে কোন বাধা নেই কিন্তু পরিচিতির বেলায় নিজেদের বাঙালি বলেই পরিচয়ে আগ্রহী ছিলেন। সেই পথ ধরেই ২৩ বছরের আন্দোলন। এই আন্দোলনে কোন সময়েই ধর্মকে কোন কিছুর সামনাসামনি করা হয়নি। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সবচে’ বড় উপস্থাপনা ছিল ৬ দফা। সেখানেও আপনি ধর্ম বিষয়ে কিছু পাবেন না। ৬ দফার প্রথমটি ছিল শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রীয় প্রকৃতি নিয়ে। সেখানে পার্লামেন্টারি পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে; দ্বিতীয় দফায় কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে; তৃতীয় দফায় উল্লেখ করা হয়েছে মুদ্রা ও অর্থ ব্যবস্থার কথা; রাজস্ব, কর ও শুল্ক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ও অঙ্গরাজ্যেও কতটা ক্ষমতা থাকবে তার কথা লেখা আছে চতুর্থ দফায়; পঞ্চম দফায় আছে বৈদেশিক মুদ্রা ও বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ে এবং ষষ্ঠ দফায় ছিল আমোদেরও প্রতিরক্ষা বিষয়ে। কোথাও তো ধর্মকে অহেতুক টেনে আনা হয়নি? 

বাঙালি জাতির চিরসত্য বাস্তবতা হলো মহান মুক্তিযুদ্ধ। সেখানেও ধর্মকে টেনে আনা হয়নি। একটি শোষণহীন অসাম্প্রদায়িক স্বাধীন জাতি ও রাষ্ট্র গঠনের প্রত্যয়ে অনুষ্ঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধ, যার অপ্রতিরোধ্য শ্লোগান ছিল ‘জয়বাংলা’। এই শ্লোগানকে কেন্দ্র কওে লাখো লাখো বাঙালি আত্মদানে পিছপা হননি। স্বাধীন দেশে প্রণয়ন করা হয় পবিত্র সংবিধান। প্রজাতন্ত্র হিসেবে দেশটি হবে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’। সংবিধানের মূলনীতি তৈরী হয় যার মাধ্যমে দেশ পরিচালিত হবে: জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্রও ধর্মনিরপেক্ষতা। এখানেও তো কোন একক ধর্মের কথা কিছু বলা হয়নি? 

জাতীয়তাবাদের কথা আছে যা স্পষ্টতই বাঙালি জাতীয়তাবাদ। আমোদেরও যে কোন কাজেরই ভিত্তি হবে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। যে চেতনায় প্রাণ দিয়েছেন ৩০ লাখ শহীদ, সম্ভ্রম হারিয়েছেন ২ লাখ মা-বোন। তাঁদের পাশ কাটিয়ে গুটিকয় ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর সাথে তো ফয়সালা করার কোন সুযোগ নেই। সরকার এ জায়গায় খুবই দুর্বল এবং অস্বচ্ছ। বর্তমান ও বিগত সরকারগুলো অহেতুক বিষয়কে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে মাতামাতি করার সুযোগ তৈরী করেছে। কেননা তারা মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে অপারগ। তারা চায় ধর্ম নিয়ে রাজপথে নামো কিন্তু পেঁয়াজের দাম ৩০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা হলে রাস্তায় নেমো না; আলুর দাম ২০ টাকা থেকে ১০০ টাকা হলে রাজপথে নেমো না; তোমার ছেলে-মেয়ের চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু হলে টু শব্দটি করো না; বেকার সন্তানের অভিশপ্ত জীবনকে আমলে নিয়ো না; মালিকের মুনাফায় অসন্তুষ্ট হয়ো না। খাওয়া-পড়া বাদ দিয়ে তোমার ধর্ম নির্ধারণকেই বড় কওে দেখ। শাসকগোষ্ঠীর এই মনোভাব স্বাধীনতার মূল চেতনার সাথে সম্পূর্ণভাবে বেমানান। আমরা এর অবসান চাই। আমরা নিশ্চিতভাবেই বলতে চাই যে এদেশে তাই হবে যা আমাদের সংস্কৃতির অংশ, আমাদের ঐতিহ্যের অংশ।

এতো গেল স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথে আপোসরফার কাহিনী। কিন্তু যারা স্বাধীনতার পক্ষশক্তি বলে দাবি করেন তারা কী করলেন? বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সক্রিয় ছাত্র রাজনীতির সাথে আমার যুক্ত থাকার সময়টা হলো আশির দশকের শুরু এবং শেষ। সে সময়েও দেখেছি জাতীয় দিবসগুলোতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনকে কেন্দ্র করে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে। ছাত্র সংগঠনগুলো অশোভন ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার চর্চা করতো। এবার বিজয় দিবসে তার গুণগত পরিবর্তন দেখলাম। এবার আর ছাত্র না কোন একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে খোদ কর্মকর্তারাই বিভাজিত হয়ে হাতাহাতিতে নেমে পড়েছেন, পা দিয়ে মাড়িয়ে দিয়েছেন অঞ্জলি। তারা চেতনার কোন পর্যায়ে অবস্থান করছেন তা ভাবতেই অবাক লাগে! এ সংবাদ সকাল ১১ টার। ঘন্টাখানেক বাদেই দেখলাম শিক্ষকরাও পিছিয়ে নেই। এবার হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছেন একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’দল শিক্ষক। অপকর্মের ষোলকলাই পূর্ণ হলো। কোন দিকে যাচ্ছি আমরা?  কোন লক্ষ্য নেই, উদ্দেশ্য নেই, দর্শন নেই, শুধুই আধিপত্য আর আধিপত্য। আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় আমরা যেন আমাদের ভালোর সর্বস্ব পরিত্যাগ করতে প্রস্তুত! আর এর সবই রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতিদ্বারা আবর্তিত ও প্রতিপালিত।

মনের ওপর এতোটা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার পরও আমার বন্ধুর দেয়া একটি পোস্ট যেন কিছুটা হলেও উজ্জীবিত করলো। ১৭ ডিসেম্বর পোস্টটিতে দেখা যাচ্ছে জীর্ণ পোশাকের প্রায় ষাটোর্ধ একজন ব্যক্তি নানা সাইজের জাতীয় পতাকা একটি লাঠিতে সাজিয়ে দাঁিড়য়ে আছেন। পাশ থেকে একজন পতাকাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করছে, চাচা, পতাকার দাম কত? পতাকাওয়ালা বললেন, ‘এই পতাকার দাম কি কেউ দিতে পারবে বাবা? তয় কাপড়ের দাম ৫০ টাকা’। অনাহারী-অর্ধাহারী সাধারণ একজন মানুষের কী অসাধারণ অনুভূতি! যে মানুষটিকে এ রাষ্ট্র তাঁর অধিকারের কোন কিছুই দিতে পারেনি, সে রাষ্ট্রের পতাকাকে সে অন্তরে লালন করছে। আর আমরা যারা রাষ্ট্রের সকল সুবিধা ভোগ করছি তারা পতাকার মর্যাদাকে করছি ভূলুন্ঠিত, আমাদের গাড়ি শোভিত হচ্ছে ওই পতাকায়! আশা জাগানিয়া ওই মানুষটিকে লাল সালাম।

১৬ ডিসেম্বর এবারের স্মৃতি সৌধসহ সারাদেশে জনমানুষের যে ঢল নেমেছে তারপরও যদি সরকার স্বাধীনতার পক্ষেও শক্তির ওপর আস্থা রাখতে না পাওে তাহলে তা হবে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। যে কোন অপশক্তির সাথে আঁতাত করার আগে গণমানুষের চেতনাকে সম্মান দেয়া উচিৎ এবং তাদেরও ঐক্যবদ্ধতার প্রতি মনযোগী হওয়া উচিৎ।

লেখক : অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
https://www.dailyvorerpata.com/ad/BHousing_Investment_Press_6colX6in20200324140555 (1).jpg
https://www.dailyvorerpata.com/ad/last (2).gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/431205536-ezgif.com-optimize.gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/agrani.gif
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]